—ফাইল চিত্র।
একাধিক নির্দেশ। লাগাতার বদল। ওসি-সহ গত এক সপ্তাহে কেশপুর থানায় ১০ জন পুলিশ অফিসার বদলি হয়েছেন।
পুলিশ প্রশাসনের দাবি, সবই রুটিন বদলি। যদিও অল্প সময়ে এত দ্রুত বদলির নেপথ্যে বিজেপি অন্য অঙ্ক দেখছে। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘তৃণমূল পুলিশ নির্ভর হয়ে পড়েছে। পুলিশ ছাড়া ওরা চলতেই পারবে না। তাই পুলিশকে দিয়ে প্ল্যান- প্রোগ্রাম করাচ্ছে। তবে এতে কিছু হবে না। মানুষ যা বোঝার বুঝে গিয়েছেন।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি অবশ্য বলছেন, ‘‘পুলিশ পুলিশের কাজ করছে।’’
সপ্তাহ দুয়েক আগেই পশ্চিম মেদিনীপুরের দলের নেতা কর্মীদের নিয়ে কলকাতায় বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশের উপর নির্ভরতা কমানোর কথা বলেছিলেন। তাঁর বার্তা ছিল, রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে যে ভাবে পুলিশ- প্রশাসনের সাহায্য ছাড়াই জেলায় তৃণমূল শক্তি বাড়িয়েছিল, এখনও সেই ভাবেই বিজেপির মোকাবিলা করতে হবে। যদিও তৃণমূলের একাংশের দাবি, স্থানীয় নেতারা এখনও পুলিশের উপর নির্ভরতা কমাতে পারছেন না। অজিতের দাবি, ‘‘তৃণমূল কখনও পুলিশের উপর নির্ভর করে না। করবেও না। মানুষকে সঙ্গে নিয়েই আমরা বিজেপির মোকাবিলা করছি, আগামী দিনেও করব।’’ অজিতের প্রশ্ন, ‘‘তৃণমূল যদি পুলিশের উপর নির্ভর করত, তা হলে সম্প্রতি দোগাছিয়ায় আমাদের দলের কর্মীদের পুলিশ মারল কেন?’’ স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, দোগাছিয়ার গোলমালে তৃণমূলের চেনা মুখ সে ভাবে ছিল না। তাই হয়তো ‘বহিরাগত’ ভেবে পুলিশ পদক্ষেপ করেছিল।
লোকসভা ভোটের পর থেকে দ্রুত পট পরিবর্তন হচ্ছে কেশপুরে। প্রভাব বাড়ছে বিজেপির। পুলিশ সূত্রের খবর, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বহু ক্ষেত্রে শাসক দলের কোন্দলের মাঝে পড়ে যাচ্ছেন অফিসারেরা। কিছু দিন আগে এক গোলমালে জড়িত বিজেপি কর্মীদের খোঁজে রাতের বেলায় এক গ্রামে তল্লাশি- অভিযানে গিয়েছিল পুলিশের একটি দল। তৃণমূলের এক নেত্রীর কাছে খবর ছিল, ওই দলের সঙ্গে স্থানীয় উপপ্রধান ছিলেন। সেদিন অবশ্য বিজেপির কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশের দলটি। তাদের খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল। শুনে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ওই নেত্রী। তাঁর না কি নালিশ ছিল, দলের ওই উপপ্রধানের সঙ্গে বিজেপির যোগসাজশ রয়েছে। উপপ্রধানই পুলিশি তল্লাশির খবর বিজেপি- শিবিরের কাছে আগাম ফাঁস করে দিয়েছেন। তাই গোলমালে জড়িতেরা পালিয়ে গিয়েছে। ওই উপপ্রধান আবার কেশপুরের এক নেতার ঘনিষ্ঠ। উপপ্রধান, নেতা ও নেত্রী দু’পক্ষের মাঝে পড়ে চাপ বাড়তে থাকে এক পুলিশ অফিসারের উপর। ঘটনাচক্রে এই পরিস্থিতির মধ্যেই ওসি বদল হয় কেশপুরে। নতুন ওসি হন বিশ্বরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে জেলার বিভিন্ন থানা থেকে আরও কয়েকজন এসআই, এএসআই- কে কেশপুরে নিয়ে আসা হয়েছে।
এক সপ্তাহে ১০ জন পুলিশ অফিসার বদলি। সপ্তাহ তিনেক আগে কেশপুরে এসে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘নতুন পুলিশ সুপার আসার পরে যে কেশপুর রিকভারি প্ল্যান বানিয়েছেন, আমরা তা জানি। আমরা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স থেকে জানতে পেরেছি, পুলিশ সুপার দরজা বন্ধ ঘরে বলেছেন, যে করেই হোক, মেরেকেটে কেশপুর রিকভারি করতে হবে।’’ জেলা পুলিশের অবশ্য দাবি, কেশপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর ক্রমাগত নজর রাখা হয়েছে। ওই পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পুলিশের যা পদক্ষেপ করার পুলিশ করছেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy