Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Jungle Mahals

জঙ্গলমহলে ‘ঘর’ বাঁচানোর তোড়জোড়

জনগণের কমিটির প্রাক্তন নেতা ছত্রধর মাহাতো যে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের মুখ তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ঝাড়গ্রাম
নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:০৭
Share: Save:

আসন্ন বিধানসভা ভোটে লড়াই কঠিন। জঙ্গলমহলে দলের এক সময়ের সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী এখন গেরুয়া শিবিরে। তাই দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব দিয়ে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তৃণমূলের শীর্ষস্তরে।

জনগণের কমিটির প্রাক্তন নেতা ছত্রধর মাহাতো যে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের মুখ তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ই। পাশাপাশি জঙ্গলমহলের সঙ্গে পুরনো যোগ থাকা খড়্গপুরের নেতা দেবাশিস চৌধুরীকেও ঝাড়গ্রামের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জানা যাচ্ছে, জেলা তৃণমূলের অন্যতম কো-অর্ডিনেটর উজ্জ্বল দত্তর সঙ্গে সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হয়েছে। যার ফলে জল্পনা বেড়েছে জেলা তৃণমূলের অন্দরে।

এ বিষয়ে উজ্জ্বল মুখ খুলতে চাননি। তবে জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু মানছেন, ‘‘উজ্জ্বলের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা হয়েছে বলে শুনেছি। বিস্তারিত জানি না।’’ উজ্জ্বলের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, আগে কলকাতায় তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন অভিষেক। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের উপস্থিতিতেই উজ্জ্বলের সঙ্গে ঘন্টাখানেক কথা বলেছেন অভিষেক। সংগঠনে তাঁকে আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজনৈতিক মহলের মতে, শুভেন্দুহীন জঙ্গলমহলে তাঁর অনুগামীদের আটকাতে তৃণমূলের শীর্ষস্তরে সব রকমের চেষ্টা শুরু হয়েছে। উজ্জ্বল এক সময়ে শুভেন্দুর অনুগামী ছিলেন। তবে গত এক বছরে শুভেন্দু দলের সঙ্গে যখন দূরত্ব বজায় রেখে চলছিলেন, সেই পর্বে উজ্জ্বল শুভেন্দুর সংস্রব এড়িয়ে গিয়েছেন। বরং নয়াগ্রাম ব্লকে শুভেন্দু অনুগামীদের সামাজিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে। সেই উজ্জ্বলই নভেম্বরের গোড়ায় দলের কাজে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। উজ্জ্বলের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, পিকে টিমের খবরদারিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে দলীয় কর্মসূচিতে যাওয়া বন্ধ করেন উজ্জ্বল।

উজ্জ্বল জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর। জেলার চারটি বিধানসভার মধ্যে নয়াগ্রাম ও বিনপুর এই দু’টি বিধানসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত। অথচ তাঁকে না জানিয়েই ওই দু’টি বিধানসভায় পিকে টিমের পরিকল্পনায় একের পর এক কর্মসূচি হতে থাকে বলে অভিযোগ। গত দেড় মাসে মাসে দলের হাতে গোনা বৈঠক বাদে বড় কোনও কর্মসূচিতে উজ্জ্বলকে দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে উজ্জ্বল করোনায় আক্রান্ত হন। তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন শুরু হয়, উজ্জ্বল হয়তো শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি গেরুয়া শিবিরে চলে যেতে পারেন। বহুদিনের কর্মী উজ্জ্বলের মূল ক্ষোভ দলের দু’এক জন জেলা নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে। ওই নেতা-নেত্রীরা মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। ফলে, জেলা তৃণমূলে তাঁদের ভীষণ রকম প্রভাব। জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মুও জেলার ওই দু’এক জন নেতা-নেত্রীর কথামতো দল পরিচালনা করছেন বলে দলের নিচুতলার একাংশ কর্মীরও অভিযোগ। গত ১৫ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম শহরে পার্থের জনসভার ক্ষেত্রেও উজ্জ্বলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তবে উজ্জ্বল সভায় ছিলেন। যদিও দলের ‘বঙ্গধ্বনি যাত্রা’য় উজ্জ্বলকে সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বরে দলের ব্লক, জেলা ও শহর ভিত্তিক নতুন পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানেও উজ্জ্বলের লোকজন হাতে গোনা। নানা ক্ষোভেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যান উজ্জ্বল।

গত ১৭ ডিসেম্বর উজ্জ্বলকে ডেকে পাঠিয়ে কথা বলেন অভিষেক। জেলার এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে ছত্রধর মাহাতো কিংবা দেবাশিস চৌধুরীর চেয়েও উজ্জ্বলকেই বেশি ভরসা করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। ২০১১-র ভোটে সংশোধনাগার থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জেলবন্দি নির্দল প্রার্থী ছত্রধর পান মাত্র কুড়ি হাজার ভোট। আর দেবাশিস পাশের জেলার নেতা। কিন্তু ভাল সংগঠক হিসেবে উজ্জ্বলকে কর্মীদের অনেকেই পছন্দ করেন।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল বলেন, ‘‘দল ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। বিধানসভা ভোটে সবাই মিলে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ মতো কাজ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jungle Mahals TMC Election strategy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE