Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Egra Blast

বহু পুরস্কার, হাজারো বিতর্ক সঙ্গী করে উত্থান, এগরার ‘বাজিসম্রাট’-এর বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ

বছর দু’য়েক আগে ভানুর কারখানাতে অভিযান চালায় পুলিশ। বহু নিষিদ্ধ বাজি এবং বাজি তৈরির মশলা উদ্ধার হয়। গ্রেফতার করা হয়েছিল ভানুকে। তবে কিছু দিনের মধ্যেই জেল থেকে মুক্তি পান।

image of blast site and owner of cracker farm Bhanu

এগরা এলাকায় ‘বাজিসম্রাট’ নামে পরিচিতি ভানুর। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
এগরা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ ০৯:১৪
Share: Save:

আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া রঙিন প্যারাডাইস, রংবেরঙের তুবড়ি, গাছবোমা, ছুঁচোবাজি, রংমশাল, হাওয়াইয়ের চোখধাঁধানো প্রদর্শনীতে বরাবরই কয়েক কদম এগিয়ে থাকতেন কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু। জেলা ছাড়িয়ে তাঁর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল পড়শি রাজ্যেও। ভানুর হাতের কেরামতি ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠেছিল অন্যদের কাছে। গত তিন দশকে শতাধিক পুরস্কার প্রাপ্তির দৌলতে এগরার ভানু হয়ে উঠেছিলেন ‘বাজিসম্রাট’।

কিন্তু তাঁর উত্থানে বাদ সাধল মঙ্গলবার দুপুরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনা। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ এগরা ১ ব্লকের সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের খাদিকুল গ্রামে ভানুর বাজি কারখানায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। কাজ করতে করতেই প্রাণ হারান ৯ শ্রমিক। যাঁদের অধিকাংশই মহিলা। আর এই ঘটনার জেরে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে ভানুর নাম। কে এই ভানু? কী ভাবেই বা তাঁর এমন বাড়বাড়ন্ত, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।

স্থানীয় সূত্রে খবর, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাজি তৈরি করেন ভানু। তাঁর তৈরি বাজির চাহিদাও ছিল বিপুল। ভানুর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দূরদূরান্তে। ক্রমেই ভানু হয়ে ওঠেন এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ীদের অন্যতম। ২০১১ সালে রাজ্য তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে শাসকদলে ভানুর ওঠাবসা শুরু হয়। তবে সূত্রের খবর, রাজনীতি নিয়ে সে ভাবে মাথা ঘামাতেন না ভানু। ব্যবসাই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। প্রথমে ভানুর কারখানা ছিল গ্রামের বাড়িতে। সেখানেও বেশ কয়েক বার দুর্ঘটনা ঘটে। বছর পাঁচেক আগে গ্রামের বাড়ির কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ভানুর ভাই এবং তাঁর স্ত্রীর। সে বার ঘটনার পর কিছু দিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন ভানু। কিছু দিনের মধ্যেই অবশ্য ফের স্বমহিমায় ফেরেন।

জনশ্রুতি, রাজনীতির ছত্রছায়ায় থাকার সুযোগে পুনরায় বাড়ি ফিরে এসে নতুন বাজি কারখানা গড়ে তোলেন তিনি। কারখানায় যাওয়ার জন্য তৈরি হয় প্রায় দেড়শো মিটার পাকা রাস্তা। ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মী নিয়ে নতুন করে শুরু হয় কাজ। বাজি আর মশলা রাখতে কারখানার পাশেই তৈরি হয় গোপন কুঠুরি।

বছর দু’য়েক আগে অবৈধ বাজি উদ্ধারে নেমে ভানুর কারখানাতেও অভিযান চালিয়েছিল এগরা থানার পুলিশ। সে বার বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ বাজি এবং বাজি তৈরির মশলা উদ্ধার হয়। গ্রেফতার করা হয়েছিল ভানুকে। তবে কিছু দিনের মধ্যেই জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আবারও বাজি ব্যবসায় নেমে পড়ে ভানু। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এলাকার বর্ধিষ্ণু ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিতি ছিল ভানুর। স্থানীয় সূত্রে খবর, শাসকদলের হাত মাথায় থাকায় ভানুকে নিয়ে আলোচনার বিশেষ পরিসরও ছিল না। তবে মঙ্গলবারের বিস্ফোরণের পর বদলে গিয়েছে এলাকার চেহারা। হাজার হাজার মানুষ ভানুর ‘জীবন নিয়ে খেলা’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।

স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, ভানুর এই কারখানায় মোট ৩০ থেকে ৩২ জন কাজ করলেও দুর্ঘটনার সময় ১৮ থেকে ২০ জন কাজ করছিলেন। যার মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা। যে সময় বিস্ফোরণ ঘটে সেই সময় ভানু রান্নাঘরে ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। বিস্ফোরণের অভিঘাতে তাঁর হাতে চোট লেগেছে বলেও খবর। তবে বিস্ফোরণের পরেই ভানু তাঁর গোটা পরিবার নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন বলেও খবর।

এগরার তৃণমূল বিধায়ক তরুণ মাইতি বলেন, “এগরা খুবই শান্তিপূর্ণ জায়গা। সেখানে এমন ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। ২০২২-এর ১৯ অক্টোবর ভানু গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার বাজি কারখানা তৈরি করেন। রুজিরুটির কারণে কিছু মানুষ অবৈধ বাজি তৈরিতে ঝুঁকে পড়েন। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। এ জন্য পুলিশকে সক্রিয় পদক্ষেপ করতে বলেছি।” ভানুর সঙ্গে বিধায়কের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে তরুণ বলেন, “ওই ব্যক্তিকে আমি চিনি না। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মিটিং, মিছিলে কখনও দেখিনি। তিনি আগে সিপিএম করতেন বলে শুনেছি। তৃণমূল করেছেন বলে কোনও দিন শুনিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Egra Blast police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE