Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Haldia

Widow Remarriage: পুত্রের অকাল মৃত্যুর শোক ভুলে বৌমাকে পাত্রস্থ করে বার্তা হলদিয়ার বিজ্ঞানকর্মীর

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ২০২০ সালে একমাত্র পুত্র অর্ণব ঘাটি পথদুর্ঘটনায় মারা যান। অর্ণবের ও শুভ্রার তিন বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।

দিশারী: সোমবার বিয়ের আসরে। নিজস্ব চিত্র

দিশারী: সোমবার বিয়ের আসরে। নিজস্ব চিত্র

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:৪৬
Share: Save:

চরম আর্থিক সঙ্কটের পাশাপাশি একমাত্র পুত্রের অকাল মৃত্যুর শোককে সঙ্গী করেই দিন কাটছিল। কিন্তু কোনও কি‌ছুই তাঁর বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী মনকে বশ মানাতে পারেনি।
পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতার বার্তা নিয়ে ঘুরে বেড়ান হলদিয়ার অনন্তপুরের বাসিন্দা পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের যুক্তিবাদী সেলের পূর্ব মেদিনীপুরের সম্পাদক নকুল ঘাটি। তবে তাঁর আর একটি পরিচয় তিনি ‘স্নেক ম্যান’। সাপ দেখলে তাকে মেরে ফেলা নয়, বরং মানুষের বেঁচে থাকার সুস্থ পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে সাপ বাঁচানোর বার্তা নিয়ে তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান। যেখানেই বিষধর সাপ দেখার খবর আসে, উদ্ধারে ডাক পড়ে নকুলের। এহেন নকুল ছেলেকে হারিয়েও পুত্রবধূর ভবিষ্যৎ জীবনের প্র‌শ্নে ফের তাঁর বিয়ে দিয়ে সমাজের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যেন লড়াই জারি রাখারই বার্তা দিলেন।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ২০২০ সালে ১৮ অক্টোবর একমাত্র পুত্র অর্ণব ঘাটি পথদুর্ঘটনায় মারা যান। অর্ণবের ও শুভ্রার তিন বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পরে শুভ্রা বাপের বাড়ি ফিরে যাননি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া শ্বশুরবাড়ির পাশে থেকেছেন। বছর পঁচিশের শুভ্রার অকাল বৈধব্য নকুলকে মানসিক ভাবে আরও বিপর্যস্ত করলেও বৌমা ও নাতির ভবিষ্যতের প্র‌শ্নটাই তাঁর কাছে বিরাট হয়ে দেখা দিয়েছেল। নকুলের কথায়, ‘‘আমি ও আমার স্ত্রী ভাবতাম অল্প বয়সে বিধবা হয়ে একাকী কী ভাবে বাঁচবে বৌমা। নাতির ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তায় হত। তাই সমাজে নানা কথা উঠবে জেনেও বৌমার ফের বিয়ে দেওয়া স্থির করি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বৌমা অবশ্য রাজি ছিল না আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। তাঁকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করাই। সন্ধান মেলে পাত্রের। রামগোপালচকে বাসিন্দা বেসরকারি সংস্থার কর্মী ওই পাত্রের পরিবার আমাদের প্রস্তাবে রাজি হন।’’

সোমবার করোনা বিধি মেনে বিজ্ঞানমঞ্চের সদস্য থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষের উপস্থিতিতে চারহাত এক হয় মধু ঘাটি ও শুভ্রা মালাকার ঘাটির। হলদিয়া বিজ্ঞান কেন্দ্রের সম্পাদক মণীন্দ্রনাথ গায়েন বলেন, ‘‘নকুল আজকের ঘটনায় একটি উজ্ব্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।’’ বিয়েতে নব দম্পতিকে আশীর্বাদ করতে এসেছিলেন সমাজকর্মী সোমা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘নকুলবাবুকে দীর্ঘদিন ধরে চিনি। এরকম ব্যতিক্রমী কাজ তিনি করবেন, এটা স্বাভাবিক। তিনি আমাদের চোখ খুলে দিলেন।’’ বৌমা শুভ্রা বলেন, ‘‘আমি এই পরিবারেই মেয়ে হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম। ওঁরা নবজীবন দিলেন। এভাবেও যে আবার জীবন শুরু করা যায়, ভাবিনি।’’ আর নকুলের কথায়, ‘‘মধু এই পরিবারের জামাই নয়, ছেলে হিসেবেই থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Haldia Widow Remarriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE