Advertisement
E-Paper

স্কুল ব্যাগের ওজন কমানোর ভাবনা দুই শহরে

মেদিনীপুরের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র অর্পণ খান, সোহম কুণ্ডুদেরও বক্তব্য, স্কুলের ব্যাগটা বড্ড ভারী।

বরুণ দে ও দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৭ ১২:৩০
 বোঝা: ভারী ব্যাগ কাঁধে কচিকাঁচারা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

বোঝা: ভারী ব্যাগ কাঁধে কচিকাঁচারা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

মায়ের গুছিয়ে দেওয়া ব্যাগ নিয়ে সকাল সকাল স্কুলের জন্য তৈরি ছোট্ট অরিত্রিকা। কিন্তু ব্যাগ কাঁধে তুলতেই বিপত্তি। কাঁধে প্রবল যন্ত্রণা। ব্যাগ ঘাড়ে রওনা দিলেন মা। দ্বিতীয় শ্রেণির অরিত্রিকার মতোই অভিজ্ঞতা খড়্গপুরের সেন্ট অ্যাগনেস স্কুলের অন্য পড়ুয়াদেরও। রোজ ১৬টা বই-খাতা নিয়ে যেতে হয় তাদের। রয়েছে টিফিন বাক্স, জলের বোতল। অরিত্রিকের মা অন্তরা আচার্য বলেন, “ব্যাগের ভারে মেয়ের কাঁধে ব্যথা হয়। এখনই স্কুলের ভাবা উচিত।” কৌশল্যার বাসিন্দা কঙ্কনা দাসের কথায়, “আমার মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল পর্যন্ত ভারী ব্যাগ আমিই নিয়ে যাই। তারপর তো ওকেই নিতে হয়।”

মেদিনীপুরের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র অর্পণ খান, সোহম কুণ্ডুদেরও বক্তব্য, স্কুলের ব্যাগটা বড্ড ভারী।

নয়ের দশকে কেন্দ্রীয় স্কুলশিক্ষা কমিটি স্কুলের খুদে পড়ুয়াদের কাঁধে ভারী ব্যাগ চাপানোর বিপক্ষে রায় দিয়েছিল। এ বার ফের স্কুলব্যাগের ওজন কমিয়ে কচিকাঁচাদের কাঁধ বাঁচাতে ফের তত্পর হচ্ছে কেন্দ্র। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্কুলশিক্ষা সচিব অনিল স্বরূপ কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের স্কুলব্যাগের অতিরিক্ত ওজন কমানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে। কারণ, ভারী স্কুলব্যাগের জন্য নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।

মেদিনীপুর-খড়্গপুরের বেশিরভাগ অভিভাবকের অবশ্য অভিযোগ, এ নিয়ে হেলদোল নেই স্কুল কর্তৃপক্ষের। উল্টে রকমারি বইয়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ঝাপেটাপুরের কনভেন্ট স্কুলের অভিভাবক পুলিশকর্মী স্বপন দে বলেন, “অনেকের পক্ষেই এত ভারী ব্যাগ বওয়া সম্ভব হয় না।” একই অভিজ্ঞতা দুই শহরের চিকিৎসকদেরও। পশ্চিম মেদিনীপুরের উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধানের কথায়, “দিনের পর দিন ভারী ব্যাগ বইলে কাঁধে-পিঠে ব্যথা হতে পারে। এ দিকে নজর দিতে হবে স্কুলগুলিকেই।”

কোনও কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ আবার এ জন্য অভিভাবকদেরই দুষছেন। সেন্ট অ্যাগনেস স্কুলের অধ্যক্ষ সিস্টার সরিতা যেমন বলেন, “পড়ুয়াদের ব্যাগের ওজন অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে। বই তো স্কুলেই রাখা থাকে। টিফিন বাক্স আর জলের বোতলই ওজনের কারণ।” মেদিনীপুরের ভগবতী শিশু শিক্ষায়তনের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত বিশ্বাসেরও মত, “অনেক অভিভাবক টিফিন বক্স ভর্তি করে খাবার দেন। এটার প্রয়োজন পড়ে না।” আর্য বিদ্যাপীঠ স্কুলের প্রধান শিক্ষক চণ্ডীচরণ ত্রিপাঠী আবার বিষয়টাকে মানবিক ভাবে দেখার পক্ষপাতী । তিনি বলেন, “বই-খাতার আধিক্যের সঙ্গে পড়াশোনোর মানের সম্পর্ক নেই। বিষয় ভিত্তিক রকমারি খাতার ব্যবহারের আমি বিরোধী।”

ইতিমধ্যে স্কুলব্যাগের বার কমানোর ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন মেদিনীপুরের বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা মানছেন, স্কুলব্যাগের ওজন আড়াই কিলোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। তাঁদের পরামর্শ, পাতলা খাতা কেনার পাশাপাশি পেন্সিল বক্স, টিফিন বক্স, জলের বোতলও হাল্‌কা কিনলে ভাল। মেদিনীপুরের রয়্যাল অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ সত্যব্রত দোলুই বলেন, “অনেক অভিভাবকই ছেলেমেয়েদের মোটা খাতা কিনে দেন, যাতে সারা বছর চলে। তার দরকার নেই।” তিনি আরও জানান, তিনটে করে অধ্যায় নিয়ে ইউনিট টেস্ট হয়। বইয়ের বদলে ওই পাতাগুলোর ফোটোকপি স্কুলে আনলেই হয়। যে বিষয়ের ক্লাস রয়েছে, তার অতিরিক্ত বইখাতা আনতে বারণ করছেন সত্যব্রতবাবু, প্রশান্তবাবুরা।

বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন রয়েছে বলে মানছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি নারায়ণ সাঁতরা। তাঁর আশ্বাস, “অনেকে অতিরিক্ত বই স্কুলে আনে। সেটা যাতে না হয় তা দেখা হবে।”

School Bag School Bag Weight
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy