Advertisement
E-Paper

ময়নায় বোমা-গুলি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তিরে জখম তৃণমূল কর্মী

বুধবার রাতভর দফায় দফায় বোমা-গুলি এবং তির-ধনুক নিয়ে হামলার জেরে বৃহস্পতিবারও আতঙ্ক ছিল গোটা এলাকায়। গণ্ডগোলের জেরে ভুদেব জানা নামে এক তৃণমূল কর্মী তিরবিদ্ধ হয়ে তমলুক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১৯
হাসপাতালে তিরবিদ্ধ তৃণমূল কর্মী। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে তিরবিদ্ধ তৃণমূল কর্মী। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

পঞ্চায়েতের প্রধান এবং উপপ্রধান নির্বাচন মিটে গিয়েছিল আগেই। তবুও এড়ানো গেল না গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যার জেরে বুধবার রাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ময়না।

বুধবার রাতভর দফায় দফায় বোমা-গুলি এবং তির-ধনুক নিয়ে হামলার জেরে বৃহস্পতিবারও আতঙ্ক ছিল গোটা এলাকায়। গণ্ডগোলের জেরে ভুদেব জানা নামে এক তৃণমূল কর্মী তিরবিদ্ধ হয়ে তমলুক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি বলে পুলিশ জানিয়েছে। এক মহিলাও সংজ্ঞাহীন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। এঁরা সকলেই ময়নার আঁধারিয়া গ্রামের বাসিন্দা। সেই সঙ্গে চাঁদবেনিয়া গ্রামের এক তৃণমূল কর্মী চক্রধর দাসকে অপহরণের অভিযোগও উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ বাড়ির পাশেই ওষুধ দোকান বন্ধ করছিলেন ভূদেব। অভিযোগ, আচমকা জনা চল্লিশেক দুষ্কৃতী মুখে কালো কাপড় বেঁধে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে। তাঁর পা ভেঙে দেওয়া হয়। দুষ্কৃতীদের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করলে তাঁকে লক্ষ্য করে তির ছোড়া হয়। গায়ে তির লাগলেও কোনওরকমে তিনি বাড়ির গোয়াল ঘরে ঢুকে প্রাণ বাঁচান। গোয়ালঘর লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা।

অভিযোগ, এরপর দুষ্কৃতীরা পাশের গ্রামে ঢুকে বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শম্পা মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালায়। তাঁর স্বামী বিকাশ মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘রাত আটটা নাগাদ ৭-৮টি বোমা ছোঁড়া হয়। সবাই বাড়ির ভিতরে থাকায় কোনও ক্ষতি হয়নি। প্রতিবেশী তথা প্রাক্তন উপপ্রধানের বাড়়িতেও হামলা চলে।’’ তাঁর দাবি, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ক্যাম্পের দূরত্ব মাত্র পাঁচশ মিটার। অথচ হামলার সময় পুলিশের দেখা মেলেনি। পরে তারা এলেও চলে যাওয়ার পর ফের হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা।

স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সদস্য রবীন্দ্রনাথ জানার দাবি, বুথের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা। বোমাও ছোড়ে। বাকচা পঞ্চায়তের উপপ্রধান শম্পা মণ্ডলের অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই হামলা চালিয়ছে। জেলা বিজেপি নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলের জেলা সভাপতি (তমলুক) প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘লাগামছাড়া দুর্নীতি আর ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে বোর্ড গঠনের সময় থেকে তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছিল। তারই মাসুল হিসেবে ওই এলাকায় অশান্তি হচ্ছে। উল্টে মিথ্যে মামলায় আমাদের সংগঠনের লোকদের ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’

প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচনের শুরু থেকেই ময়নার বাকচা এলাকা উত্তপ্ত হচ্ছিল। ২১ আসনের এই পঞ্চায়েতের ১৫টি পেয়েছিল তৃণমূল। বাকি ৬টি আসনের ৩টি পেয়েছিল বিজেপি ও ৩টি নির্দল। পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের সময় দলের হুইপ অমান্য করে প্রধান পদে ভোটাভুটি হয়। ১১টি ভোট পেয়ে প্রধান হন শুকলাল মণ্ডল। হেরে যান মিলন ভৌমিক নামে তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সহ-সভাপতি। বুধবার রাতে মিলনের অনুগামী হিসেবে পরিচিত নাড়ু মণ্ডল, বিজয় ভৌমিক, উত্তম সিংহর নেতৃত্বে দুষ্কৃতীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে হামলা চালায় বলে আক্রান্তদের অভিযোগ। যদিও এ ব্যাপারে মিলনের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে নারাজ তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। সাংসদ তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘ভগবানপুর থেকে তিরন্দাজবাহিনী এনে হামলা চালিয়েছে বিজেপি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশকে বলা হয়েছে।’’ তবে যারা হামলা চালিয়েছে স্থানীয় লোকজন তাদের তৃণমূলের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য বলে দাবি করলেও শিশিরবাবুর দাবি, কারা অশান্তি পাকিয়েছে তা দলীয় স্তরে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

ময়না থানার পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত হামলায় অভিযুক্তরা কেউ ধরা পড়েনি। তমলুকের এসডিপিও সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘ময়নার ভৌগোলিক অবস্থান বিপজ্জনক। পাশে কেলেঘাই নদী পেরিয়ে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে দুষ্কৃতীরা। দিনের বেলা পুলিশ এলাকায় নজরে রাখে। তবে রাতে প্রচুর সংখ্যক পুলিশ না হলে ওই এলাকা সামাল দেওয়ায় সমস্যা রয়েছে।’’

Violence Injury TMC Firing Bombing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy