Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
COVID-19

পশ্চিমে প্রতিষেধক বাড়ন্ত

কিছু প্রতিষেধক সুরক্ষা-বাহিনীকে দিতে হয়েছে। তাই শেষ মুহূর্তে ২টি কেন্দ্রকে টিকাকরণ কর্মসূচি থেকে বাদ রাখতে হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সকলে অবশ্য প্রতিষেধক নিচ্ছেনও না। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২১ ০২:১৬
Share: Save:

প্রথম দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের কোথাওই কেন্দ্র পিছু ১০০জনের টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আগামীতেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। যা পরিস্থিতি তাতে এই জেলার প্রায় অর্ধেক স্বাস্থ্যকর্মীই চলতি মাসে করোনার প্রতিষেধক পাবেন না। কারণ, প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রতিষেধক জেলায় আসেনি।

সমস্যা মানছে স্বাস্থ্য দফতরও। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রতিষেধক জেলায় আসেনি। ফলে, স্বাস্থ্যকর্মীদের সকলে এখনই প্রতিষেধক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’’ জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ে সব স্বাস্থ্যকর্মীকেই প্রতিষেধক দেওয়ার কথা। সেই মতো প্রস্তুতি সারা হয়েছে। কিন্তু জেলার যতটা প্রয়োজন ছিল, তার প্রায় অর্ধেক প্রতিষেধক এসেছে।’’ স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, ফের প্রতিষেধক এলে একে একে সব স্বাস্থ্যকর্মীকেই তা দেওয়া হবে।

প্রথম পর্যায়ে করোনার প্রতিষেধক পাওয়ার কথা সরকারি এবং বেসরকারি, দুই ক্ষেত্রের স্বাস্থ্যকর্মীদেরই। সেই মতো নামের তালিকা তালিকা রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার। এর মধ্যে চিকিৎসক, নার্স থেকে আশাকর্মী, সকলেই রয়েছেন। জেলায় করোনার প্রতিষেধক কোভিশিল্ডের প্রায় ২৬ হাজার ডোজ় এসেছে।

কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার। কোভিশিল্ডের ডোজ়ও এসেছে প্রায় ২৬ হাজার। তাহলে সমস্যা কেন?

জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, আসলে ৫২ হাজার ডোজ় প্রয়োজন ছিল। কারণ, করোনা প্রতিষেধকের প্রোটোকল মোট ছ’সপ্তাহের। প্রত্যেক গ্রহীতাকে প্রতিষেধকের দু’টি করে ডোজ় নিতে হয়। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮ দিন পরে দ্বিতীয় ডোজ়। দ্বিতীয় ডোজ়োর ১৪ দিন পরে গ্রহীতার শরীরে করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার কথা। সেই সূত্রেই মোট ছ’সপ্তাহের প্রোটোকল।

ফলে, যাঁকে প্রথম ডোজ় দেওয়া হচ্ছে, তাঁকে দ্বিতীয় ডোজ়ও দিতেই হবে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে যে পরিমাণ ডোজ় হাতে রয়েছে, তার ভিত্তিতে আপাতত প্রায় ১৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রতিষেধক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘এখন প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মীকে একটি করে ডোজ় দেওয়াই যেত। কিন্তু চলতি মাসে ফের প্রতিষেধক জেলায় না- এলে সে ক্ষেত্রে বড়সড় সমস্যা হত। ঝুঁকি নিয়ে লাভ নেই।’’

জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘পরিকল্পনা এমনভাবেই করা হয়েছে যাতে প্রথম ডোজ় নেওয়ার ২৮ দিন পরে গ্রহীতার দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত থাকে।’’

শনিবার থেকে শুরু হয়েছে করোনার টিকাকরণ। শুরুতে ঠিক ছিল, জেলার ২৫টি কেন্দ্রে টিকাকরণ হবে। পরে ঠিক হয়, ১৩টি কেন্দ্রে টিকাকরণের সূচনা হবে। শেষ মুহূর্তে আরও ২টি কেন্দ্র কমানো হয়। আপাতত, জেলার ১১টি কেন্দ্রেই টিকাকরণ হচ্ছে। জানা যাচ্ছে, যে কেন্দ্রে টিকাকরণ হচ্ছে, সেই কেন্দ্রের আওতাধীন একশো শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মীকেই প্রতিষেধক দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যে কেন্দ্রে এখনই টিকাকরণ হচ্ছে না, সেই কেন্দ্রের আওতাধীন স্বাস্থ্যকর্মীদের কাউকেই এখন প্রতিষেধক দেওয়া হবে না।

জানা যাচ্ছে, রাজ্যে পর্যাপ্ত প্রতিষেধক আসেনি। ফলে, জেলাকে পর্যাপ্ত প্রতিষেধক দেওয়া যায়নি রাজ্য। শনিবার টিকাকরণের সূচনার দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘রাজ্যের যতটা প্রয়োজন ততটা প্রতিষেধক পাঠায়নি কেন্দ্র। কেন্দ্র যদি পর্যাপ্ত প্রতিষেধক না- পাঠাতে পারে তাহলে রাজ্যই প্রতিষেধক কিনে সবাইকে বিনামূল্যে তা দেবে।’’ জানা যাচ্ছে, কিছু প্রতিষেধক সুরক্ষা-বাহিনীকে দিতে হয়েছে। তাই শেষ মুহূর্তে ২টি কেন্দ্রকে টিকাকরণ কর্মসূচি থেকে বাদ রাখতে হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সকলে অবশ্য প্রতিষেধক নিচ্ছেনও না।

শনিবার যেমন পশ্চিম মেদিনীপুরে ১,১০০ জনের প্রতিষেধক নেওয়ার কথা ছিল। নিয়েছেন ৬৩৯ জন। অর্থাৎ, ৫৮ শতাংশ নিয়েছেন, ৪২ শতাংশ নেননি। জানা যাচ্ছে, দিনে কেন্দ্রপিছু ১০০ জনকে প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এ বার তা বেড়ে ১২০ জন হতে পারে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘সুষ্ঠুভাবে টিকাকরণ কর্মসূচি সম্পন্ন করতে যে পদক্ষেপ করার করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 Vaccine Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE