E-Paper

কোলে সদ্যোজাত, প্রথমবার ভোট দিলেন গড়বেতার সুতপা

শনিবার এই বুথে হয়েছিল ব্যাপক গোলমাল। দু’পক্ষের মারামারিতে মাথাও ফাটে কয়েকজনের। বুথের বাইরে ব্যালট বক্স নিয়ে এসে তা ভাঙা হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয় ব্যালট পেপারও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ ০৬:৫৬
Sutapa Sinha from garbeta casted her vote

ভোট দিয়ে বাড়ির পথে। ২০ দিনের সন্তান কোলে মা, পাশে ছাতা ধরে শাশুড়ি। নিজস্ব চিত্র

গোলমাল, মারামারির জেরে শনিবার ভোট দেওয়া হয়নি তাঁর। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে বুথে সোমবার ফের চলেছে ভোটগ্রহণ। এ বার আর প্রাণ ভয়ে পালাতে হয়নি তাঁকে। সদ্যজাতকে কোলে নিয়ে ভোট দিয়েছেন মা। সোমবার সকালে গড়বেতা ১ ব্লকের ১৩১ নম্বর কাষ্ঠগুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে অনাবিল হাসি মুখে সেই মা তথা সুতপা সিংহ বলেন, ‘‘ভোট না দিলে হয়!’’

শনিবার এই বুথে হয়েছিল ব্যাপক গোলমাল। দু’পক্ষের মারামারিতে মাথাও ফাটে কয়েকজনের। বুথের বাইরে ব্যালট বক্স নিয়ে এসে তা ভাঙা হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয় ব্যালট পেপারও। আতঙ্কে ছোটাছুটি করে পালান লাইনে দাঁড়ানো ভোটাররাও। ভোটকর্মীরা প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নেন সামনের এক ছাত্রাবাসে। মারামারিতে বন্ধ হয়ে যায় ভোটগ্রহণ। সোমবার কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশের কড়া নজরে এ দিন ভোট হয় এই বুথে।

এ দিন সকাল থেকেই বুথের সামনে ছিল ভোটারদের লম্বা লাইন। ভোট দিতে সকাল থেকেই সেই লাইনে দাঁড়ান সুতপা সিংহ। দিনমজুর পরিবারের এই মহিলার কোলে ২০ দিনের কন্যাসন্তান। পাশেই তাঁর শ্বাশুড়ি মল্লিকা সিংহ। কাপড় ও তোয়ালে জোড়ানো সদ্যজাতকে একবার মা কোলে নেন, তো একবার শ্বাশুড়ি। লাইনে দাঁড়িয়েই সুতপা বলেন, ‘‘আমি এই প্রথম ভোট দেব। তাই বাপের বাড়ি যাইনি। সে দিন গোলমালের জন্য ভোট দিতে পারিনি। ভেবেছিলাম প্রথম ভোট আর দেওয়া হবে না। রাতে শুনি আবার ভোট হবে। তাই বাচ্চাকে নিয়েই চলে এসেছি।’’ এক সময় শ্বাশুড়ির কোলে বাচ্চাকে দিয়ে ভোটগ্রহণ কক্ষে ঢোকেন সুতপা। বৌমা ফিরে আসতে ভোট দিতে ঢোকেন মল্লিকা। ভোট দিয়ে বেরিয়ে সদ্যজাতকে কোলে নিয়ে বাড়ির পথ ধরেন সুতপা আর ছাতা ধরেন মল্লিকা।

সে দিনের আতঙ্কে যখন গ্রামের মানুষ বুথমুখী হতে চাইছেন না, সেখানে সদ্যজাত শিশুকে কোলে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়ে আসা সুতপার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান থেকে পুলিশকর্মী প্রত্যেকেই। সুতপার বাপের বাড়ি বাঁকুড়া জেলার বাঁকাদহের কাছে ফুলবনি গ্রামে। বছর দু’য়েক আগে বিয়ে হয়। স্বামী কার্তিক সিংহ দিনমজুরের কাজ করেন। আয় বলতে সেটাই। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে হাসি ফোটে তাঁদের সন্তান হওয়ায়।

সুতপার শ্বাশুড়ি মল্লিকা বলেন, ‘‘দিন কুড়ি আগে গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবে বৌমার মেয়ে হয়। আদর করে নাতনির নাম রেখেছি তানিয়া। বৌমার এ বারেই ভোটার তালিকায় নাম উঠেছে। তাই প্রথমবার ভোট দিয়ে বাপের বাড়ি যেত, সে দিন ভোট না হওয়ায় যেতে পারেনি।’’

এ বার তা হলে বাড়ি যাবেন? প্রাথমিক স্কুল পর্যন্ত পড়াশোনা করা সুতপা বলে উঠেন, ‘‘বাপের বাড়ি তো পরেও যাওয়া যায়, সেটা কোনও বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু ভোটটা না দিলে কী হয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 Garbeta

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy