Advertisement
২৬ অক্টোবর ২০২৪
Women Traffickers

নারী পাচার, চক্রীদের ধরাল স্বাস্থ্যসাথী কার্ড

পাচার চক্রে অভিযুক্তদের ধরিয়ে দিয়েছে ‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড’। সরকারি ওই কার্ডের ছবি দেখেই চারজনকে চিহ্নিত করা হয়।

নারী পাচার চক্রের পান্ডা সাজাপ্রাপ্ত সোনালি বিশাল ওরফে পিঙ্কি (মুখ ঢাকা)। ঝাড়গ্রাম জেলা আদালতে।

নারী পাচার চক্রের পান্ডা সাজাপ্রাপ্ত সোনালি বিশাল ওরফে পিঙ্কি (মুখ ঢাকা)। ঝাড়গ্রাম জেলা আদালতে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪ ০৬:৪৮
Share: Save:

প্রেম ও বিয়ের টোপ দিয়ে নাবালিকাকে যৌন পেশায় নামিয়ে পাচার করা হত। ঝাড়গ্রামে তৈরি হচ্ছিল এমনই চক্র। সেই চক্রের মূল পান্ডাদের গ্রেফতার করেছিল ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ। এ বার তাদের সাজা শোনাল আদালত। আর তাদের চিনিয়ে দিল স্বাস্থ্যসাথী কার্ড।

নাবালিকা অপহরণ, পাচার ও ধর্ষণের অভিযোগে এক মহিলা-সহ মোট চারজনকে ২০ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ শুনিয়েছে ঝাড়গ্রামের ঝাড়গ্রামের বিশেষ পকসো আদালত। সোমবার বিশেষ আদালতের বিচারক চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় এই সাজা ঘোষণা করেন। এই পাচার চক্রে অভিযুক্তদের ধরিয়ে দিয়েছে ‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড’। সরকারি ওই কার্ডের ছবি দেখেই চারজনকে চিহ্নিত করা হয়।

পুলিশের দাবি, রাজ্যের মধ্যে এই প্রথম নারী পাচারে দ্রুত সাজা ঘোষণা হল। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, ‘‘এফআইআর থেকে সাজা ঘোষণা— মাত্র ১০ মাসে আমরা বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। নারী পাচারের ঘটনায় এত দ্রুত সাজা ঘোষণার নিদর্শন পশ্চিমবঙ্গে আর কোথাও নেই।’’ সরকারি আইনজীবী কুণালকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘চারজনেরই ২০ বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি নাবালিকাকে তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মামলায় যে সিট গঠন হয়েছিল, তার প্রশংসা করেছেন বিচারক। এই মামলাতে খুবই দ্রুততম বিচার হয়েছে।’’

সাজাপ্রাপ্তেরা হল— পিঙ্কি ওরফে সোনালি বিশাল, লাদেন ওরফে কৌশিক সিংহ, অজয় দাস ও বাবর বেগ। পিঙ্কির বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরের বিবেকানন্দপল্লিতে। কৌশিকের বাড়ি পুরাতন ঝাড়গ্রামে। অজয় ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা। আর বাবরের বাড়ি লালগড়ের যশপুরে। পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রের মূল পান্ডা ছিল পিঙ্কি।

২০১৩ সালের ১৭ অগস্ট ঝাড়গ্রাম থানায় এর নাবালিকাকে অপহরণের অভিযোগ জানান তার মা। তাঁর অভিযোগ ছিল, ১৬ অগস্ট মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। পুলিশ প্রথমে অপহরণের ধারায় মামলা রুজু করেছিল। তারপর গত ২৬ অগস্ট ঝাড়গ্রাম স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় নারী পাচারের চক্রের কথা। এরপর জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে সিট গঠন হয়। তদন্তকারী অফিসার ছিলেন ঝাড়গ্রাম থানার আইসি বিপ্লব কর্মকার।

পুলিশের দাবি, ওই নাবালিকা একজনের নাম জানত। বাকি অভিযুক্তদের চিহ্নিতকরণে সন্দেহভাজনদের স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডের ছবি দেখানো হয়েছিল। সেখান থেকেই তাদের চিহ্নিত করে ওই নাবালিকা। তারপর কৌশিক, অজয় ও বাবরকে গ্রেফতার করলেও মূল চক্রীকে খুঁজে পেতে বেগ পায় পুলিশ। শেষে গত বছর ২৯ নভেম্বর পুরুলিয়ার বলরামপুর থেকে পিঙ্কিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত বছর ১৭ অক্টোবর ও চলতি বছর ৪ জানুয়ারি দু’বার আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। নারী পাচার, পকসো-সহ ‌একাধিক ধারা যুক্ত করা হয়। গত ২৯ জানুয়ারি থেকে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। নাবালিকা-সহ ১৬ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত। গত বৃহস্পতিবার চারজনকে দোষী সাবস্ত্য করার পরে এ দিন সাজা শোনান বিচারক।

গত ফেব্রুয়ারিতে নারী পাচারে একটি সাজা শুনিয়েছিল ঝাড়গ্রাম আদালত। এ দিন ফের নারী পাচারে সাজা ঘোষণা হল। তাহলে কি জঙ্গলমহলে নারী পাচার চক্র সক্রিয় হচ্ছিল? নারী ও শিশু পাচার বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী স্বাতী দত্তের মতে, ‘‘জেলায় যে এই চক্র সক্রিয়, তার নিদর্শন এই ঘটনা। কাজের নামে প্রত্যন্ত এলাকার অনেকে মেয়েকে পাচার করে দেওয়া হয়।’’ তাঁর মতে, সরকারি ভাবে সচেতনতা তৈরি দরকার। রাজনৈতিক দলগুলিকেও এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশ সুপার বলছেন, ‘‘আগের মামলাটির চক্র বেলপাহাড়ি, নয়াগ্রাম ও ভিন্‌ রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই চক্র ঝাড়গ্রাম শহর ও ভিন জেলায় যুক্ত হচ্ছিল। দু’টি চক্রই অঙ্কুরে বিনাশ করা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram Swasthya Sathi Card
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE