ছেলেকে হারিয়ে শোকার্ত শুভজিতের (ইনসেটে) মা।- কৌশিক সাঁতরা
স্কুল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে কুয়োয় মিলল অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রের দেহ। শুক্রবার সকালে শুভজিৎ ঘোষ (১৩) নামে ওই ছাত্রের দেহ পাওয়ার পরই উত্তেজনা ছড়ায় গড়বেতা থানার আঁধারনয়ন গ্রামে।
ওই ছাত্রের পরিজনেদের অভিযোগ, চোর অপবাদ দিয়ে স্কুলের দুই শিক্ষক ও এক শিক্ষাকর্মী শুভজিৎকে বেধড়ক মারধর করার জেরেই এই ঘটনা। তবে মারধরে অপমানিত হয়ে শুভজিৎ আত্মঘাতী হয়েছে না মারের চোটেই তার মৃত্যু হয়েছে, লিখিত অভিযোগে তা স্পষ্ট করে জানাননি শুভজিতের বাবা স্বরূপ ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সত্যিটা জানতে পুলিশ যাতে সঠিক তদন্ত করে সেই আবেদন করেছি। আমি চাই দোষীরা শাস্তি পাক।’’ আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
চন্দ্রকোনা রোড সংলগ্ন আঁধারনয়ন স্কুলে পড়ত শুভজিৎ। পুলিশ ও মৃত ছাত্রের পরিবার সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার শুভজিৎ একটু দেরিতে স্কুলে ঢোকে। তখন প্রার্থনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাই সে আর প্রার্থনায় না গিয়ে সোজা ক্লাসে চলে যায়। স্কুল সূত্রের খবর, পরে অভিযোগ ওঠে, একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্রীর ব্যাগ থেকে মোট ৬০ টাকা চুরি গিয়েছে। একাদশ শ্রেণির পাশেই অষ্টম শ্রেণির ক্লাসঘর। প্রার্থনার সময় শুভজিৎ ক্লাসে একা থাকায় তার উপরেই সন্দেহ গিয়ে পড়ে। বিষয়টি শিক্ষকদের নজরেও আনা হয়।
অভিযোগ, এরপরই শুভজিতের জামা-প্যান্টের পকেট ও ব্যাগে তল্লাশি চালায় কিছু ছাত্রছাত্রী। স্কুলের দুই শিক্ষক মহম্মদ ইকবাল ও তুষার রায় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মী আকবর আলি গায়েন গোটা ঘটনায় ছাত্রছাত্রীদের মদত দেন বলেও অভিযোগ। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভজিতের পকেটে ৮০ টাকা পাওয়াও যায়। সেখান থেকে ৬০ টাকা নিয়ে দেওয়া হয় একাদশ শ্রেণির ওই দুই ছাত্রীকে। এরপর শুভজিৎকে সকলের সামনে মারধর করা হয় এবং বেশ কিছুক্ষণ আটকেও রাখা হয় বলে অভিযোগ। স্বরূপবাবু বলেন, ‘‘দুই শিক্ষক মহম্মদ ইকবাল ও তুষার রায় আমার ছেলেকে মারধর করেন। ছাত্রীদের দিয়েও মারধর করান। চরম অপমান করেন স্কুলের অশিক্ষক কর্মী আকবর আলি গায়েন। স্কুল থেকে শুভজিৎ আর বাড়ি ফেরেনি।’’
এ দিন সকালে আঁধারনয়ন সংলগ্ন শ্যামগঞ্জ গ্রামের একটি কুয়োতে শুভজিতের দেহ মেলে। ঘটনা জানাজানি হতেই অভিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের গ্রেফতারের দাবিতে ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। চলে বিক্ষোভ। পরে পুলিশ এসে যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ দিন আর আঁধারনয়ন স্কুলে ক্লাস হয়নি। স্কুলে গিয়ে দেখা মেলেনি অভিযুক্ত তুষারবাবু, আকবর আলি গায়েন ও মহম্মদ ইকবালেরও।
জানা গিয়েছে, এই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য। টিচার-ইনচার্জ প্রদীপ্ত বিশুই রয়েছেন ছুটিতে। মহম্মদ ইকবালই এখন স্কুলের দায়িত্বে রয়েছেন। ফোনে অবশ্য ইকবাল বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার স্কুলে টাকা চুরির একটা ঘটনা ঘটেছিল ঠিকই। বিষয়টি মিটেও যায়। শুভজিৎকে মারধর বা অপমানের অভিযোগও ঠিক নয়। ঘটনার পরে শুভজিৎ সব ক্লাসও করেছিল।’’ ওই শিক্ষক আরও জানান, ঘটনার পরে শুভজিতের বাবাকে স্কুলে ডেকে সব বলা হয়েছিল।
সহপাঠীরা অবশ্য জানিয়েছে, ওই ঘটনায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল শুভজিৎ। পরে ক্লাস করলেও আগাগোড়া চুপ করে বসেছিল সে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy