Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

চিল্কিগড়ের জঙ্গলে আগুন, নিভল গ্রামবাসীর তৎপরতায়

জঙ্গলে দাবানল। নিজস্ব চিত্র।

জঙ্গলে দাবানল। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৩১
Share: Save:

দাবানলের গ্রাস থেকে রক্ষা পেল চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দির লাগোয়া দুষ্প্রাপ্য গাছগাছড়ার জঙ্গল।

শনিবার সন্ধ্যায় মন্দিরের কাছেই জঙ্গলের একটি বাঁশঝাড়ে ধোঁয়া আর আগুনের ফুলকি দেখতে পান নিরাপত্তা কর্মীরা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা খবর দেন চিল্কিগড় গ্রামের লোকজনকে। ততক্ষণে ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে জঙ্গলে। গ্রামবাসীরা মাটি ছড়িয়ে ও জল দিয়ে আগুন আয়ত্তে আনার চেষ্টা করেন। পরে ঝাড়গ্রাম থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে কয়েক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিভিয়ে ফেলে। তবে আগুনের গ্রাসে জঙ্গলের দু’একর এলাকা জুড়ে পাঁচটি বাঁশঝাড় ও কিছু গাছপালা পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে।

চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দিরের চারপাশে প্রায় ৬০ একর এলাকা জুড়ে রয়েছে দুষ্প্রাপ্য গাছগাছড়ার ঘন জঙ্গল। জঙ্গলে নানা ধরনের গাছ ও বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশঝাড়ও রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের দুষ্প্রাপ্য ভেষজ উদ্ভিদ। রয়েছে নানা ধরনের পাখি ও বন্যপ্রাণী। জঙ্গলের চারপাশের এলাকাটি কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা। মন্দিরে ঢোকার তিনশো মিটার আগে রয়েছে প্রবেশ পথ। সেখানে সব সময় নজরদারি করেন মন্দির কমিটির নিরাপত্তা কর্মীরা। এ ছাড়াও জঙ্গলে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। সন্ধ্যারতির পরে মন্দির চত্বর শুনসান হয়ে যায়। তখন নিরাপত্তা কর্মীরা ছাড়া আর কেউ সেখানে থাকেন না। শনিবার সন্ধ্যারতির পর যথারীতি চত্বর ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল।

মন্দিরে ঢোকার প্রবেশ পথের ডান দিকে রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা। সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ নিরাপত্তা কর্মী উমাশঙ্কর সিংহদেব ও শুকদের রানা তখন সেখানে বসে গল্পগুজব করছিলেন। আচমকা তাঁরা পার্কিংয়ের কাছে বাঁশঝাড়ে আগুন দেখতে পান। অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় রাস্তার কাজে ব্যবহৃত ঠিকাদারের পে লোডার ও জলের ট্যাঙ্কার নিয়ে আসা হয়।

গ্রামবাসী শশাঙ্কনারায়ণ দেও, সুভাষ খামরুই, প্রসাদ দেহুরি, নান্টুনারায়ণ দেও-রা পে লোডারে মাটি বয়ে এনে আগুনে চাপা দিতে থাকেন। ট্যাঙ্কারের কলে পাইপ লাগিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে দেন শ’খানেক এলাকাবাসী। ছুটে আসেন মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি তথা জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমীরকুমার ধল এবং জামবনির বিডিও মহম্মদ আলিম আনসারি। রাত ৮ টা নাগাদ দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে আগুন আয়ত্তে আনে। রাত দু’টো নাগাদ পুরোপুরি আগুন নেভানো সম্ভব হয়।

জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমীরকুমার ধল জানান, প্রায়ই জঙ্গলে আগুন ধরে যাচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় মন্দিরের দক্ষিণদিকে ডুলুং নদী লাগোয়া জঙ্গলে আগুন ধরে গিয়েছিল। নিরাপত্তা কর্মীরাই সেদিন আগুন নিভিয়ে ফেলেন। তারপর ফের শনিবার বিধ্বংসী আগুন ধরে যায় মন্দিরের উত্তরদিকে। প্রবেশপথের ওই জঙ্গলটি কার্যত মন্দিরের পিছনের দিকে রয়েছে। মাঝে রয়েছে একটি খাল। ফলে, আগুনে মন্দিরের ক্ষতির তেমন আশঙ্কা ছিল না। তবে সময়মতো নিরাপত্তা কর্মীরা আগুন দেখতে না পেলে মূল্যবান গাছগাছালির বিস্তীর্ণ জঙ্গলটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল।

সমীরবাবু বলেন, “গ্রামবাসীদের তৎপরতায় বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো গেল। প্রাথমিক কাজটা গ্রামবাসীরাই করেছেন। পরে দমকল কর্মীরা গভীর রাত পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আগুন নিভিয়েছেন।” দমকলের এক আধিকারিক জানান, শুকনো পাতায় আগুন ধরে গিয়েছিল। হাওয়ায় আগুন ছড়িয়েছিল। তবে আগুনের উৎসটা এখনও স্পষ্ট নয়। খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wildfire Chilkigarh Chilkigarh forest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE