বকলমে: তমলুকের ধলহরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক না আসায় রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস
সকাল থেকে লম্বা লাইন জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে। তমলুকের কিসমত গ্রামের গৃহবধূ টগরী দিন্দা ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন লাইনে। ছেলের জ্বরের চিকিৎসার জন্য বাসে চেপে ১৮ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে এসেছেন জেলা হাসপাতালে।
কেন? টগরীদেবী বলেন, ‘‘বাড়ির কাছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সপ্তাহে ন দিন ডাক্তারবাবু রোগী দেখেন। সময়মত ডাক্তার দেখানো যায় না। তাই এখানে এসেছি।’’
একই কথা তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের রঘুনাথপুরের শোভা মান্নার। জ্বর সারছে না দেখে বাড়ির কাছে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসক দেখিয়েছিলেন। তারপর এসেছেন সোজা জেলা হাসপাতালে।
গ্রামীণ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত চিকিৎসক না থাকার এই ছবি শুধু তমলুক বা শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে নয়। জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি চিকিৎসক সঙ্কট ভুগছে বলে অভিযোগ। একমাত্র চিকিৎসককেও কিছুদিন বদলি করার অভিযোগ তুলে কয়েকদিন আগে মাছিনান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন স্থানীয়রা।
সমস্যার কথা স্বীকার করে জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস বলেন, ‘‘জেলার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে যত সংখ্যক চিকিৎসকের পদ রয়েছে তার একটা বড় অংশ ফাঁকা পড়ে থাকায় এই সমস্যা। তবে যে সব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নেই, সেখানে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে চিকিৎসকদের দিয়ে রোগী দেখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগের চেষ্টা হচ্ছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক জেলা হাসপাতাল, কাঁথি, হলদিয়া, এগরা মহকুমা হাসপাতাল, দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও বর্তমানে নন্দীগ্রাম, এগরা ও পাঁশকুড়ায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়াও জেলার গ্রামীণ এলাকায় ২৫টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৫১টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৭০৬টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। ব্লক প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির জন্য মোট ২৪৭ জন চিকিৎসক পদ রয়েছে। কিন্তু রয়েছেন মাত্র ১০৫ চিকিৎসক। একজন চিকিৎসককে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও একাধিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে রোগী দেখতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। সপ্তাহের কয়েক দিন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে রোগী দেখেন। বাকি দিনে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফার্মাসিস্টরাও রোগী দেখেন বলে স্থানীদের অভিযোগ।
সম্প্রতি তমলুক শহরের লাগোয়া ধলহরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট অষ্টম খান। অষ্টমবাবু বলেন, ‘‘এখানে এক চিকিৎসক রয়েছেন। তবে তাঁকে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েও রোগী দেখতে হয়। তাই যে দিন চিকিৎসক থাকেন না আমরা ওষুধ দিয়ে থাকি।’’
জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বহির্বিভাগে মাত্র এক বছর আগেও প্রতিদিন সব বিভাগ মিলিয়ে ৫০০-৬০০ জন রোগীর ভিড় হত। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিদিন গড়ে ৮০০–১১০০ জন। এদের মধ্যে অনেক রোগী সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি, পেটের অসুখের জন্য দূরবর্তী গ্রাম থেকেও আসছেন।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলার যে সব প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শয্যা রয়েছে, সেখানে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক রেখে পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যে সব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুধু বহির্বিভাগ রয়েছে সেখানে সপ্তাহের এক-দু’দিন চিকিৎসক যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অন্য দিনে স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রাথমিক চিকিৎসা করছেন। প্রয়োজন হলে মহকুমা বা জেলা হাসপাতালে পাঠানোর সুপারিশ করেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy