E-Paper

জলমগ্ন ৪৩১টি মৌজার জমি, জনজীবনে বিঘ্ন

জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গড়ে ১৭.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪ ০৯:৩১
বুধবার সারাদিন জেলাজুড়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ল। নাকাল জেলাবাসী। তমলুক কলেজ মোড়ে।

বুধবার সারাদিন জেলাজুড়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ল। নাকাল জেলাবাসী। তমলুক কলেজ মোড়ে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস ।

বসন্তে মরসুমে মুখভার আকাশের। দিনভর ঝোড়ো হাওয়া, হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত। তাতেই কার্যত শীতের আমেজ।

আবহাওয়া দফতর থেকে আগাম সতর্ক করা হয়েছিল যে, ১৮ মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত উপকূলবর্তী বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাত, ঝোড়ো বাতাস-সহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই মতো সোমবার থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের আকাশ মেঘলা ছিল। হালকা বৃষ্টি হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকেই জেলার সর্বত্রই ঝোড়ো বাতাস-সহ বৃষ্টি শুরু হয়। রাতভর কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি চলে। একই পরিস্থিতি বজায় থেকেছে বুধবার সকালেও। টানা বৃষ্টিপাত আর ঝোড়ো হাওয়ার জেরে এ দিন জেলায় তাপমাত্রার পারদ নীচে নেমেছে। কার্যত শীতকালের মতো আবহাওয়া তৈরি হয়। অনেকেই আবার শীতের পোশাকও পরেছেন।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গড়ে ১৭.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ভগবানপুর এলাকায় ২৮.০২ মিলিমিটার, নন্দীগ্রামে ২৬.০৬ মিলিমিটার, এগরায় ২১.৬ মিলিমিটার ও কাঁথিতে ১৯.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি পড়েছে। ঠান্ডার আমেজে সকাল থেকে বাড়ি থেকে লোকজনও কম বের হয়েছেন। হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় ও রাজ্য সড়ক এবং দিঘা-মেচেদা জাতীয় সড়কে গাড়ি চলাচল কম ছিল। স্কুলে প্রাথমিক ও হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হারও বেশ কম ছিল। অনেক স্কুলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে এ দিন। তমলুক শহরের মানিকতলায় একটি ভাড়া বাড়িতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অফিসে জল জমে যায়। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যহত হয়েছে এ দিন।

মঙ্গলবার রাত থেকে এগরা ও পটাশপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার পরে বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়। বিদ্যুত দফতরের দাবি, বৃষ্টির কারণে বেশ কিছু জায়গায় লাইনের সমস্যায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন হয়েছে। পটাশপুর-এগরা রাজ্য সড়কের ধারে বিভিন্ন এলাকায় পাইপ লাইন পাতার কাজ চলছিল। রাস্তার ধারে জমে থাকা মাটি রাজ্য সড়কে নেমে এসে কাদায় বিপদের কারণ হয়ে উঠেছে। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতর অবশ্য জানিয়েছে, এখনও ক্ষয়ক্ষতির কোনও রিপোর্ট আসেনি। আজ, বৃহস্পতিবারও বজ্রপাত-সহ বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতরের আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘স্বাভাবিক জনজীবন কিছুটা ব্যহত হয়েছে ঠিকই। তবে এখনও ক্ষয়ক্ষতির কোনও খবর নেই। ব্লক প্রশাসনকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সতর্কতা থাকতে বলা হয়েছে।’’

উপকূলবর্তী এলাকা হওয়ায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে খবর পেয়ে ব্লক প্রশাসন ও কৃষি দফতর বাসিন্দাদের সতর্ক করার জন্য প্রচার চালিয়েছিল। দিঘার সমুদ্র উপকূলবর্তী রামনগর, কাঁথি, এগরা মহকুমা, নন্দীগ্রাম এলাকায় ভারী বৃষ্টিতে বাদাম, সূর্যমুখী ও গ্রীষ্মকালীন মুগ ডাল চাষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলা কৃষি দফতরের তরফে রামনগর-১, এগরা-১ ও ২, পটাশপুর-১ ও ২ ব্লকের ৪৩১টি মৌজায় চাষ জমি জলমগ্ন হওয়ার রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে।

জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) প্রবীণ মিশ্র বলেন, ‘‘জেলা জুড়ে বৃষ্টি হয়েছে। কয়েকটি ব্লকে চাষের জমিতে কম-বেশি জল জমেছে। ব্লক কৃষি দফতরের তরফে পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতে ৪৩১টি মৌজায় বাদাম, সূর্যমুখী ও মুগ চাষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনার কথা রাজ্য কৃষি দফতরকে জানানো হয়েছে। তবে এখনও জেলায় বোরো ধান চাষে ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।’’ আপাতত চাষ জমি থেকে জমা জল বের করতে চাষিদের সতর্ক করে মাইক প্রচার করা হচ্ছে বলে জানান উপ-অধিকর্তা। তবে এই বৃষ্টির জেরে এগরা ও পটাশপুরে চিনেবাদাম চাষে কিছুটা উপকৃত হয়েছেন চাষিরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tamluk

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy