মেচেদা-বাসস্ট্যান্ড নিজস্ব চিত্র
রাত বাড়লে বাস চলে না— যুক্তি যাত্রী নেই। যাত্রীরা কিন্তু রাতের বাসের জন্য দরবার করেন মন্ত্রীর কাছে। তবে শেষ পর্যন্ত কাজ হল না। পরিবহণ মন্ত্রীর নির্দেশে চালু হওয়া রাতের বাস বন্ধ হয়ে গেল দু’মাস যেতে না যেতেই। ফলে আবারও বিপাকে তমলুক, হলদিয়া, মহিষাদল-সহ একাধিক এলাকার বাসিন্দারা।
পৌঁনে ১০টার পর আর বাস পাওয়া যায় না মেচেদা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে। তারকেশ্বর-হলদিয়া রুটের একটি বেসরকারি বাস মেচেদা বাসস্ট্যান্ড থেকে রাত পৌনে ১০ টায় ছেড়ে যায়। তারপর আর কোনও বাস থাকে না, কোনও দিকে যাওয়ার। ফলে কলকাতা বা মেদিনীপুর থেকে ১০টার পর ট্রেনে এসে মেচেদা স্টেশনে নামলে হয়রানি শিকার হন যাত্রীরা।
এ বিষয়ে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে দরবার করেছিল যাত্রী কমিটি। শুভেন্দুবাবুর হস্তক্ষেপে গত এপ্রিলে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার একটি বাস মেচেদা-হলদিয়া রুটে যাতায়াত শুরু করে। রাত ১০টা ১০ মিনিটে সে বাসটি প্রতিদিন ছাড়ছিল মেচেদা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে। কিন্তু দু’মাস পরেই তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এ নিয়ে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ ও দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন পরিবহণ যাত্রী কমিটির কর্মকর্তারা। কিন্তু কেন বন্ধ হয়ে গেল ওই বাস?
সরাসরি এ নিয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে পরিবহণ নিগমের একাংশের কর্মীরা বলছেন, চালকের অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওই বাস। আবার জেলার এক কর্মকর্তা বলছেন বেসরকারি বাস মালিকদের চাপে পড়েই বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাসটি। যদিও দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান বলেন, ‘‘বিষয়টি নজরে এসেছে। দ্রুত রাতের ওই বাস ফের চালুর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বেসরকারি বাস মালিকদের চাপে সরকারি বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবশ্য অস্বীকার করেছেন জেলা বাস ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক সামশের আরেফিন। তাঁর দাবি, ‘‘ট্রেকারের দাপটে বেশিরভাগ রুটের বাসেই যাত্রী কমে গিয়েছে। বাস মালিকরা ক্ষতির মুখে। রাতে বাস চালালে আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে আমাদের। তবে সরকারি বাসের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই!’’ উল্টে তিনি অভিযোগ করেছেন, বেআইনি ভাবে ট্রেকার চলাচল করলেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয় না।
জেলা পরিবহণ দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া-খড়্গপুর রেলপথে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রবেশ দ্বার হিসেবে পরিচিত মেচেদা রেল স্টেশন ও সংলগ্ন কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড। তমলুক, হলদিয়া, কাঁথি, এগরা মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা কাজের সূত্রে কলকাতা, মেদিনীপুর, খড়্গপুর, ঘাটাল, আরামবাগ, তারকেশ্বর ও বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জায়গায় যান। সে ক্ষেত্রে সড়ক পথে মেচেদা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এসে ট্রেন ধরেন কিংবা দূরপাল্লার বাস ধরে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। ফলে প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড়ে থাকে মেচেদা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড। অথচ, রাত ৮ টার পর থেকেই বেশিরভাগ রুটে বাস কমে যায়।
তমলুকের বাসিন্দা গ্রন্থাগার কর্মী তরুণ ঘোড়াই বলেন, ‘‘কাজ সেরে মেচেদা বাসস্ট্যান্ডে পৌছাতে সাড়ে ৯ টা-১০ টা বেজে যায়। বাড়ি ফেরার বাস পেতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়।’’ পরিবহণ যাত্রী কমিটির জেলা সহ-সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের অভিযোগ, ‘‘রাত বাড়লেই যাত্রীদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করে গা়ড়ি ভা়ড়া করতে হয়। অনেকে আবার ঝুঁকি নিয়ে লরিতে চড়ে যাতায়াত করেন। আমারা বাস ফের চালুর দাবি জানিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy