ক’দিন আগের ঘটনা। ঝাড়গ্রামের গুপ্তমণিতে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী পথ দুর্ঘটনায় জখম হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সহকর্মীরা প্রাথমিক শুশ্রূষার খুঁটিনাটি জানতেন না। ফলে, ওই পুলিশকর্মীকে সে দিন বাঁচানো যায়নি। পরে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর (‘কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন’) পদ্ধতি প্রয়োগ করে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখলে ওই পুলিশকর্মীর মৃত্যু এড়ানো যেত।
হামেশাই দুর্ঘটনার পরে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান পুলিশকর্মীরা। কিন্তু প্রাথমিক শুশ্রূষার খুঁটিনাটি না জানায় আহতদের প্রাণ বাঁচানোয় তাঁরা বিশেষ কিছু করতে পারেন না। অনেক সময় জখমকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও দেরি হয়ে যায়।
এ দিকে, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভ’ স্লোগানকে সামনে রেখে দুর্ঘটনা এড়ানোর বার্তা দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পথের নিয়ম ভাঙলে ধরপাকড়ও শুরু হয়েছে। তবে তাতে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে বিশেষ রাশ টানা যায়নি। পরিস্থিতি দেখে এ বার তাই জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় জখমদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দিতে মোবাইল অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু করছে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ। ২৪ ঘন্টাই ওই পরিষেবা মিলবে। দুর্ঘটনার খবর পেলে তড়িঘড়ি অ্যাম্বুলান্স নিয়ে হাজির হবেন পুলিশকর্মীরা। দুর্ঘটনায় আহতদের প্রাথমিক শুশ্রূষাও করবেন তাঁরাই।
লক্ষ্য পূরণে দুই পুলিশ জেলার ৪০ জন কর্মীকে (২০ জন মহিলা ও ২০ জন পুরুষ) প্রশিক্ষণও দেওয়া হল। মঙ্গল থেকে শুক্রবার, ঝাড়গ্রাম এসডিও অফিসের সভাঘরে চলছে প্রশিক্ষণ শিবির। ঝাড়গ্রাম জেলা ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্তারা হাতেকলমে পুলিশকর্মীদের প্রাথমিক শুশ্রূষার পাঠ দিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ শেষে এই পুলিশকর্মীরাই জাতীয় সড়কে ঘুরে বেড়ানো অ্যাম্বুল্যান্সে পালা করে ডিউটি করবেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার তথা ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ভারপ্রাপ্ত সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “দুই পুলিশ জেলার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে ব্যস্ততম ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। এই সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রেই জখমদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হয়ে যায়। পথে অনভিপ্রেত ঘটনাও ঘটে যায়। এ সব কারণেই আমরা দুই পুলিশ জেলার জাতীয় সড়কে দু’টি মোবাইল অ্যাম্বুল্যান্স চালু করতে চলেছি।” ভারতীদেবী আরও জানান, এ জন্য বাছাই করা কিছু পুলিশকর্মীকে নার্সিং কোর্সের আদলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
এই প্রশিক্ষণ শিবিরে সরকারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গৈরিক মাজি, প্রসূন ঘোষ, অরুণাভ চট্টোপাধ্যায়রা শেখাচ্ছেন, আপৎকালীন পরিস্থতিতে কী ভাবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুশ্রূষা করতে হবে। তাঁদের কাছে পুলিশকর্মীরা শিখে নিচ্ছেন, রক্তক্ষরণের ফলে জখম ব্যক্তির ‘শক্ স্টেজ’ কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে, রক্তক্ষরণ বন্ধ করার কী উপায়, মাথায় আঘাতের ক্ষেত্রে কী করণীয়। আগুনে পুড়ে গেলে বা জলে ডুবে গেলে রোগীদের কীভাবে শুশ্রূষা করতে হবে, অথবা পথে কোনও অন্তঃসত্ত্বা সন্তানের জন্ম দিলে কী করতে হবে তা-ও শেখানো হচ্ছে।
প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেওয়া পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের কর্মী মৌসুমী পাত্র, আরতি দাস, ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের কর্মী ডুরা টুডু, ক্ষুদিরাম মুর্মুরা বলছিলেন, “এমন প্রশিক্ষণ নিয়ে মনোবল বেড়ে গিয়েছে।”
এই প্রশিক্ষণ শিবিরের চিফ কো-অর্ডিনেটর তথা ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো মানছেন, “খুবই ভাল উদ্যোগ। এতে জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনাজনিত বহু অনভিপ্রেত ঘটনা এড়ানো যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy