Advertisement
০৫ মে ২০২৪
মদ্যপদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, সরব মহিলারাও

পাড়ার মধ্যেই রমরমিয়ে পানশালা

পানশালার লাইসেন্স রয়েছে অন্যত্র। কিন্তু রমরমিয়ে তা চলছে আর এক জায়গায়, একেবারে পাড়ার মধ্যে। খড়্গপুরের মালঞ্চ এলাকার চণ্ডীপুরের ওই পানশালার অদূরে আবার একটি হাইস্কুল এবং একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ঠিক পিছনে মন্দির। এই পরিস্থিতিতে মদ্যপদের উপদ্রবে অতিষ্ট হয়ে উঠছেন এলাকাবাসী।

চণ্ডীপুরের এই পানশালা নিয়েই আপত্তি এলাকাবাসীর ।

চণ্ডীপুরের এই পানশালা নিয়েই আপত্তি এলাকাবাসীর ।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৬ ০০:২১
Share: Save:

পানশালার লাইসেন্স রয়েছে অন্যত্র। কিন্তু রমরমিয়ে তা চলছে আর এক জায়গায়, একেবারে পাড়ার মধ্যে। খড়্গপুরের মালঞ্চ এলাকার চণ্ডীপুরের ওই পানশালার অদূরে আবার একটি হাইস্কুল এবং একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ঠিক পিছনে মন্দির। এই পরিস্থিতিতে মদ্যপদের উপদ্রবে অতিষ্ট হয়ে উঠছেন এলাকাবাসী। লোকালয়ে মদ্যপদের উৎপাত বন্ধে পুলিশ থেকে আবগারি দফতরে ছুটছেন পাড়ার মেয়েরা। কিন্তু সমস্যা মিটছে না। উল্টে মদ্যপদের চোখরাঙানিতে আতঙ্ক বাড়ছে বলে অভিযোগ।

চণ্ডীপুরের ওই পানশালার বাইরে ঝোলানো বোর্ডে আবগারি দফতরের লাইসেন্স নম্বর-সহ ঠিকানা দেওয়া রয়েছে। তবে সে ঠিকানায় লেখা রয়েছে দেওয়ানমারো যা ওই এলাকা থেকে প্রায় এক কিলোমিটারের দূরে। আর চণ্ডীপুরের যেখানে পানশালাটি চলছে তা পুরোদস্তুর পাড়ার মধ্যে। অথচ আবগারি দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পানশালা ও মদের দোকান খোলা যায় না। এমনকী লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে দেখার কথা অন্তত এক হাজার ফুটের মধ্যে কোনও স্কুল, কলেজ, ধর্ম প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল রয়েছে কি না। কিন্তু সেই সব নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলছে মালঞ্চর চণ্ডীপুরের এই পানশালা। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পশ্চিম মেদিনীপুরের আবগারি দফতরের জেলা সুপার সুব্রত দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ পানশালার মালিক সুখেন্দু মিত্র অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

এলাকাবাসী অবশ্য বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। ইতিমধ্যেই পুরপ্রধানের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন পাড়ার মহিলারা। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার অবশ্য বলেন, “এই বিষয়টি আমার এক্তিয়ারে নেই। তবে এমন পরিস্থিতি যাতে বন্ধ হয় সে বিষয়ে দেখব। আমি ওই মহিলাদের পুলিশে যোগাযোগ করতে বলেছি।’’ বুধবার এলাকার মহিলারা গণসাক্ষর সম্বলিত অভিযোগপত্র এসডিপিও এবং আবগারি দফতরে জমা দিয়েছেন। স্থানীয় মনিকা সরকার, কবিতা দত্তরা বলছিলেন, “একটা এলাকার নামে লাইসেন্স পেয়ে কী ভাবে অন্য এলাকায় দোকান চলছে জানি না। এ দিকে মদ্যপদের দৌরাত্ম্যে আমাদের এলাকায় থাকতে সমস্যা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে চোটপাট চলছে। শুনতে হচ্ছে কটূক্তি।’’

স্থানীয় পুকুরেও ভাসছে মদের বোতল । — রামপ্রসাদ সাউ।

খড়্গপুর শহরে মদ্যপদের উপদ্রব নতুন নয়। কোথাও বৈধ লাইসেন্স নিয়ে লোকালয়ে পানশালা চলায় অতিষ্ট হচ্ছে এলাকাবাসী, আবার কোথাও বেআইনি মদের দোকানের রমরমা। খরিদা, সুভাষপল্লি, ধানসিংহ ময়দান, ছত্তীসপাড়া, নয়াখোলি, সোনামুখি, তলঝুলি, পুরাতনবাজার, রবীন্দ্রপল্লি, তালবাগিচা, আয়মার মতো নানা এলাকায় রমরমিয়ে চলছে অবৈধ দেশি মদের দোকান। পুলিশ সব জেনেও নীরব বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীর আরও দাবি, পুলিশ শুধুমাত্র কয়েকজন মদ্যপকে ধরা ছাড়া বেআইনি মদের দোকান মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। ধানসিংহ ময়দানের রেল কোয়ার্টারের বাসিন্দা এক মহিলার কথায়, “আমাদের এলাকায় বেশ কয়েকটি বেআইনি মদের দোকান রয়েছে। পুলিশ সব জানে। মাঝেমধ্যে হানা দিয়ে মদ্যপদের আটক করে বটে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি বদলায় না। দরকার তো মদের দোকানগুলি
বন্ধ করা।’’

এমনকী পাড়ায়-পাড়ায় গজিয়ে উঠছে পানশালা। অভিযোগ, পানশালার জন্য এলাকার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রেই সেই পানশালার লাইসেন্স এক ঠিকানায় আর পানশালা চলছে অন্যত্র। আবার অন্যের নামে পানশালা চালানোর অভিযোগ উঠছে। ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই খরিদায় বসতি এলাকায় এক পানশালায় গুলি চলার পরে অভিযুক্ত যুবকের দাবি ছিল, তাঁর দাদার নামে থাকা লাইসেন্স ব্যবহার করে চলছে ওই পানশালা। তা নিয়েই গোলমাল।

এ সব বন্ধে আবগারি দফতর নিয়মমাফিক অভিযান চালায় না বলেই অভিযোগ। যদিও আবগারি দফতরের জেলা সুপার সুব্রত দাশগুপ্ত বলেন, “আমরা অভিযান চালাই। কিন্তু অভিযানে গেলে নিরাপত্তার সমস্যা হয়। এ ক্ষেত্রে এলাকাবাসী, পুলিশ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সব সময় এই সহযোগিতা পাওয়া যায় না।’’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “আমরা অভিযান চালিয়ে অনেককে গ্রেফতার করি। আগামী দিনে শহরে আরও অভিযান চালানোর চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Garbage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE