জনমানবহীন: রবিবার ১২ ঘণ্টা ট্রেন চলেনি খড়্গপুরে। প্ল্যাটফর্ম তাই ফাঁকা। যেন বন্ধের দিন। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
রবিবার সকাল ৮টা। রেলশহরের সদাব্যস্ত রেলস্টেশন একেবারে সুনসান। টিকিট কাউন্টার থেকে ফুটব্রিজ, কোথাও যাত্রীদের ভিড় নেই। দূরপাল্লার ট্রেনের সংরক্ষিত টিকিট কাটতে কয়েকজন সবে কাউন্টারে দাঁড়িয়েছেন। তবে অধিকাংশ অসংরক্ষিত টিকিট কাউন্টার বন্ধ। প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা। অনুসন্ধান কেন্দ্রে হাতেগোনা কয়েকজন আসছেন, প্রশ্ন করে ফিরেও যাচ্ছেন। সেই দলেই ছিলেন খড়্গপুরের বাসিন্দা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী শুভ চক্রবর্তী। বললেন, “ছুটিতে বাড়ি এসেছিলাম। সোমবার সকালে কলকাতা পৌঁছতে হবে। তাই কখন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে জানতে এসেছিলাম।”
পুরনো রিলে ইন্টারলকিং ব্যবস্থা বদলে ইলেক্ট্রনিক্স ইন্টারলকিং ব্যবস্থা চালু হচ্ছে খড়্গপুরে। সে জন্য গত কয়েক দিন ধরেই ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছিল। আর রবিবার তো সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা খড়্গপুরে পুরোপুরি বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। সেই মতো আগাম ঘোষণাও করেছিলেন রেল কর্তৃপক্ষ। তার উপর ছুটির দিন হওয়ায় এ দিন আর লোকজন সেভাবে খড়্গপুর স্টেশনমুখো হয়নি। অঘোষিত বন্ধের চেহারা নিয়েছিল স্টেশন।
খড়্গপুর দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীদের এখন একটাই প্রশ্ন, আজ, সোমবার থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে তো! অনুসন্ধান কেন্দ্রে এসে শুভ চক্রবর্তীর মতো অনেকেই এ দিন সেই খোঁজ নিয়েছেন। রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার কুলদীপ তিওয়ারি অবশ্য বলেন, “আশা করা হচ্ছে রবিবার সন্ধ্যার পরেই ইলেক্ট্রনিক্স ইন্টারলকিং ব্যবস্থা সম্পূর্ণ কাজ করবে। তারপরে সব সিগন্যাল পরীক্ষা করে ৭ ও ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মের লাইনে প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে মালগাড়ি চালিয়ে রাতের মধ্যেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হবে।” রেল সূত্রের খবর, নির্দিষ্ট সময়ের ঘণ্টা দুয়েক আগেই কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। রাতে ট্রেন চলাচলও শুরু হয়েছে।
এ দিন খড়্গপুরে সব মিলিয়ে ৪৩টি এক্সপ্রেস, ১৩টি প্যাসেঞ্জার, ১৩টি মেমু, একটি বিশেষ ট্রেন ও ৪০টি ইএমইউ ট্রেন বাতিল হয়েছিল। এর জেরে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খড়্গপুর স্টেশন হয়ে কোনও ট্রেন চলাচল করেনি। আর বাতিল না হওয়া ট্রেন বালিচক, হিজলি ও কলাইকুণ্ডা স্টেশন থেকে চলাচল করেছে। যদিও কোথাওই সে ভাবে যাত্রীদের ভিড় ছিল না। স্টেশনের বাইরে ‘ট্রেন ডিসপ্লে ইন্ডিকেশন বোর্ডে’ সব ট্রেনের তালিকার পাশে বারবার ভেসে উঠেছে ‘ক্যান্সেল’ শব্দটি। হাতে গোনা যে কয়েকজন যাত্রী স্টেশনে ট্রেন ধরতে এসেছিলেন তাঁরাও বাসস্ট্যান্ডের পথে পা বাড়িয়েছেন। খড়্গপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বালিচক ও ধর্মতলাগামী পর্যাপ্ত সরকারি ও বেসরকারি বাসের ব্যবস্থা ছিল। তবে বাসেও তোমন ভোগান্তি হয়নি। কলকাতাগামী রাজ্য সরকারি বাসে উঠে সুমন সরকার হাসতে-হাসতে বললেন, “শুক্রবার বাসের জন্য হাহাকার ছিল। এখন একেবারে ফাঁকা। মনে হচ্ছে আমি একাই এই বাসে কলকাতা যাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy