Advertisement
E-Paper

ভিড়ের চাপে রোগীদের ঠাঁই মেঝেতেই

হাসপাতালের বারান্দা, ব্লাড ব্যাঙ্কে যাওয়ার রাস্তা, বহিবির্ভাগের সামনে সার দিয়ে শুয়ে আছেন রোগীরা, মেঝেতে। সেখানেই অস্থায়ী ভাবে স্যালাইন চালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মাঝেমধ্যেই আসছেন চিকিৎসকেরা।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩৩
শয্যা জোটেনি। ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের মেঝেতেই চলছে চিকিৎসা। — কৌশিক সাঁতরা।

শয্যা জোটেনি। ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের মেঝেতেই চলছে চিকিৎসা। — কৌশিক সাঁতরা।

হাসপাতালের বারান্দা, ব্লাড ব্যাঙ্কে যাওয়ার রাস্তা, বহিবির্ভাগের সামনে সার দিয়ে শুয়ে আছেন রোগীরা, মেঝেতে। সেখানেই অস্থায়ী ভাবে স্যালাইন চালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মাঝেমধ্যেই আসছেন চিকিৎসকেরা। হাঁটু গেড়ে বসে রোগী দেখছেন অম্লান বদনে। রোগীর পাশ দিয়েই জুতো পড়ে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছেন হাসপাতাল কর্মী, অন্য রোগী, তাঁদের পরিজনেরাও। রোগীরা বেশিরভাগই জ্বরে আক্রান্ত। অথচ, মশারি টাঙানোর পরিস্থিতি নেই।

ঘাটাল মহকুমার পরিস্থিতি আপাতত এরকমই। বর্ষা বিদায় নিয়েছে, ক্যালেন্ডারের হিসাবে হেমন্তের সূচনা। তবু জ্বরের প্রকোপ কমছে না। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ডেঙ্গির প্রকোপ আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, একেবারে নিষ্কৃতি মেলেনি। ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও যথেষ্ট। পুজোর সময়ও জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অনেকে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালেই শয্যা অমিল! অগত্যা মেঝেতেই চলছে চিকিৎসা।

ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে এটাই অবশ্য দস্তুর। সুপার স্পেশ্যালিটি বাড়ি তৈরি হলেও, সেখানে শুধু শিশু বিভাগের চিকিৎসা হয়। হাসপাতাল সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায় দাবি, “শয্যার চেয়ে রোগী বেশি। বাধ্য হয়েই মেঝেতে রাখতে হচ্ছে। তবে চিকিৎসার কোনও ত্রুটি হচ্ছে না। আমরা সতর্ক।” কিন্তু এই ‘সতর্কতা’ যে আদৌ রোগীদের স্বাস্থ্য রক্ষায় যথেষ্ট নয়, তা স্বীকার করছেন চিকিৎসকদেরই একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসকের কথায়, “অসুস্থ রোগীদের জন্য সব থেকে আগে প্রয়োজন একটা সুস্থ পরিবেশ। মেঝেতে শুয়ে সেই পরিবেশ পাওয়া সম্ভব নয়। নানা রকম সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভবনাও রয়েছে।”

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এখনও জ্বরের প্রবণতা কমেনি। জুলাই মাস থেকে এখন পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচশো। তবে অনেকেই সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন মহকুমা ও গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন জ্বরে আক্রান্তরা। ঘাটাল মহকুমার মোট পাঁচটি গ্রামীণ হাসপাতালেও রোগীর চাপ বাড়ছে। মহকুমা হাসপাতালে রোগীর চাপ এমনিতেই বেশি। তার উপর গ্রামীণ হাসপাতালগুলি থেকে ক্রমাগত রোগী রেফার করে দেওয়ায় পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে বলে দাবি করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, গত কয়েকদিনে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ৬০ জনের বেশি ভর্তি হয়েছেন জ্বর নিয়ে। অন্য রোগীরা তো আছেনই নিয়েও ভর্তি তো হচ্ছেই। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, অনেকেই নার্সিংহোমে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন।

দাসপুরের ঝুমঝুমির বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঘাঁটি, ঘাটালের রত্নেশ্বরবাটির সুকুমার সিংহ রায়েরা জ্বর নিয়ে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দিন তিন-চার আগে। তাঁরা বলেন, ‘‘সেই থেকে মেঝেতেই পড়ে রয়েছি। চিকিৎসকেরা দেখে যাচ্ছেন, কিন্তু জ্বর কমছে না। শয্যার কথা বললে সবাই এড়িয়ে যাচ্ছে।” দাসপুরের ফকিরবাজারের নিরঞ্জন জানা বিরক্তির সুরেই বললেন, “মেঝেতে নোংরা। রাতে ঘুম হচ্ছে না। আমি মশারি না টাঙিয়ে ঘুমোতে পারি না। এখানে সেই ব্যবস্থাটুকুও নেই। রোগ সারবে কী করে?” ঘাটাল শহরের লক্ষ্মী দাস ভর্তি হয়েছেন পেটের যন্ত্রণা নিয়ে। তবে সঙ্গে জ্বর রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘চারদিন ভর্তি আছি, কোনও উন্নতি হয়নি। উপায়ও নেই। বাধ্য হয়ে এ ভাবেই থাকতে হচ্ছে।”

সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, “শয্যা ফাঁকা হলেই এক এক করে মেঝেতে ভর্তি থাকা রোগীদের শয্যায় আনা হচ্ছে। দ্রুত সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে মহিলা বিভাগটি চালু করা হবে। তখন আর এই সমস্যা থাকবে না।”

Patient Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy