Advertisement
E-Paper

খুনেরই অভিযোগ, গ্রেফতার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য

মেদিনীপুর সদর ব্লকের জামকুন্ডার অদূরের মোড়কা এলাকার। ওই দিন সকালে পুকুরপাড় থেকে উদ্ধার হয় বছর ছত্রিশের বাপি মান্ডি এবং তাঁর স্ত্রী, বছর একত্রিশের মঙ্গলি মান্ডির দেহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২২ ০৯:৩৪
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আদিবাসী দম্পতির দেহ উদ্ধার হয়েছিল পুকুরপাড় থেকে। অভিযোগ, ওই পুকুরপাড়ে বিদ্যুতের তার বিছিয়ে রাখা হয়েছিল। তার বিছিয়ে রেখেছিলেন পুকুরের মালিকই। তিনি আবার তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যও। মৃত দম্পতির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শেখ সৈয়দ আলি নামে ওই তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেফতার করল পুলিশ। খুন-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে সৈয়দকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁকে মেদিনীপুর আদালতে হাজির করানো হয়। ধৃতের পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে।

অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী মৃণাল চৌধুরী মানছেন, ‘‘পাঁচ দিনের জন্য ওকে (শেখ সৈয়দ আলি)পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।’’ মৃণাল বলেন, ‘‘ওই দম্পতির ছেলে অভিযোগ করেছে যে, সকালবেলায় তার বাবা- মা প্রাত:ক্রিয়া করতে পুকুরপাড়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আর ফিরে আসেননি। একটু পরে সে সেখানে গিয়ে দেখে, পুকুরপাড়ে দু’জনের মৃতদেহ রয়েছে।’’ এই আইনজীবী বলেন, ‘‘তাতে ওর (মৃত দম্পতির ছেলে) সন্দেহ হয়, বোধহয় ওই পুকুরের মালিক পুকুরপাড়ে বিদ্যুতের তার দিয়ে ঘিরে রেখেছিল। যাতে পুকুরের মাছ চুরি না হয়। সেই সন্দেহের বশবর্তী হয়ে এই অভিযোগ।’’ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি ধৃত পঞ্চায়েত সদস্য। এ দিন আদালত চত্বরে তিনি দাবি করেন, ‘‘পুকুরে আমি তার দিইনি।’’ মৃত দম্পতির পরিজনেদের নালিশ, ঘটনার পরপরই পুকুরের মালিক পুকুরপাড়ে বিছানো বিদ্যুতের তার তুলে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন। গ্রেফতারি এড়াতে। ঘটনার পরে পুকুরপাড়ে গিয়েছিলেন? সৈয়দ মানছেন, ‘‘সকালে একবার গিয়েছিলাম।’’ তার খুলতে? এ বার তাঁর দাবি, ‘‘কোনও কিছুই আমি খুলিনি।’’ ঘটনার পর বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র গা ঢাকা দিয়েছিলেন পুকুর মালিক। রাতে সেখানে গিয়েই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ঘটনা বুধবার সকালের। পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর সদর ব্লকের জামকুন্ডার অদূরের মোড়কা এলাকার। ওই দিন সকালে পুকুরপাড় থেকে উদ্ধার হয় বছর ছত্রিশের বাপি মান্ডি এবং তাঁর স্ত্রী, বছর একত্রিশের মঙ্গলি মান্ডির দেহ। দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে। পরিজনেদের দাবি, ভোরের দিকে ওই দম্পতি পুকুরপাড়ে গিয়েছিলেন প্রাত:ক্রিয়া সারতে। সেই সময়ে পাড়ে বিছানো বিদ্যুতের তারে বিদ্যুৎপৃষ্ট হন দু’জনে। ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন সৈয়দ। অভিযোগ, পুকুরের মাছ চুরি করে নিতে পারেন গ্রামবাসীরা, সন্দেহ ছিল তাঁর। সেই সন্দেহের বশেই পুকুরের পাড়ে বিদ্যুতের তার বিছিয়ে রেখেছিলেন তিনি। মাছ চুরি আটকাতে। এলাকায় গিয়ে দেহ উদ্ধারে হিমশিম খেয়েছিল পুলিশ। পুকুরের মালিককে আগে গ্রেফতার করা হোক- এই দাবিতে সকাল থেকেই সরব হয়েছিলেন স্থানীয়েরা। এই ঘটনা নিয়ে খোঁজখবর নেয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরও। মৃত দম্পতির পরিজনেদের সঙ্গে দেখা করতে রাতেই এলাকায় যান জেলাশাসক আয়েষা রানি, জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার প্রমুখ। পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা করেছে প্রশাসন। চার লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘আমরা সরকারিভাবে আরও যে যে ভাবে পারি, সে ভাবে এই পরিবারের পাশে থাকব। সাহায্যগুলি করব।’’

ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর অব্যাহতই। জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের কথায়, ‘‘কাদের মদতে ওই পঞ্চায়েত সদস্যের এই বাড়বাড়ন্ত, সেটাও দেখা উচিত। তৃণমূলের লোকেরাই এমন অমানবিক হতে পারেন! আসলে তৃণমূলের সবাই চোর। তাই ওদের দলের লোকেরা সাধারণ মানুষকেও চোর ভাবছেন।’’ এলাকার বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায় বলেন, ‘‘কী ভাবে কী হয়েছে, সেটা পুলিশ তদন্তে দেখছে। ঘটনার পরে আমি পুলিশকে বলেছিলাম, যে দোষী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কড়া ব্যবস্থাই নিতে হবে।’’ দীনেন জুড়ছেন, ‘‘আমাদের দল কোনও অন্যায় কাজকর্মে প্রশ্রয় দেয় না। কেউ দোষ করলে, তাঁর শাস্তি হবেই।’’

midnapore TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy