Advertisement
E-Paper

বিকল্প শালপাতা, প্লাস্টিক যুদ্ধে শেখাচ্ছেন শিক্ষক

ধাদিকা হাইস্কুলে ১২ বছর ধরে রয়েছেন শারীরশিক্ষার শিক্ষক প্রদীপকুমার। মনেপ্রাণে তিনি বিশ্বাস করেন, সুস্থ থাকার সেরা উপায় সুস্থ পরিবেশ। আর সে জন্য প্লাস্টিক বর্জন খুব জরুরি।

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৩৮
সচেতন: গড়বেতার ধাদিকায় চলছে প্লাস্টিক মুক্ত করার অভিযান। নিজস্ব চিত্র

সচেতন: গড়বেতার ধাদিকায় চলছে প্লাস্টিক মুক্ত করার অভিযান। নিজস্ব চিত্র

আলো জ্বালছেন মাস্টারমশাই। প্লাস্টিকমুক্ত সমাজ গঠনের আলো। ছাত্রছাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে সংস্থা গড়ে নিজের এলাকাকে প্লাস্টিক মুক্ত করার ব্রত নিয়েছেন গড়বেতার ধাদিকার শিক্ষক প্রদীপকুমার খাঁ।

ধাদিকা হাইস্কুলে ১২ বছর ধরে রয়েছেন শারীরশিক্ষার শিক্ষক প্রদীপকুমার। মনেপ্রাণে তিনি বিশ্বাস করেন, সুস্থ থাকার সেরা উপায় সুস্থ পরিবেশ। আর সে জন্য প্লাস্টিক বর্জন খুব জরুরি। ছাত্রছাত্রী ও এলাকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে সেই কাজে হাত লাগিয়েছেন এই শিক্ষক। সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন ধাদিকার ব্যবসায়ী, দোকানদার-সহ বিভিন্ন পেশার বহু মানুষ।

এই শিক্ষকের বাড়ি জঙ্গলে ঘেরা কুইলিবাদ গ্রামে। রোজ ভোরে সেই গ্রাম থেকে ৪ কিলোমিটার বাইক চালিয়ে ধাদিকায় এসে সকাল ও বিকেলে স্কুল পড়ুয়া ও স্থানীয় ছেলেমেয়েদের শারীরশিক্ষার প্রশিক্ষণ দেন তিনি। প্রতি বুধবার সকালে শরীর চর্চার পরে সেই সব ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেরিয়ে পড়েন প্লাস্টিক কুড়িয়ে নোংরা-আবর্জনা সাফ করার কাজে। কুড়োনো সব প্লাস্টিক জড়ো করে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। প্রায় একবছর ধরে ধাদিকা বাজার ও আশেপাশের এলাকায় চলছে এই প্লাস্টিক বিরোধী অভিযান।

শুধু সাফাই নয়, ছাত্রছাত্রী ও এলাকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে তিনি প্লাস্টিকের বিকল্প হিসাবে শালপাতা সংগ্রহ ও কাগজের ঠোঙা তৈরির কাজও করেন। তারপর শালপাতা জল দিয়ে পরিষ্কার করে বান্ডিল করে ধাদিকা বাজার এলাকার ফুচকার স্টল, ঠেলাগাড়ি, অন্য দোকানে দিয়ে আসে ছেলেমেয়েরা। একই ভাবে কাগজের ঠোঙাও দোকানে দোকানে দিয়ে আসে তারা। এর জন্য নেওয়া হয় ন্যূনতম দাম। প্রদীপকুমার বলেন, ‘‘স্থানীয় সপ্তাহে ৬ দিন শরীরচর্চার কৌশল শেখাই। বিনিমিয়ে মাত্র একদিন ওদের কাছ থেকে নিই। ওদের নিয়েই চলে প্লাস্টিক মুক্ত করার অভিযান। বিকল্প হিসাবে ঠোঙা ও কাঁচা শালপাতা সংগ্রহ করে ন্যূনতম মূল্যে তা স্টল ও দোকানগুলিতে দেওয়া হয়।’’

অভিযানে শামিল পড়ুয়া সৌরদীপ ঘোষ, রিয়া ঘোষ, আবু বক্কর মল্লিকরা বলছে, ‘‘স্যর প্লাস্টিক ব্যবহারের বিরোধী। স্যরের সঙ্গে কাজ করে আমরাও প্লাস্টিক মুক্ত ধাদিকা গড়তে চাই। তাই প্লাস্টিক সাফাই তো করিই, আবার শালপাতা ও ঠোঙা করে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করতে বলি’’

এলাকা প্লাস্টিক ও জঞ্জাল মুক্ত করতে এই শিক্ষকের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা জোট বেঁধে গড়ে তুলেছেন ‘সম্ভব’ নামে একটি সংস্থা। তার সম্পাদক প্রদীপকুমার নিজেই। আছেন বরুণ পণ্ডিত, তপনকুমার ঘোষের মতো এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ। সংস্থার সভাপতি গোপাল ঘোষ বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে ইধাদিকা বাজার এলাকায় ১৮টি ডাস্টবিন বসিয়েছি। নিয়মিত প্লাস্টিক, পলিথিন, নোংরা আবর্জনা সাফাই করা হয়। শিক্ষক, ব্যবসায়ী-সহ এলাকার বাসিন্দাদের প্রচেষ্টায় আমরা এলাকাকে প্লাস্টিক মুক্ত করতে চাই।’’

প্রদীপকুমার বলছেন, ‘‘প্লাস্টিকের মতো ক্ষতিকর বস্তু বন্ধ করার একমাত্র উপায় হল প্লাস্টিক উৎপাদন বন্ধ করা।’’ সেটা যত দিন না হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জনই তাঁর মন্ত্র।

Teacher Plastic Awarness Campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy