Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ভাড়া নিয়েও উঠছে অভিযোগ

টোটোর দাপট, যানজটে নাকাল শহর

মাত্র পাঁচ মাসেই বদলে গিয়েছে ছবিটা। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় রিকশার দাপাদাপিতে যানজটে নাজেহাল হতেন নিত্যযাত্রী থেকে শহরের সাধারণ বাসিন্দারা। এমনকী ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রেও পুরসভার কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না বলে অভিযোগ।

তমলুকের রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে টোটো। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

তমলুকের রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে টোটো। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৫ ০১:৪০
Share: Save:

মাত্র পাঁচ মাসেই বদলে গিয়েছে ছবিটা। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় রিকশার দাপাদাপিতে যানজটে নাজেহাল হতেন নিত্যযাত্রী থেকে শহরের সাধারণ বাসিন্দারা। এমনকী ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রেও পুরসভার কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না বলে অভিযোগ।

এ বার সেই একই অভিযোগ উঠল টোটোর বিরুদ্ধেও। তমলুক শহরের অধিকাংশ রাস্তার একটা বড় অংশ দখল করে রয়েছে এইসব টোটো গাড়ি। ফলে এখন শহরের অধিকাংশ ব্যস্ত রাস্তাগুলিতে যানজট নিত্যদিনের সমস্যা। এমনকী টোটোর ভাড়া নিয়েও ইতিমধ্যেই সমস্যা শুরু হয়ে গিয়েছে। যাত্রীদের ভাড়া নির্ধারণে পুরসভার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। তাই ভরসা টোটো চালকদের ইউনিয়ন নির্ধারিত ভাড়াই। আর তা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে শহরের বাসিন্দাদের।

তমলুকের উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় অবশ্য বলেন, ‘‘টোটো চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরসভার তরফে কয়েকটি শর্ত আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেমন, শুধুমাত্র শহরের বাসিন্দা এমন টোটো চালকদের পুরসভার লাইসেন্স দেওয়া হবে। পুরসভার তরফে টোটো যাত্রীদের ভাড়ার বিষয়ও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ পুরসভা কতৃপক্ষের মতে, শহরে টোটো চালকদের একটা অংশ শহরের বাইরে থেকে আসেন। সেক্ষেত্রে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য শুধুমাত্র শহরের বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দিলে টোটোর সংখ্যা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। যদিও এই সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক শহরের রাস্তায় রিকশা চলাচলের জন্য তমলুক পুরসভার তরফে রিকশা চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার নিয়ম রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। কিন্তু এ সব সত্ত্বেও শহরের রাস্তায় বহু লাইসেন্সবিহীন রিকশা চলাচল করত বলে অভিযোগ। যদিও শহরের রাস্তায় রিকশা চলাচলের সেই ছবি গত কয়েক মাসে অনেকটাই বদলে গিয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকমাস আগেও যত রিকশা দেখা যেত এখন তার অর্ধেক সংখ্যক রিকশার দেখা মেলে না। তার জায়গা নিয়ে নিয়েছে টোটো। অপেক্ষাকৃত গতিশীল ও সুদৃশ্য এই টোটোগাড়িতে যাতায়াত শহরের বাসিন্দাদের কাছে এখন আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু শহরের রাস্তায় টোটো গাড়ির সংখ্যাধিক্য নিয়ে নাজেহাল অন্য গাড়ির চালকরা।

শহরের অধিকাংশ রাস্তায় যানজটের সমস্যা দীর্ঘদিনের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, টোটো গাড়ি আসার পরে শহরের বাসিন্দাদের যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে ঠিকই তবে টোটো চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুরসভা উদ্যোগী না হওয়ায় শহরের অধিকাংশ রাস্তায় যানজট সমস্যা আগের চেয়ে আরও বেড়ে গিয়েছে। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, টোটো গাড়ির ন্যূনতম ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। তারপর দূরত্ব অনুযায়ী টোটো চালকরা মর্জিমতো ভাড়া হাঁকছেন। এক্ষেত্রে পুরসভার নির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা না থাকায় যাত্রীরা টোটো চালকদের দাবিমত ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে রিকশার মতো বেলাগাম হচ্ছে শহরের টোটো চলাচল। টোটো চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও ভাড়ার হার নির্দিষ্ট করার দাবি তুলেছেন শহরের বাসিন্দারা।

শহরের মানিকতলা, হাসপাতাল মোড়, তমলুক রেলস্টেশন, জেলখানা মোড়, পুরসভা অফিস, বর্গভীমা মন্দির, বড়বাজার-সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে টোটোগাড়ি সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। টোটো চালকরা জানান, মাস পাঁচেক আগেও শহরের রাস্তায় ৫০ টির বেশি টোটো ছিল না। এখন সেই সংখ্যাটা কয়েকশো। টোটো চালকদের নবগঠিত সংগঠন তাম্রলিপ্ত টোটো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মানিক মাইতি বলেন, ‘‘শহরে ৩০০টির বেশি টোটো গাড়ি চলাচল করছে। তবে শহরের রাস্তায় টোটো গাড়ির জন্য যানজট তৈরি হচ্ছে এই অভিযোগ ঠিক নয়।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘শহরের টোটো চালানোর জন্য পুরসভার কাছ থেকে লাইসেন্স পাওয়ার জন্য অনেকে আবেদন জানিয়েছেন। এখনও আমাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। যাত্রী ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে পুরসভা যদি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে কোন সিদ্ধান্ত নেয় আমরা তা মেনে চলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

toto tamluk ananda mondal municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE