Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নন্দীগ্রামের গুলিতে দুষ্কৃতী-তত্ত্ব শুভেন্দুর

২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। এখনও তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি শেখ গোলাম রুকুমুদ্দিনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণ ‘খুঁজে’ পায়নি পুলিশ।

পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।—ফাইল চিত্র

পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।—ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮ ০১:১৩
Share: Save:

২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। এখনও তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি শেখ গোলাম রুকুমুদ্দিনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণ ‘খুঁজে’ পায়নি পুলিশ। পাশাপাশি রবিবার বিকেল পর্যন্ত ওই ঘটনায় কেউ ধরা পড়েনি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এ দিন সকালে তেরপেখ্যা থেকে বয়াল পর্যন্ত পুলিশ ও র‍্যাফ মোতায়েন করা হয়। আক্রমণের প্রতিবাদে এদিন বিকেলে তেরপেখ্যায় প্রতিবাদ মিছিল ও পথসভার আয়োজন করেছিল স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। সেখানে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কালো ব্যাজ পরে মিছিলে পা মেলান স্থানীয় বিধায়ক তথা পরিবহণ ও পরিবেশমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘এই হামলার পিছনে রয়েছে দুষ্কৃতীরা। আমি পুলিশকে বলব তদন্তে করে যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। রুকুমুদ্দিনের পরিবারকে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বলেছি।’’

প্রসঙ্গত, শনিবার রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ তেরপেখ্যা বাজার থেকে মিটিং সেরে বাড়ি ফিরছিলেন রুকুমুদ্দিন। বাড়ির অদূরে একটি ক্লাবের কাছে তাঁকে পিছন থেকে গুলি করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁর কোমরের উপর গুলি লাগে। প্রথমে নন্দীগ্রামে রেয়াপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং পরে কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে তাঁকে স্থানাতরিত করা হয়েছে। ছেলে শেখ গোলাম মৈমুরউদ্দিন জানান, বাবার অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। একটি গুলি বের করেছেন চিকিৎসকরা।

যেখানে হামলা হয়, এদিন সেখানে গিয়ে দেখা যায় থমথমে পরিবেশ। কেউ কিছু বলতে না চাইলেও জালালউদ্দিন নামে স্থানীয় এক চা দোকানদার বলেন, ‘‘গুলি লাগার সময় রুকুমুদ্দিন চিৎকার করেছিলেন। আওয়াজ শুনে ছুটে গিয়েছিলাম। আমার কাছে থাকা গামছা ক্ষতস্থানে বেঁধে দিই। তারপর কয়েকজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’’

পরিবার ও দলীয় সূত্রে খবর, শনিবার রাতে গণেশ দাস নামে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীর স্কুটিতে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন রুকুমুদ্দিন। এদিন গণেশ বলেন, ‘‘সাইকেলের টায়ার ফেটে যাওয়ার মতো শব্দ পেয়ে রুকুদাকে জিজ্ঞেস করায় বলেন গুলি লেগেছে। এরপর আতঙ্কে গাড়ি চালাতে পারছিলাম না।’’ গণেশ আরও জানান, স্কুটির আলো কমে আসছিল যখন তখন দুজন রোগা চেহারার যুবক দ্রুত বাইক চালিয়ে সামনে দিকে পালিয়ে যায়। তবে কাউকে তিনি চিনতে পারেননি।

প্রসঙ্গত, এর আগে নন্দীগ্রামে নিশিকান্ত মন্ডল, সরোজ ভুইয়া, সমর মাইতির মতো প্রভাবশালী তৃণমূল নেতারা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। প্রায় সবকটি ঘটনায় শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে খুন হতে হয়েছিল বাকিদের। এদিনের ঘটনায় যে বিরোধীরা জড়িত নন তা প্রকারান্তরে মেনে নেন শুভেন্দুবাবু। তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে একটাই দল আছে, সেটা হল তৃণমূল।’’

তবে কারা রুকুমুদ্দিনকে গুলি করেছে সেই প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দুর জবাব, ‘‘এটা দুষ্কৃতিদের কাজ। যারা সমর মাইতি খুনে অভিযুক্ত, তাদের কেউ কেউ বাইরে রয়েছে। তারা জড়িত কিনা পুলিশকে খতিয়ে দেখতে বলব।’’ তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘কারা গুলি করেছে, আমি জানি। আমার নেট ওয়ার্ক আছে , দুদিনের মধ্যে খুঁজে নেব। তবু পনারা আইন হাতে তুলে নেবেন না।’’ আহত নেতার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি যাতে এই ঘটনায় থানায় এফআইআর দায়ের করা হয় তার জন্য দলের নেতা মেঘনাথ পালকে দায়িত্ব দেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হলদিয়া) পারিজাত বিশ্বাস জানান, দোষীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি কেন ওই তৃণমূল নেতাকে গুলি করা হল, তার কারণ জানতে সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তৃণমূল নেতা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে রাজ্যের কোথাও না কোথাও রোজ হামলা হচ্ছে, গুলি চলছে, মানুষ মারাও যাচ্ছে। পঞ্চায়েতে যে সব জায়গায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল জিতেছে, সেখানেও ওদের দুটো গোষ্ঠী। সেখানেও বোমা-বন্দুক চলছে। আসলে তৃণমূলের মুষল পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপি কোথায়? বিজেপিকে ফালতু টেনে আনা হচ্ছে। সব দায় বিজেপির উপরে চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE