Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দিদিমণিদের কোলে চেপেই রক্ত পরীক্ষা স্কুলে

তবে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করাতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকেরা। শিবির করার আগে অভিভাবকদের ডেকে বিষয়টির গুরত্ব বোঝানো হয়।

ভয়ে ভয়ে রক্তের গ্রপ পরীক্ষা। —নিজস্ব চিত্র।

ভয়ে ভয়ে রক্তের গ্রপ পরীক্ষা। —নিজস্ব চিত্র।

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০১:৩১
Share: Save:

স্কুলে আসার পথে কুকুরের কামড় খেয়েছিল এক পড়ুয়া। কামড় ছাড়াও পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছিল সে। শিক্ষকেরা ওই ছাত্রকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়েছিলেন। খুদে ছাত্রের রক্তের গ্রুপ কী, তা জানা ছিল না তাঁদের। ফলে রক্ত দিতে বেশ কিছুটা দেরি হয়েছিল।

কয়েক মাস আগের ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে চেয়েছেন হলদিয়ার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাথমিক বিভাগ পরাণচক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এ জন্য শনিবার স্কুলের একটি রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার শিবির করেন তাঁরা। সেখানে প্রাথমিক বিভাগের শতাধিক ছাত্রছাত্রীর রক্ত পরীক্ষা হয়। ভয়ের চোটে কয়েকজন খুদে পড়ুয়া রক্তের দিল দিদিমণিদের কোলে চেপেই।

স্থানীয় সূ্ত্রের খবর, কসবেরিয়া, বাসুদেবপুর, পরাণচক-সহ আশেপাশের গ্রামের বহু ছেলেমেয়েরা ওই স্কুলে পড়ে। এঁদের অধিকাংশেরই বাবা-মা শ্রমিক ও কৃষক। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার শেঠ বলেন, ‘‘এক ছাত্র শৌভিক বারিক স্কুলে আসার পথে কুকুরে কামড় খেয়ে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। ওকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল। কিন্তু রক্তের গ্রুপ জানা ছিল না। ভবিষ্যতে এমন যাতে না হয়, সে জন্য আমাদের এই উদ্যোগ।’’

তবে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করাতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকেরা। শিবির করার আগে অভিভাবকদের ডেকে বিষয়টির গুরত্ব বোঝানো হয়। মত নেওয়া হয় পড়ুয়াদের বাবা-মার। এর পরেই শিক্ষক-শিক্ষিকেরা নিজেরাই টাকা খরচ করে শিবিরের আয়োজন করেন। তাঁদের ওই উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিবাবকেরাও।

স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণা ভুঁইয়া বলেন, ‘‘আমার মেয়ে শ্রীয়া তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ওর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে স্কুলে এনেছিলাম। মেয়ে একটু ভয় পেয়েছিল, কিন্তু স্যারেরা যেভাবে মনের জোর বাড়ালেন, তা দেখার মত।’’ আবার ছেলে অজিত দাসের সঙ্গে স্কুলে এসেছিলেন বাবা মতিলাল দাস। মতিলালবাবু বলেন, ‘‘কারখানায় শ্রমিকের কাজ করি। স্কুল উদ্যোগী হয়ে ছেলের এই ধরনের রক্ত পরীক্ষা করায় খুব খুশি হয়েছি। রক্ত পরীক্ষার পরে শংসাপত্র, টিফিন, গ্লুকোজ দেওয়া হয়েছে।’’

আর স্কুলের শিক্ষিকা সঙ্ঘমিত্রা দাস, শিক্ষক সঞ্জীব দাসেরা এ দিন পড়ুয়াদের আদর করেই ছুঁচের ভয় কাটিয়ে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের মত একটি জরুরি কাজ সেরে ফেললেন। স্কুল পড়ুয়া অজিতের কথায়, ‘‘রক্ত দিতে হবে জেনে প্রথমে ভয় করছিল, কিন্তু স্যার এবং ম্যাডামরা থাকায় এই ভয় কেটে গেছে। খুব ছোটদের কোলে চড়েই রক্ত দিয়েছে।’’

স্কুলের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন হলদিয়া সার্কেলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অরবিন্দ চাউলিয়া। অরবিন্দবাবু বলেন, ‘‘আমাদের হলদিয়া সার্কেলে এই ধরনের উদ্যোগ প্রথম। গ্রামের মধ্যে থাকা ওই স্কুলে কখনও আপতকালীন ভিত্তিতে রক্তের গ্রুপ জানার দরকার হলে আর সমস্যা হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood test Teacher Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE