E-Paper

অভিষেককে চিঠি দিচ্ছেন ‘বঞ্চিত’রা

জেলা কমিটি ঘোষণার পরপরই প্রকাশ্যে আসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কারও প্রশ্ন, কেন ঠাঁই হয়নি কমিটিতে। কেউ কমিটি থেকে স্বেচ্ছাবসর চেয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ পদ পাননি বলে।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:১৮
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখবে কমিটি থেকে বাদ পড়া সদস্যরা।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখবে কমিটি থেকে বাদ পড়া সদস্যরা। — ফাইল চিত্র।

দলের নতুন জেলা কমিটি ঘোষিত হয়েছে। গত বুধবার এই ঘোষণার পরপরই তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। তাঁদের প্রতি ‘বঞ্চনা’ হয়েছে, দাবি একাংশ নেতার। দলের এক সূত্রে খবর, ওই ‘বঞ্চিত’ নেতাদের কয়েকজন দলের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনাও সেরেছেন।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা মানছেন, ‘‘আমরা অভিষেকদাকে চিঠি পাঠাচ্ছি। কমিটি গঠনে ঠিক কী হয়েছে, সবটা জানাচ্ছি।’’ ওই ‘বঞ্চিত’রা ঠিক করেছেন, তাঁরা অভিষেককে খোলা চিঠি দেবেন না। মুখবন্ধ খামেই চিঠি দেবেন। জেলা কমিটির তালিকা প্রকাশ ঘিরে তৃণমূলের অন্দরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। মেদিনীপুর এবং ঘাটাল, দুই সাংগঠনিক জেলাতেই। পরিস্থিতি দেখে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমেছেন জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, ‘‘তালিকা দেখে কারও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পরে পরে আরও অন্তর্ভুক্তি হবে। আর মনে রাখতে হবে, আমরা সবাই দলের অনুগত কর্মী।’’ দলের এক সূত্রে খবর, কমিটি ঘোষণার পরবর্তী জেলার পরিস্থিতি নিয়ে অভিষেকের সঙ্গে কথা হয়েছে অজিতের। অজিত মানছেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। সাংগঠনিক কিছু কথাবার্তাই হয়েছে।’’

জেলা কমিটি ঘোষণার পরপরই প্রকাশ্যে আসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কারও প্রশ্ন, কেন ঠাঁই হয়নি কমিটিতে। কেউ কমিটি থেকে স্বেচ্ছাবসর চেয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ পদ পাননি বলে। সমাজমাধ্যমে অনুযোগের বন্যা বইছে। কারও অভিমত, ‘সঠিক মূল্যায়ন না হলে সামনে বিপদ আছে। কর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।’ কারও তীর্যক মন্তব্য, ‘এখানকার নেতারা তাদের নিজের পদ বাঁচাতে ব্যস্ত। কর্মীদের মূল্যায়ন করার সময় আছে!’ কারও খোঁচা, ‘এটাই নতুন তৃণমূল।’ ‘যারা তেল দেবে, তারা জায়গা পাবে’- তৃণমূল নেতা-কর্মীদের এমন মন্তব্যও ভাসছে। সব মিলিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে রীতিমতো অস্বস্তি ঘাসফুল শিবিরে। তৃণমূলের কোন্দল প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি শমিত দাশের কটাক্ষ, ‘‘পুরোটাই ভাগ-বাঁটোয়ারার দ্বন্দ্ব!’’

মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলায় সব মিলিয়ে ৫৮ জনের জেলা কমিটি হয়েছে। শুরুতে ঠিক ছিল ৫১ জনের কমিটি হবে। বুধবার কমিটি ঘোষণার আগের মুহূর্তে ৭ জনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দলের এক সূত্রে খবর। দলীয় কোন্দল সামাল দিতেই কি শেষ মুহূর্তে নাম অন্তর্ভুক্তি, সে জল্পনা রয়েছে। একাংশ নেতার অনুযোগ, নতুন জেলা কমিটিতে জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়রা তাঁদের ‘পছন্দে’র লোকেদের জায়গা করে দিয়েছেন। যাঁরা তাঁদের ‘অনুগত’ নন, তাঁদের দূরে রেখেছেন। আড়ালে থেকে কলকাঠি নেড়েছেন জেলা থেকে নির্বাচিত, এক ‘প্রভাবশালী’ মন্ত্রী। তাঁর কিছু অনুগামীরও জায়গা হয়েছে কমিটিতে। আরও অনুযোগ, এমন কয়েকজন জেলা কমিটিতে রয়েছেন, যাঁদের জেলা কমিটিতে থাকার কথা নয়, শহর কিংবা ব্লক কমিটিতে থাকার কথা।

ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার কমিটিতে ঠাঁই হয়নি মহম্মদ রফিকের। ’৯৮- ২০০০ সালে কেশপুরে তৃণমূলের ‘রবিনহুড’ ছিলেন রফিক। কেশপুর ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার অন্তর্গত। রফিকের নাম রয়েছে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা কমিটিতে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। ক্ষুব্ধ রফিকের তির, ‘‘কেশপুরকে কেউ বা কারা যদি শেষ করতে চায়, তাহলে কিছু বলার নেই আমার!’’ ক্ষোভের কথা দলকে জানিয়েছেন? রফিকের জবাব, ‘‘কাকে জানাব? জানাবার লোক তো এখন খুব কম!’’ তাঁর তির কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহার দিকে। শিউলির আবার দাবি, ‘‘জেলা কমিটি তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের কাছ থেকে কোনওপ্রস্তাব যায়নি।’’

তাঁকে যথাযথ ‘গুরুত্ব’ দেওয়া হচ্ছে না, দলের অন্দরে, বছর কয়েক আগে এমন অনুযোগ ছিল সুজয়ের। এখন তিনি দলের জেলা সভাপতি। ওই একই অনুযোগই এখন তাঁর দিকে ধেয়ে আসছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore Abhishek Banerjee TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy