Advertisement
E-Paper

শুকনো প্রতিশ্রুতি নয়, কাজ দেখতে চান দেবশ্রী-সুমিতারা

হয় বাবা-কাকাদের রায় মাথা পেতে নেওয়া, না হলে স্বামী-শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের কথামতো ভোট দেওয়া। একটা সময় পর্যন্ত নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে নিজেদের ভাবনাচিন্তায় খুব একটা গুরুত্বই দিতেন না মহিলারা। এখন দিন পাল্টেছে। বাইরের জগতে যাতায়াত বেড়েছে মেয়েদের। কর্মরতাদের পাশাপাশি যাঁরা ঘরণী তাঁরাও নিজেদের পাওয়া-না পাওয়ার কথা ভেবে, প্রার্থী বিচার করেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।

দেবমাল্য বাগচি

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০০

হয় বাবা-কাকাদের রায় মাথা পেতে নেওয়া, না হলে স্বামী-শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের কথামতো ভোট দেওয়া। একটা সময় পর্যন্ত নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে নিজেদের ভাবনাচিন্তায় খুব একটা গুরুত্বই দিতেন না মহিলারা। এখন দিন পাল্টেছে। বাইরের জগতে যাতায়াত বেড়েছে মেয়েদের। কর্মরতাদের পাশাপাশি যাঁরা ঘরণী তাঁরাও নিজেদের পাওয়া-না পাওয়ার কথা ভেবে, প্রার্থী বিচার করেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। পুরভোটের আগে খড়্গপুর শহরের নানা বয়সী মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে তাই বোঝা গেল হেঁসেলে নুন-হলুদের পরিমাণের মতোই নগরোন্নয়নের খুঁটিনাটি নিয়েও তাঁরা সমান সচেতন।

বিগত পুরবোর্ডের প্রতিশ্রুতি মতো অনেক কাজই রেলশহরে হয়নি। চিরচেনা জলসঙ্কট ও বেহাল নিকাশি নিয়ে জেরবার শহরবাসী। নিত্যদিনের এই সব ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন গৃহিণীরাও। খড়্গপুরে বরাবর রেল মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য। পাড়ার মোড়ে-মোড়ে সেই সব সমাজবিরোধী আখড়ার বিরুদ্ধেও ভোটের মুখে গলা তুলছেন মহিলারা। প্রকাশ্যেই তাঁরা বলছেন, কাউন্সিলর পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকেও এই কাজটা করেননি।

ঠিক কী কী সমস্যায় জেরবার রেলশহরের মহিলারা?

শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে উঠে এল নানা অভাব-অভিযোগ। মহিলারা সব থেকে বেশি তিতিবিরক্ত রাস্তার হাল নিয়ে। প্রায় সকলেই বলছেন, বিগত পাঁচ বছরে নতুন কিছু ঢালাই রাস্তা হলেও পুরনো রাস্তার সংস্কার চোখে পড়েনি। বরং যত্রতত্র খানাখন্দে হোঁচট খেতে হচ্ছে, স্থানে স্থানে রাস্তার পিচ-ঢালাইয়ের আস্তরণ উঠে গিয়েছে। ইন্দার বিদ্যাসাগরপুর, পাঁচবেড়িয়া, রাজগ্রাম, নিমপুরা, ভবানীপুর, আরামবাটি, তালবাগিচার বেশ কিছু রাস্তা বেহাল বলে মহিলারা অভিযোগ তুলেছেন। শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গৃহবধূ দেবশ্রী দাম বলেন, “আমি অন্তত রং দেখে নয়, প্রার্থীকে বিচার করে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ভোট দিই। কিন্তু এখনও বেহাল রাস্তা ও পথবাতির অভাবে চলতে গেলে হোঁচট খেতে হয়। পাড়ায় রাত বাড়লেই দুষ্কৃতীতের আনাগোনা বাড়ছে। কাউন্সিলর সব জেনেও চুপ থাকেন। তাই আগামী দিনে যে-ই নির্বাচিত হবেন তিনি আমাদের ভোটের মূল্য দেবেন আশা রাখছি।”

এই শহরের মহিলারা নিকাশি নিয়েও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। শহরে এখনও নিকাশির সুবন্দোবস্ত না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ সর্বস্তরের মহিলারা। তার উপর গত পুর-নির্বাচনের আগে প্রতিটি রাজনৈতিক দল জলের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই সমস্যাও মেটেনি। তাই অনেকেই ভোটদানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সারদাপল্লির গৃহবধূ সুমিতা দের কথায়, “ভোট আসে তাই ভোট দিই। কিন্তু কাজ খুব একটা দেখতে পাই না। এখনও আমাদের ওয়ার্ডের কিছু অংশে এবং শহর জুড়েই নিকাশি ও পানীয় জলের অভাব রয়ে গিয়েছে। প্রতিশ্রুতি তো প্রতি বছর থাকে। এ বার কাজ দেখতে চাই।”

এই সব কথাবার্তা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট অনেক ভেবেচিন্তেই ভোটটা দেবেন খড়্গপুরের গৃহিণীরা। কিন্তু সকলে স্বাধীন মতের প্রকাশ ঘটাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। ইন্দার বিদ্যাসাগরপুরের বাসিন্দা সরকারী কর্মী সোমা সেনগুপ্তের মতে, “এখনও শহরের সব মহিলারা ভোটদানে নিজের মত প্রকাশ করতে পারেন বলে মনে হয় না। তবে আমাদের মতো কিছু মহিলা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।’’ একই সঙ্গে সোমাদেবী মনে করেন, আগের তুলনায় পুর-পরিষেবা কিছুটা উন্নত হলেও মহিলাদের নিরাপত্তা ও আধুনিক পরিকাঠামোয় খড়্গপুর শহর অনেক পিছিয়ে। সেই সব প্রত্যাশা না মিটলে ভোটদান সার্থকতা পাবে না।

Debmalya Bagchi Municipal election Trinamool Tmc Congress Cpm Bjp School teacher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy