সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে অভাব রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। প্রতীকী চিত্র।
সিএইচও কিংবা কমিউনিটি হেল্থ অফিসারদের দিয়েই চলছে গ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তাঁরাই দিচ্ছেন টুকিটাকি ওষুধপত্র। বিশেষ প্রয়োজনে মিলছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র কিংবা কোনও ‘বড়’ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ। মোদ্দা কথাটা হল— প্রাথমিক স্তরে ফাঁড়া কাটলে ভাল, না হলে রোগী ‘রেফার’ একপ্রকার নিশ্চিত। চিত্রটা জঙ্গলমহলের দুই জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম।
গ্রামীণ এলাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক থাকলেও, পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে অনেক জায়গায়। তেমনই ব্লক বা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে অভাব রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। ফলে জটিল রোগ সারাতে গ্রামের মানুষকে সরকারি চিকিৎসা পেতে ছুটতে হচ্ছে ‘বড়’ হাসপাতালে। কিন্তু গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর হাল কেমন? একটি উদাহরণেই বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হতে পারে। মাস কয়েক আগের কথা, শালবনির গোদাপিয়াশাল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বিধায়ক জুন মালিয়া। স্বাস্থ্য কেন্দ্র নিয়ে একগুচ্ছ নালিশ শুনতে হয় বিধায়ককে। স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, দুপুরের পরে চিকিৎসক থাকে না। কিংবা শয্যা থাকা সত্ত্বেও রোগী ভর্তি নেওয়া হয় না। রেফার করা হয় মেদিনীপুরে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভিতরের, বাইরের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন জুনও। নার্সকে তিনি সরাসরি শুনিয়েছিলেন, ‘‘ঘরগুলি দেখে মনে হচ্ছে, একেবারেই পরিষ্কার হয় না।’’ নার্সের যুক্তি ছিল, ‘‘একজন সুইপার। তাঁর পক্ষে এত করা সম্ভব হয় না।’’ নার্সদের থাকার ঘরও অপরিচ্ছন্ন দেখে ওই নার্সের উদ্দেশে বিধায়ককে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আপনারা যেখানে থাকেন, সেখানে এমন অবস্থা করে রেখেছেন যে, একটা ইঁদুরও থাকতে চাইবে না!’’ এরপর অবশ্য তড়িঘড়ি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিষ্কার করা হয়।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এখন ৫৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। সব জায়গাতেই অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক রয়েছেন। জেলার ২১টি ব্লকের ২১ গ্রামীণ হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক রয়েছেন বলে দাবি জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার। কিছু ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর সমস্যা থাকলেও, গ্রামের মানুষের চিকিৎসায় তাতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় বলে মনে করেন ওই স্বাস্থ্যকর্তার। চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, আগের তুলনায় গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনেকটা উন্নতি হয়েছে। এখান গ্রামের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়মিত এএনএম, আশাকর্মীরা বসেন। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে যেগুলি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে উন্নীত হয়েছে, সেগুলিতে সিএইচও থাকেন। ফলে অসুখ-বিসুখে প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ হাতের কাছেই পাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এই জেলায় ৮৩৪টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে ৫৫৭টিকে ইতিমধ্যেই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রত্যেকটিতে একজন করে প্রশিক্ষিত সিএইচও রয়েছেন। বাকি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলিকেও সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরিণত করে শীঘ্রই প্রশিক্ষিত সিএইচও দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলছেন, ‘‘গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আগের মতো আর অভাব নেই। গত কয়েক বছরে কয়েক হাজার চিকিৎসক, সিস্টার, ফার্মাসিস্ট জয়েন করেছেন। গ্রামের মানুষও যথাযথ সরকারি চিকিৎসা পাচ্ছেন।’’
অন্য দিকে, ঝাড়গ্রাম জেলায় ২৯১টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। পাশাপাশি জেলায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে ২৫টি। সেখানেই রয়েছেন চিকিৎসক। চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্রের সবচেয়ে নীচুস্তর হল সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র। তবে এখানে কোনও চিকিৎসক থাকেন না। এনএনএম-১ ও এএনএম-২ সহ আশাকর্মীরা মিলে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র সামলান। মূল প্রসূতি মহিলা ও শিশুদের টিকাকরণ, প্রাথমিক কিছু ওষুধ ও পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয়। ইতিমধ্যে জেলায় ১৩২টি ‘সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার কর্মরত নার্সদের ছ’মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে ‘কমিউনিটি হেলথ অফিসার’ তৈরি করেছে। অর্থাৎ এক কথায় যাঁরা ‘হাফ-ডাক্তার’এর কাজ করেন। প্রতিটি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ, সুগার, ক্যানসার, হার্ট ও হাঁপানি রোগের স্ক্রিনিং করা হয়। এ ছাড়াও এখন টেলি-মেডিসিনের মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সরাসরি অনলাইনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা ও পরামর্শ পাচ্ছেন রোগীরা। এই প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রামের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবনচন্দ্র হাঁসদা বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই চিকিৎসক রয়েছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে এএনএমরা রয়েছেন। আবার সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কমিউনিটি হেল্থ অফিসারও রয়েছেন।’’
(চলবে)
প্রতিবেদক: রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, বরুণ দে, রঞ্জন পাল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy