Advertisement
E-Paper

ভোট নির্বিঘ্ন হবে তো, প্রশ্ন

সিসিটিভি ক্যামেরা, পর্যাপ্ত পুলিশ, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট-সহ চূড়ান্ত প্রশাসনিক আশ্বাসের পরেও রেলশহরের ভোট নিয়ে স্বস্তিতে বিরোধীরা। আজ, শনিবার রাজ্যের ৯১টি পুরসভার সঙ্গে খড়্গপুরেও নির্বাচন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে শুক্রবারই জেলা প্রশাসন নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ শেষ করেছে। রেলশহরে পুর-নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলেই প্রশাসনের দাবি।

দেবমাল্য বাগচি

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩১
ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগে পুলিশ সঙ্গে নিতে লাইন প্রিসাইডিং অফিসারদের। কিন্তু সেখানে লাঠিধারী হোমগার্ডের সংখ্যাই বেশি। শুক্রবার খড়্গপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে কিংশুক আইচের তোলা ছবি।

ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগে পুলিশ সঙ্গে নিতে লাইন প্রিসাইডিং অফিসারদের। কিন্তু সেখানে লাঠিধারী হোমগার্ডের সংখ্যাই বেশি। শুক্রবার খড়্গপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে কিংশুক আইচের তোলা ছবি।

সিসিটিভি ক্যামেরা, পর্যাপ্ত পুলিশ, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট-সহ চূড়ান্ত প্রশাসনিক আশ্বাসের পরেও রেলশহরের ভোট নিয়ে স্বস্তিতে বিরোধীরা। আজ, শনিবার রাজ্যের ৯১টি পুরসভার সঙ্গে খড়্গপুরেও নির্বাচন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে শুক্রবারই জেলা প্রশাসন নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ শেষ করেছে। রেলশহরে পুর-নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলেই প্রশাসনের দাবি। যদিও বিরোধীদের আশঙ্কা, যে ভাবে শহরে বাইরে থেকে দুষ্কৃতীরা ঢুকেছে, তাতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন কড়া পদক্ষেপ না করলে ভোট লুঠ করবে শাসকদল।

প্রতি বারই পুরভোটের আগে খড়্গপুরে রেলের ঠিকাদারির সূত্রে মাথাচাড়া দেওয়া মাফিয়াদের কাজে লাগায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। গত এক সপ্তাহ ধরে শহরে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা ঢুকছে বলে সরব হয়েছে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি। বিরোধীদের আশঙ্কা, তৃণমূল আশ্রিত ওই দুষ্কৃতীরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ভোট লুঠ করতে পারে। বিশেষ করে ৩, ১৩, ১৫, ১৭, ১৮, ২৭, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট লুঠের আশঙ্কা করছে বিরোধীরা। ১৭ ও ১৮ নম্বর বাদ দিলে ওই সব ওয়ার্ডগুলিতে গত পুরসভা ও শেষ লোকসভা নির্বাচনে এগিয়ে ছিল তৃণমূল বিরোধীরা। আর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে এ বার যুযুধান শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী এবং কংগ্রেসের সত্যদেও শর্মা। সত্যদেও ২০১০ সালে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে দেবাশিসকে হারিয়েছিলেন। তাই ১৭ নম্বরে অশান্তির আশঙ্কা থাকছেই। একই ভাবে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ বার মুখোমুখি বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর শিবাজী রাও এবং রেল মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুর স্ত্রী বিজেপি প্রার্থী পূজা। ওই দু’টি ওয়ার্ডেই গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এগিয়ে ছিল। তাই ওই এলাকায় বিরোধীদের আটকাতে জেলার পিংলা, নারায়ণগড় এবং পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড থেকে কয়েক হাজার দুষ্কৃতী তৃণমূল এনেছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।

প্রশাসন অবশ্য নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করার কথাই বলছে। খড়্গপুর শহরের ২৬৫টি বুথে রাজ্য পুলিশের প্রায় ৮০০ বাহিনী থাকবে। প্রথম পর্যায়ে ১৪১টি বুথকে স্পর্শকাতর ধরা হলেও পরে ঠিক হয়েছে প্রতিটি বুথেই সম সংখ্যক পুলিশ থাকবে। বুথ পিছু ২ জন করে সশস্ত্র ও ২ জন লাঠিধারী পুলিশ মোতায়েন থাকবে। একই চত্বরে একাধিক বুথ থাকলে বুথ পিছু একজন করে অতিরিক্ত লাঠিধারী পুলিশ থাকবে। অর্থাৎ একই চত্বরে তিনটি বুথ হলে সেখানে ৪ জন লাঠিধারী পুলিশ থাকবে। একই চত্বরে ৪টি বুথ হলে একজন সাব ইন্সপেক্টরকে বুথের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হবে। প্রতিটি বুথে এক জন প্রিসাইডিং অফিসার-সহ ৪ জন ভোটকর্মী থাকছেন। ২৬৫টি বুথ দেখভালের জন্য ২৩জন সেক্টর অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ভোট হওয়ায় লোকসভা বা বিধানসভার মতো সেক্টর অফিসারদের এক্সিকিউটিভ ক্ষমতা এ বার নেই। তাই আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখতে এ বছরই প্রথম ৭ জন বিডিও-কে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অতি স্পর্শকাতর ১২টি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরায় সরাসরি নজরদারি চালাবে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়াও ৪০টি ডিজিট্যাল ক্যামেরা ব্যবহৃত হবে বিভিন্ন বুথে। এ দিনই যাবতীয় প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। ঝাপেটাপুরে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছে ইভিএম। খড়্গপুরের রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শুক্রবার সন্ধের আগেই সব ভোটকেন্দ্রে ইভিএম ও ভোটকর্মীরা পৌঁছে গিয়েছেন। আমাদের সমস্ত প্রস্তুতি সারা হয়ে গিয়েছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন মানুষ।’’

ভোটের সাজে খড়্গপুর শহর। শুক্রবার। — নিজস্ব চিত্র।

এত আয়োজনের পরেও ভীতি কাটছে না বিরোধীদের। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন লজ ও ধর্মশালায় দুষ্কৃতীদের এনে তুলেছে তৃণমূল। ভোটের আগের দিনেও তারা ভয় দেখাচ্ছে। পুলিশ কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিলেও বিরোধী নেতা-কর্মীরা কিন্তু স্বস্তিতে নেই। বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা সত্যি স্বস্তিতে নেই। মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করে ইন্দার একটি লজ, ক্লাবের নাম জানিয়েছি। প্রশাসনের প্রতি এখনও আস্থা রাখছি। কিন্তু ভোটে অশান্তি হলে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে খড়্গপুরবাসীকে একত্রিত হয়ে রুখে দাঁড়ানোর আবেদন জানাচ্ছি।’’ সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডলের আবার অভিযোগ, ‘‘গোটা খড়্গপুরে তৃণমূল অন্তত ৪ হাজার বহিরাগতকে ঢোকাবে। কিছু ওয়ার্ডকে বেছে দুষ্কৃতীরা বুথ দখল করবে। কর্মীদের বলেছি, যেখানে এই ঘটনা ঘটবে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে।’’

বহিরাগত-তত্ত্ব মানলেও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশা রাখছেন বিদায়ী পুরপ্রধান কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডে। তিনি বলেন, ‘‘বহিরাগত ঢুকেছে বলে আমরা এজানি। কিন্তু পুলিশ কিছু এলাকায় তল্লাশি করছে বলেও খবর পাচ্ছি। অশান্তি হলে আমাদের কর্মীরা রুখে দাঁড়াবে। শহরবাসীকেও প্রতিরোধ করতে বলেছি।”

Debmalya Bagchi Kharagpur municipal election election CCTV BJP Trinamool congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy