প্রতীকী ছবি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খরচ কমিয়ে সাশ্রয়ের কথা বলছেন। তৃণমূল পরিচালিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদে অবশ্য সেই খরচ কমানোর বালাই নেই! শুধুমাত্র গাড়ি ভাড়া ও জ্বালানি বাবদই মাসে বিপুল টাকা খরচ হচ্ছে। কর্মাধ্যক্ষেরা যখন-তখন গাড়ি চেয়ে রিক্যুইজিশন জমা দিচ্ছেন। বিপাকে পড়ছেন জেলা পরিষদের আধিকারিকেরা!
জেলা পরিষদের এক সূত্রে খবর, ১ জানুয়ারি গাড়ি চেয়ে ‘রিক্যুইজিশন’ জমা দিয়েছেন এক কর্মাধ্যক্ষ। সেই গাড়ির বন্দোবস্ত করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন আধিকারিকরা। জেলা পরিষদের গাড়ির চালকেরা সকলেই জানিয়ে দিয়েছেন, ওই দিন তাঁরা কাজে যেতে পারবেন না। পিকনিকে যাবেন। জেলা পরিষদের এক কর্মী ওই কর্মাধ্যক্ষকে সব জানান। তখন কর্মাধ্যক্ষের আর্জি, ‘তাহলে বাইরে থেকে গাড়ি ভাড়া করে দেওয়া হোক!’ এটি কোনও ব্যতিক্রম ঘটনা নয়। জেলা পরিষদের এক সূত্রে খবর, আকছার এমন ঘটনা ঘটে। রিক্যুইজিশন জমা দিয়ে কর্মাধ্যক্ষকদের কেউ জানিয়ে দেন, গাড়ি যেন তাঁকে কলকাতা থেকে আনতে যায়। কেউ জানিয়ে দেন, গাড়ি যেন তাঁকে কলকাতায় ছেড়ে আসে।
জেলা পরিষদের এক আধিকারিক মানছেন, ‘‘ছুটির দিনে তো কোনও কাজ থাকতে পারে না। তা-ও কেন ছুটির দিনে গাড়ি চেয়ে রিক্যুইজিশন জমা করা হয় বুঝতে পারি না। পরে অডিট রিপোর্টে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এটা কেউই বুঝতে চান না।’’ কেন গাড়ির তেলের খরচে রাশ টানা হচ্ছে না? জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহের দাবি, ‘‘খরচে রাশ টানার সব রকম চেষ্টা চলছে।’’ গাড়ি ভাড়া ও তেল বাবদ কত খরচ হয় জেলা পরিষদে? ওই সূত্রে খবর, শুধুমাত্র গাড়ির ভাড়া ও তেল বাবদ মাসে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা খরচ হয় এখানে। অর্থাৎ, বছরে খরচ প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা। মাসে ওই সাড়ে ৪ লক্ষের মধ্যে তেল বাবদ খরচ হয় প্রায় ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। অন্যদিকে, গাড়ি ভাড়া বাবদ খরচ হয় প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।
জেলা পরিষদে সবমিলিয়ে ১০টি গাড়ি চলে। এরমধ্যে ২টি গাড়ি পুলের। অর্থাৎ, জেলা পরিষদের নিজস্ব। বাকি ৮টি গাড়ি ভাড়ায় খাটে। দিনপিছু ভাড়া গুনতে হয় ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে তেল খরচ। কর্মাধ্যক্ষদের সকলেই যে জেলা পরিষদের গাড়িতে যাতায়াত করেন তা নয়। কারও কারও নিজের গাড়ি রয়েছে। তাঁদের তেলের খরচ দেওয়া হয়। কিলোমিটারপিছু ৫ টাকা। সূত্রের খবর, এক সময়ে জেলা পরিষদের এক বৈঠকেও তেল খরচ কমানোর বিষয়টি ওঠে। বৈঠকে ছিলেন জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, জেলা সহ- সভাধিপতি অজিত মাইতিরা। খরচে রাশ টানার নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলা পরিষদের এক কর্মীর কথায়, ‘‘শুধু খরচ কমানোর দাওয়াই নয়, বিলাসিতা কমানোর দিকেও জোর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।’’
অবশ্য তা কার্যকর হয়নি। তাই গাড়ি ভাড়া ও তেল বাবদ এখনও মাসে বিপুল টাকা খরচ হয়ে চলেছে। কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পথেও কেউ এগোয়নি। এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা পরিষদের সচিব প্রবীর ঘোষের জবাব, ‘‘আমি কিছু বলব না!’’ জেলা পরিষদের অন্য এক পদস্থ আধিকারিকের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘এ বার গাড়ির তেলের খরচ কমানো হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy