Advertisement
E-Paper

আক্রান্ত হয়ে বিপাকে বহু পরীক্ষার্থী

অষ্টম শ্রেণির দীপক দাস অবশ্য এখনও হাসপাতালে। রবিবার ভর্তি করানো হয়েছে জেলা হাসপাতালে। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি। এ দিকে আগামী ১ ডিসেম্বর তার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু।

শান্তনু বেরা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩৬
আঁধার: বাঁশঝাড়ে ঘেরা ডোবা অব্যবহৃত পড়ে বহু দিন। নিজস্ব চিত্র

আঁধার: বাঁশঝাড়ে ঘেরা ডোবা অব্যবহৃত পড়ে বহু দিন। নিজস্ব চিত্র

পারুলিয়া মডার্ন হাইস্কুলে মাধ্যমিকের টেস্ট শুরু হয়েছে সোমবার থেকে। কিন্তু প্রথম দু’টো পরীক্ষাই দেওয়া হয়নি সবিতা পালের।

কাঁথি-৩ ব্লকের বেলদা গ্রামের মাইতিপাড়ার বাসিন্দা সবিতা যে জ্বরে ভুগছে শনিবার থেকে। তার বাবা কমলেশ পাল বললেন, “জ্বরের সঙ্গে খুব মাথা যন্ত্রণা ছিল। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়েছিলাম। তাঁর পরামর্শে রক্ত পরীক্ষায় এনএস-ওয়ান পজিটিভ এসেছে। প্লেটলেটও অনেক কম।’’ তড়িঘড়ি জেলা বাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সবিতাকে। মঙ্গলবার অবশ্য বাড়ি ফিরেছে সে।

অষ্টম শ্রেণির দীপক দাস অবশ্য এখনও হাসপাতালে। রবিবার ভর্তি করানো হয়েছে জেলা হাসপাতালে। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি। এ দিকে আগামী ১ ডিসেম্বর তার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু। কী যে হবে, তাই নিয়েই ভাবছেন পরিবারের লোকেরা। শুধু দীপক বা সবিতা নয়। বেলদা গ্রামের পণ্ডাপাড়া আর মাইতিপাড়া এখন জ্বরে কাবু। সেই সঙ্গে জাঁকিয়ে বসছে আতঙ্কও। আক্রান্ত হচ্ছে একের পর এক পরিবার। কোনও কোনও পরিবারের একাধিক সদস্য জ্বরে আক্রান্ত।

বুধবার সবিতার বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, সামনে-পিছনে ডোবা। চারপাশে বাঁশঝাড় এত ঘন যে সূর্যের আলো এসে পড়ে না ডোবায়। যেখানে যেখানে বাঁশ কেটে নেওয়া হয়েছে, সেখানে জমে আছে বৃষ্টির জল। এতে যে মশার জন্ম হতে পারে, জানেনই না স্থানীয় বাসিন্দারা।

সবিতার বাড়ির পাশেই থাকেন বেলদার পঞ্চায়েত সদস্যা তপতী পাল। বুধবার তিনি এসেছিলেন সবিতার খোঁজ নিতে। বলেন, ‘‘আশাকর্মীরা বা়ড়ি বাড়ি প্রচার চালাচ্ছেন। গ্রাম জুড়ে ব্লিচিং
ছড়ানো হয়েছে।’’

আর সেখানেই তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীরা। কাঁথি-৩ ব্লকের অন্যতম বিরোধী নেতা ঝাড়েশ্বর বেরা বলেন, “ব্লিচিংয়ে কী হবে? এ সব বলে দায় এড়াচ্ছে প্রশাসন। অথচ, বেলদার পাশের গ্রাম দইসাইতে ১ নভেম্বর জ্বরে মৃত্যু হয়েছে গনেশ রানা নামে এক ব্যক্তির। প্রশাসনের আরও তৎপর হওয়া দরকার।’’

একই ছবি পাশের পণ্ডপাড়ায়। নিজের বাড়িতে বসে সুবিমল পণ্ডা জানালেন তাঁর সাত বছরের নাতনি পরী পণ্ডা দিন দশেক আগে জ্বরে পড়েছে। শনিবার তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জেলা হাসপাতালে। এখনও চিকিৎসা চলছে সেখানেই। পরীর মা সরস্বতীদেবী অন্তঃসত্ত্বা। ফলে তাঁকে নিয়েও চিন্তায় রয়েছে পরিবার। প্রতিবেশী মাধব পণ্ডা বৃহস্পতিবার থেকে জ্বরে আক্রান্ত। তিনিও জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে আসেনি। জ্বরে আক্রান্ত যুবক গুরুপদ পণ্ডা বা গৌরী পাল ফিরে এসেছেন সুস্থ হয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দারাই বলছেন সারা গ্রামে এত ছোট ছোট ডোবা, পুকুর রয়েছে যেগুলি নিয়মিত ব্যবহার হয় না। ফলে জমে থাকা জল পচে যাচ্ছে, কোথাও মশা জন্মাচ্ছে। গ্রামের পাশেই বেলদা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সেখানে দেখা মিলল দুই স্বাস্থ্যকর্মী সোমা রায় ও উমা মণ্ডলের। তাঁরা জানালেন, প্রায় পনেরো দিন হয়ে গেল একের পর এক রোগী আসছেন। উমাদেবী বলেন, ‘‘আমরা প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড আর ওআরএস দিচ্ছি। কিন্তু আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।’’ তাঁরা জানিয়েছেন, ক’দিন আগেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁরা সচেতন করে এসেছেন। জ্বর হলে কী কী করণীয় তাও বলে এসেছেন।

জেলা সহ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সমুদ্র সেনগুপ্ত বলেন, “বিষয়টি নিয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলা হচ্ছে।’’

Dengue Malaria Water pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy