Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
কাজ হয়নি পঞ্চায়েতে জানিয়ে

গ্রামবাসীর হাতেই তৈরি হল নয়া রাস্তা

নারায়ণগড় ব্লকে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে দু’কিলোমিটার দূরের গ্রাম বড়ামারা। জাতীয় সড়ক থেকে বাঁধগোড়া হয়ে দেড় কিলোমিটার মোরাম রাস্তা ধরে পৌঁছতে হয় বড়ামারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই স্কুল থেকে সাতশো মিটার দূরে রয়েছে গ্রামের বসতি এলাকা।

সবে-মিলি: নারায়ণগড়ের বড়ামারায় চলছে রাস্তা তৈরি। নিজস্ব চিত্র

সবে-মিলি: নারায়ণগড়ের বড়ামারায় চলছে রাস্তা তৈরি। নিজস্ব চিত্র

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ০২:০৭
Share: Save:

ঢাকঢোল পিটিয়ে রাজ্য জুড়ে প্রচার চলছে গ্রামীণ সড়ক সপ্তাহের। তৈরি হচ্ছে ১৮,০০০ কিলোমিটার রাস্তাও। যদিও রাস্তা তৈরির সেই দীর্ঘ তালিকায় ঠাঁই হয়নি নারায়ণগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়ামারা গ্রামের। রাস্তা না থাকায় গ্রামবাসীদের এখনও যাতায়াত করতে হচ্ছে জমির আল ধরে। প্রশাসনের উপর আর নির্ভর না করে এ বার তাই মাটি কেটে নিজেরাই রাস্তা বানিয়ে ফেললেন এলাকার বাসিন্দারা।

নারায়ণগড় ব্লকে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে দু’কিলোমিটার দূরের গ্রাম বড়ামারা। জাতীয় সড়ক থেকে বাঁধগোড়া হয়ে দেড় কিলোমিটার মোরাম রাস্তা ধরে পৌঁছতে হয় বড়ামারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই স্কুল থেকে সাতশো মিটার দূরে রয়েছে গ্রামের বসতি এলাকা। এই অংশে সেই মোরাম রাস্তাটুকুও নেই। বর্ষায় কাদা পথ পেরিয়েই গ্রাম থেকে স্কুলে আসতে হয় পড়ুয়াদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রাস্তা তৈরির জন্য পঞ্চায়েতে জানিয়েও কাজ হয়নি। তাই রাস্তা তৈরির কাজে তারাই হাত লাগিয়েছেন।

গ্রামের ৪০-৪৫টি পরিবারের পুরুষ-মহিলা সকলেই একজোট হয়ে কোমর বেঁধে রাস্তা তৈরির কাজে নেমেছেন। বড়ামারা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গ্রামের মণ্ডল পাড়া পর্যন্ত রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। এ জন্য স্থানীয়রা নিজেদের জমির আলের ধারে দু’দিকে প্রায় দেড় ফুট করে জমি রাস্তা তৈরির জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। কোদাল দিয়ে আলের মাটি কেটে প্রায় ৭ ফুট চওড়া রাস্তা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মাটির রাস্তায় মোরাম দেওয়ার পরিকল্পনাও করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দা গয়াপ্রসাদ পণ্ডিতের কথায়, “বর্ষায় পড়ুয়াদের স্কুলে যাতায়াতে কষ্ট হয়। কেউ অসুস্থ হলে পাঁজাকোলা করে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত নিয়ে আসতে হয়। আমাদের অবস্থা যে কী দুর্বিষহ বলে বোঝানো যাবে না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সর্বত্র সমস্যার কথা জানিয়েও সুফল পাইনি। তাই নিজেরাই রাস্তা তৈরি করছি।” স্থানীয় ভবতোষ পণ্ডিত, অজয় মণ্ডলরাও বলছেন, “দীর্ঘ কয়েক শতক ধরে আলপথ ধরেই যাতায়াত করছি। আশপাশের সব গ্রামে যেখানে ঢালাই রাস্তা হচ্ছে সেখানে আমাদের গ্রামে রাস্তা নেই ভাবতে খারাপ লাগে।’’ তাঁদের দাবি, ‘‘গ্রাম পঞ্চায়েতে বারবার রাস্তার দাবি জানিয়েছেন। ভোট এলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তারপরে কেউ আর তাঁদের দিকে ফিরেও তাকাননি।”

এ বিষয়ে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের শিউলি ভুঁইয়ার সাফাই, ‘‘আমি তিনবার বৈঠকে বসেছি। কিন্তু ওরা সরকারকে জমি ছাড়তে নারাজ। এখন নিজেরা নিজেদের মতো জমি ছেড়ে রাস্তা করছে। এতে আমরা কী করব।” তাঁর প্রশ্ন, “ওরা তো এক সময়ে সিপিএম সমর্থক ছিলেন। সেই সময় কেন রাস্তা তৈরি হল না?’’ বিডিও মানিক সিংহ মহাপাত্র বলছেন, “গ্রামবাসীরা নিজেরা সচেতন হয়ে রাস্তা তৈরি করছেন, এটা ভাল উদ্যোগ। তবে সরকারি সুযোগ যখন রয়েছে তখন একশো দিনের কাজে রাস্তা তৈরি করলে আরও ভাল হত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামবাসীদের বিষয়টি আমার নজরে আনা উচিত ছিল। স্থানীয় পঞ্চায়েতকে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে ওই গ্রামে মোরাম রাস্তা করার বিষয়ে আলোচনা করতে বলেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE