নৃশংসতার শিকার। এভাবেই মারা হয়েছে হায়নাটিকে। নিজস্ব চিত্র।
বসতি এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়ায় একটি পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ হায়নাকে পিটিয়ে মেরে ফেললেন গ্রামবাসীরা। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে পটাশপুর থানা এলাকার গোকুলপুরে বাগুই নদীর অববাহিকা এলাকায়। বন দফতর হায়নাটির দেহ উদ্ধার করেছে।
রাজ্য জীববৈচিত্র পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, হায়না ল্যাকড়া বা আধবাঘা নামেও পরিচিত। এরা ঝোপঝাড় ওয়ালা পোড়ো মাঠে, খোয়াই বা পাথরের ঢিবি, খোঁদলে এদিক ওদিক ছড়িয়ে থাকে। এই সব পরিবেশ ওরা পছন্দ করলেও লোকালয়ের আশেপাশেই থাকে। খেতের ফসল বা ঝোপ ঝাড়েও এরা লুকিয়ে থাকে। শেয়ালের গর্ত বড় করে নিয়ে তার মধ্যে এরা বিশ্রামও করে। দিনের বেলা সাধারণত লুকিয়ে থাকলেও রাতে শিকারে বেরোয়। শিকারের সন্ধানে ক্ষিপ্র গতিতে ডেরা থেকে কয়েক মাইল দূর পর্যন্ত চলে যায়। মরা জন্তুর পাশাপাশি গৃহপালিত জীবকেও এরা শিকার করে। গ্রাম বাংলায় এক সময় একে ছেলে ধরা বাঘও বলা হতো। পর্ষদের পটাশপুর ১ ব্লক পরিচালন সমিতির সভাপতি সোমনাথ দাস অধিকারী বলেন, “ এখানকার বাস্তুতন্ত্রে এই প্রাণীর দেখা মেলে না। ধারনা, পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গল এলাকা থেকে খাবারের সন্ধানে এই এলাকায় এসে পড়েছিল। বাগুইয়ের অববাহিকার ঝোপ জঙ্গলে থেকে গিয়েছিল। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তার জন্য ওই এলাকায় গিয়ে সচেতনতা কর্মসূচী নেওয়া হবে।” পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা বনাধিকারিক শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “ ভারতীয় বন্যপ্রাণী রক্ষা আইনে এরা তৃতীয় পর্যায়ের গুরুত্বে সংরক্ষিত। এদের ক্ষতি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। গোটা ঘটনার তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পনেরো দিন আগে থেকে এই প্রাণীকে আশপাশের গ্রামে দেখা যাচ্ছিল। রোপনের কাজে ভোর থেকে চাষিরা মাঠে গিয়ে বা প্রাতকৃত্য সারতে গিয়ে হায়নাটির সামনে পড়েন। তাড়া খেয়ে পালিয়ে আসেন তাঁরা। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মধুসূদন দাস বলেন, “ গত কয়েকদিন ধরে গ্রাম থেকে হাস,মুরগি, ছাগল খোয়া যাচ্ছিল। গবাদি পশুর দলও মাঠে গিয়ে ও রাতভর কুকুরের দল চিৎকার জুড়ছিল। শিশুদের নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন গ্রামবাসীরা। ক্ষোভও বাড়ছিল। এদিন সকালে মাঠে কাজে গিয়ে হায়নাটির হামলার মুখে পড়েন প্রৌঢ মধুসূদন দাস। বিষয়টি জানাজানি হতেই গ্রামবাসীরা জোট বেঁধে তাকে ঘিরে ধরে মেরে ফেলেন।” এদিন তাকে মেরে ফেলার পর ঝুলিয়ে রাখা হয় প্রাণকৃষ্ণবাবুর বাড়ির সামনের মাঠে। তাকে দেখার জন্য ভিড় জমান হাজার হাজার মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy