Advertisement
E-Paper

ক্ষমা চাইলেন তৃণমূল নেতা

দলের মহিলা পঞ্চায়েত প্রধানকে হেনস্থা করার অভিযোগ ওঠায় এক যুব তৃণমূল নেতাকে থানায় গিয়ে লিখিত মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চাইতে হল। পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি ব্লকের চিল্কিগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের এই ঘটনায় প্রকাশ্যে এসেছে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:২৯

দলের মহিলা পঞ্চায়েত প্রধানকে হেনস্থা করার অভিযোগ ওঠায় এক যুব তৃণমূল নেতাকে থানায় গিয়ে লিখিত মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চাইতে হল। পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি ব্লকের চিল্কিগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের এই ঘটনায় প্রকাশ্যে এসেছে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তৃণমূলের ক্ষমতাসীন চিল্কিগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ময়না হেমব্রম শুক্রবার জামবনি থানায় দলেরই চিল্কিগড় অঞ্চল যুব সভাপতি পরিমল মাহাতোর বিরুদ্ধে তাঁকে হেনস্থা করার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার পরিমলবাবুকে জামবনি থানায় তলব করেছিল পুলিশ। হাজির ছিলেন ‘নিগৃহীতা’ প্রধান ময়নাদেবী-সহ ব্লক তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতারা। সেখানে লিখিত মুচলেকা দিয়ে পরিমলবাবু জানান, ভবিষ্যতে তিনি এ ধরনের অভিযোগ ওঠার আর সুযোগ দেবেন না। নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়ে নেন তিনি। যদিও এই ঘটনায় পরে পরিমলবাবুর অনুগামীরা ব্লক নেতৃত্বের উপর বেজায় চটেছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক ভাবে পরিমলবাবুর সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে দলের একাংশ তাঁকে হেনস্থা করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে ময়নাদেবীকে দিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করিয়েছিলেন।

উন্নয়নের ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে জামবনি ব্লকে শাসক দলের দু’টি গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট। রাজনৈতিক মহল সূত্রের খবর, ক্ষমতার দড়ি টানাটানিতে তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি সমীর ধলের পাল্লা যথেষ্ট ভারী। সমীরবাবু আবার জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। দলের ব্লক সভাপতি জগদীশ মাহাতোকে সমীরবাবুই নিয়ন্ত্রণ করেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর। অন্য দিকে, জামবনি ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদার সঙ্গে সমীরবাবুদের একেবারেই বনিবনা নেই। চিল্কিগড় অঞ্চল যুব সভাপতি পরিমলবাবু এলাকায় দেবনাথ হাঁসদার অনুগামী হিসেবে পরিচিত। কিছুদিন আগে পর্যন্ত চিল্কিগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজকর্মে পরিমলবাবুর যথেষ্ট প্রভাব ছিল। প্রধান ময়নাদেবীর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কও ছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি দেবনাথ হাঁসদার গোষ্ঠীর নেত্রী হিসেবে পরিচিত ময়নাদেবী সম্প্রতি শিবির বদল করে সমীরবাবুর গোষ্ঠীর দিকে ঝুঁকেছেন। পঞ্চায়েতের কাজকর্মে পরিমলবাবুর নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই খর্ব হয়ে গিয়েছে। এই নিয়ে কিছুদিন ধরেই ময়নাদেবীর সঙ্গে পরিমলবাবুর মন কষাকষি চলছিল। সম্প্রতি বেলদা ও চিল্কিগড় গ্রাম সংসদ এলাকায় কিছু উন্নয়ন-কাজকে ঘিরে দলের অন্দরে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল বিরোধ শুরু হয়। এই নিয়ে কিছুদিন ধরেই পরিমলবাবু ও ময়নাদেবীর মধ্যে তর্কবিতর্ক চলছিল। শুক্রবার বিষয়টি চরম আকার নেয়। ময়নাদেবী ও পরিমলবাবু দু’জনেই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। এরপরই ময়নাদেবী জামবনি থানায় পরিমলবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ময়নাদেবী অভিযোগ করেন, পরিমলবাবু তাঁকে হাত ধরে টানাটানি করে হেনস্থা করেন। পরিমলবাবুকে না জানিয়ে উন্নয়ন-কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে বলে ময়নাদেবীর দাবি।

অভিযোগ পাওয়ার পরে পরিমলবাবুকে শনিবার জামবনি থানায় তলব করে পুলিশ। পরিমলবাবু থানায় গেলে সেখানে পৌঁছে যান ব্লক তৃণমূলের সভাপতি জগদীশ মাহাতো, দলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি সমীর ধল, চিল্কিগড়ের পঞ্চায়েত প্রধান ময়নাদেবী। পরিমলবাবু বলেন, “এলাকার মানুষের বিপদে পাশে থাকি। পুলিশও সেটা জানে। প্রধান এক তরফা কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। তার ফল পেলাম। মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে লিখিত মুচলেকা দিতে হয়েছে। এর চেয়ে আর অসম্মানের কী হতে পারে!” ময়নাদেবী অবশ্য এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তাঁর কথায়, “যা বলার দলের ব্লক নেতৃত্ব বলবেন।”

জামবনি ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সমীর ধল বলেন, “ময়নাদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে এ দিন পরিমলবাবুকে থানায় ডেকেছিল পুলিশ। উনি ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আর করবেন না বলে মুচলেকা দেওয়ায় ময়নাদেবী অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বিষয়টি মিটে গিয়েছে।” জামবনি ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা বলেন, “শুক্রবার প্রধানের সঙ্গে পরিমলবাবুর সামান্য কথা কাটাকাটি হয়েছিল। সেটাকে নিয়ে জল অনেক দূর গড়াল। সব তো বুঝতেই পারছেন!” পুলিশ অবশ্য এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে।

Trinamool Jhargram police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy