বন্যার আশঙ্কায় ত্রাণ হিসাবে আনা হয়েছিল জলের পাউচ। বন্যা হয়নি। তাই ত্রাণের জলের পাউচ বিলি করা হল ধর্মতলাগামী তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। সরকারি ভাবে আনা ওই পাউচ তৃণমূলের কর্মসূচিতে যাওয়া কর্মীদের দেওয়া ঘিরে সরব বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, ‘শহিদ’ সমাবেশে যাওয়ার জন্য তৃণমূল সরকারি বাস যেমন ‘দখল’ করেছিল, তেমনই সরকারি ত্রাণের জলের পাউচও তারা দলীয় কাজে ব্যবহার করে ফেলছে।
সম্প্রতি পাঁশকুড়া এলাকায় কংসাবতী নদীতে জল অতিরিক্ত বিপদসীমায় বইছিল। বন্যার আশঙ্কায় প্রশাসনিক ভাবে একাধিক আগাম পদক্ষেপ করা হয়েছিল। গত সপ্তাহেই জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগের তরফে ৫০ হাজার জলের পাউচ ব্লক অফিসে পাঠানো হয়। পরে সেগুলি নদী সংলগ্ন পঞ্চায়েতগুলিতে দেয় পঞ্চায়েত সমিতি। কিন্তু বাঁধ সুরক্ষিত থাকায় বন্যা হয়নি। ফলে বেঁচে যায় জলের পাউচ।
সোমবার কলকাতায় ছিল তৃণমূলের কর্মসূচি। জেলা থেকে সেখানে গিয়েছিলেন হাজার হাজার দলীয় কর্মী-সমর্থক। তাঁদের পাশে থাকতে ঘাটাল-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের পাশে মেচগ্রামে ব্লক যুব তৃণমূলের উদ্যোগে একটি শিবির খোলা হয়। সেখান থেকে ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি জহিরুল ইসলাম এবং দলীয় নেতারা ধর্মতলার উদ্দেশে যাওয়া বাস যাত্রীদের জল এবং ওষধ দেন। প্রায় ১৫ হাজার জলের পাউচ শিবির থেকে দেওয়া হয়েছিল বলে দলীয় সূত্রের খবর। অভিযোগ, সেগুলি ছিল ত্রাণের জন্য জলের পাউচ।
এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। তাতে পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুজিত রায় বলেন, ‘‘জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের তরফে জলের পাউচ আনা হয়েছিল— এ কথা ঠিক। এ ক্ষেত্রে ত্রাণের জল ব্যবহার করা হয়েছে কি না খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ তৃণমূল নেতৃত্ব যা-ই বলুক, বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল রাজ্য সকারকের অর্থ দলীয় করসূচির জন্য ব্যবহার যোগ্য বলে মনে করছে। সোমবার জেলার বহু সরকারি বাসও তৃণমূল তাদের কর্মসূচিতে ভাড়া করে নিয়েছিল। বেসরকারি বাসের পাশাপাশি, সরকারি বাসও রাস্তায় কম থাকায় প্রবল ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। বিজেপির পাঁশকুড়া বিধানসভার আহ্বায়ক অঞ্জন মাইতি বলেন, ‘‘তৃণমূলের আমলে রাজনৈতিক দল আর সরকার এক হয়ে গিয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই শাসক দল নিজেদের ইচ্ছা মতো সরকারকে ব্যবহার করে। অর্থের বিনিময়ে আবাসের বাড়ি থেকে চাকরি বিলিয়ে দিচ্ছে। এখন শেষে ত্রাণের জলের পাউচও দলীয় কাজে ব্যবহার করে নিল।’’
বিতর্কের কিছু দেখছেন না স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও। তাঁদের দাবি, জল ফেলে রেখে নষ্ট করে লাভ কি? সাধারণ মানুষকেই তো দেওয়া হয়েছে সেগুলি। পাঁশকুড়া ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘জলের পাউচের নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। তার পরে সেগুলি নষ্ট হয়ে যায়। এখানে দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি, সাধারণ যাত্রীদের তো জল বিতরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে এত বিতর্কের তো কিছু নেই!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)