গ্রামের তস্য গলিতেই গজিয়ে উঠেছে মুরগির খামার। দাসপুরের জগন্নাথপুরে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
রবিবার। অভ্যাস মতো একটু বেলা করেই হাতে তুলে নিলেন থলে। কুশপাতা বাজারে গিয়ে চেনা মুরগির দোকানে দাঁড়ালেন ঘাটালের বাসিন্দা শঙ্কর মালাকার। জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘কী রে কত করে যাচ্ছে।’’ মুচকি হেসে দোকানদার বললেন, ‘‘কাটা ১৭০ কেজি (কিলোগ্রাম)।’’ বাজারের শুরুতেই মুখ ব্যাজার হল শঙ্করের। বিস্ময় ভরা মুখে বেরিয়ে এল, ‘‘বলিস কী রে!’’
এর পর মিনিট দশেক চলেছিল কথাবার্তা। যার মূল নির্যাস একটাই—কখন, কত দাম হবে তা জানে শুধু কোম্পানি। শুধু শঙ্কর নন, মুরগি কিনতে গিয়ে দাম শুনে ছেঁকা খাচ্ছেন অনেকেই। ক্রেতাদের একাংশের বক্তব্য, শীতকাল সাধারণ ভাবে একটু দাম বাড়ে। নানা ধরনের অনুষ্ঠান, পিকনিক এ সবের কারণেই বাড়ে দাম। কিন্তু এ বার যেন বাড়া দাম নামতেই চাইছে না।
জেলা প্রাণী সম্পদ দফতর সূত্রের খবর, চাহিদা ও জোগানের ফারাকই দাম বৃদ্ধির মূল কারণ। সূত্রের খবর, জেলায় বছরে গড় মাংসের চাহিদা ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। মাংস উৎপাদন হয় এক লক্ষ ৫১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন হাঁস-মুরগি পালন,পোলট্রি চাষের মাধ্যমে মাংস-ডিমের উৎপাদন বাড়ুক। তা সত্ত্বেও রয়ে যাচ্ছে চাহিদা ও জোগানের ফারাক। শুধুমাত্র এই ফারাকের জন্যই কি দাম বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দাম। না কি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে? মুরগির প্রতিপালনের সঙ্গে যুক্ত চাষিরা বলছেন, গোটা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কোম্পানি। তাঁরা যদি মুরগির বাচ্চা থেকে খাবার নিজেরা কিনে চাষ করতেন তা হলে বাজারে ১০০-১২০ টাকার মধ্যে মাংস বিক্রি হতো। সে ক্ষেত্রে ভাল আয়ও হতো তাঁদের।
কী ভাবে চলে এই ব্রয়লার মুরগির বাজার? প্রাণী সম্পদ দফতর সূত্রের খবর, ব্রয়লার চাষের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বেসরকারি নানা সংস্থার (চলতি কথায় কোম্পানি) হাত। তারাই মুরগির ছানা বিলি করে। খাবার, প্রতিষেধক দেয়। ব্যবসায়ীরা জমি, মজুরি-সহ অন্য খরচ বহন করেন। মুরগির ছানা দু’কিলোগ্রাম, আড়াই কিলোগ্রাম হতে সময় লাগে ৪০- ৪৫দিন। এরপরই বেসরকারি সংস্থা গুলি ব্যবসায়ীদের টাকা দিয়ে ওই মুরগি কিনে নেয়। পুরো ব্যবসায় জড়িয়ে রয়েছে ফড়ে রাজও। সংস্থা গুলির কাছ থেকে আবার তিন-চার হাত ঘুরে দোকানে ঢুকছে ব্রয়লার। স্বাভাবিক ভাবেই দাম বাড়ছে। দেখার কেউ কেই। ঘাটালের এক মাঝারি পোলট্রি ব্যবসায়ী হিমাংশু মণ্ডলের আক্ষেপ, “মুরগি পিছু আমরা আট-দশ টাকা পাই। দেড় মাসে যা পরিশ্রম ও খরচ হয় তা বাদ দিয়ে লাভ খুবই কম থাকে। এ ভাবেই চলে যাচ্ছে। পুরো লাভটাই ফড়ে এবং কোম্পানি গুলির ঘরে ঢুকছে। সরকার এতকিছু করছে। এই বিষয়টি একটু নজর দিলে ভাল হয়।”
মুরগি মাংসের দাম-সহ নানা সমস্যা নিয়ে কড়া নজর রাখে পোলট্টি ফেডারেশন। সংগঠনের সদস্য দিলীপ পাল বললেন, “সরকার চাইছে মাংস উৎপাদন বাড়ুক। গ্রামে চাষও বাড়ছে। কিন্তু মাঝে কোম্পানি গুলি এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। মাংস উৎপাদন বাড়ছে। এমন প্রবণতায় চাষিরা লাভবান হচ্ছেন না।”
ধান বা আলু নয়। ফড়ে সব ব্যবসায় বিরাজমান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy