E-Paper

হাতিয়ার কাজের দাবি, সুতাহাটা কি ফের বামেদের

কাজের জন্য গুজরাতে গিয়েছে সুতাহাটার রাজেশ মণ্ডল। তিনি বলেন  "আমাদের ভাগ্যটাই এমন। হাতের কাছে হলদিয়া কিন্তু আমাদের কাজ করতে যেতে হয় অন্ধ্র, গুজরাত তামিলনাড়ু, বেঙ্গালুরু।”

সৌমেন মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৩ ০৯:১৩
An image of CPM flag

—প্রতীকী চিত্র।

হাত বাড়ালেই হলদিয়া শিল্পাঞ্চল। কিন্তু কাজ নেই সুতাহাটার। কাজ বলতে ঠিকাদারদের অধীনে অস্থায়ী শ্রমিকের কাজ। কিন্তু একদিকে যেমন করে নতুন শিল্প আসেনি তার উপর অভিযোগ, সেই কাজ পেতে হলে শাসকদলের নেতাদের ধরতে হয়। টাকা দিতে হয়। ফলে ঘরের কাছে হলদিয়া থাকলেও মানুষকে দৌড়াতে হয় ভিন্ রাজ্যে।

কাজের জন্য গুজরাতে গিয়েছে সুতাহাটার রাজেশ মণ্ডল। তিনি বলেন "আমাদের ভাগ্যটাই এমন। হাতের কাছে হলদিয়া কিন্তু আমাদের কাজ করতে যেতে হয় অন্ধ্র, গুজরাত তামিলনাড়ু, বেঙ্গালুরু। ২০১১ সালের পর হলদিয়ার ছোট বড় অনেক কল কারখানা বন্ধ। নতুন কারখানা আসছেনা আর যেটুকু কারখানা আছে সেখানে নেতা না ধরলে কাজ নেই। গত ১২ বছর ধরে দেখছি শাসক দল নতুন একটাও কারখানা আনতে পারেনি।" নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সুতাহাটার এক শ্রমিক বলেন,"এখন যিনি বিজেপি নেতা তখন তিনি রাজ্যের মন্ত্রী, হলদিয়ার দায়িত্বে ছিলেন। কিচ্ছু করেননি।

২০১৩ সালে তৃণমূলের ভরা বাজারেও সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে সিপিএম। পঞ্চায়েত সমিতির ১৬টি আসনের ১৫টি-ই দখল করে তারা। ৬ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪টি-ই ছিল সিপিএমের দখলে, জেলা পরিষদে দুইয়ে দুই! কিন্তু ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সুতাহাটা বিরোধী শূন্য। কিন্তু তাতে অস্বস্তি বেড়েছে শাসকের। গুয়াবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী তৃণমূল প্রধান, বর্তমান প্রার্থী শেখ সাবিরুদ্দিন বলেন," শুভেন্দু অধিকারী তখন হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান। ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনে এসে বলেছিলেন, বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত গড়লে হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির থেকে ৫ কোটি টাকা দেওয়া হবে উন্নয়নের জন্য কিন্তু একটা টাকা মেলেনি। মানুষের মনে, কর্মীদের মনে সেই নিয়ে ক্ষোভ ছিল তবে মানুষ এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ চেয়ে সে সব ভুলে আমাদের ভোট দেবে।"

যদিও তৃণমূলের এক নেতা স্বীকার করে নিয়েছেন, " ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত সমিতি হাতছাড়া হওয়ার পর তৎকালীন নেতাদের প্রতিহিংসা মুলক আচরণে হলদিয়ার বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত বেশ কিছু মানুষকে ছাঁটাই করা হয়। এর ফলে ২০১৬ সালে বিধানসভায় সুতাহাটায় আমাদের ফল খারাপ হয়। ২০১৮ তে যেমন তেমন করে পঞ্চায়েত দখল করলেও ২০২১ বিধানসভায় আবারও ফল খারাপ হয়। ২০২৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনেও খুব ভাল কিছু হবে বলে মনে করছি না। অন্ততঃ ২০১৮ সালের থেকে ফল খারাপ হবে। হলদিয়ায় কাজ না পাওয়াটা একটা বিষয়। বিশেষ করেযুব সমাজের মধ্যে।"

এলাকায় তৃণমূলের চেয়েও খারাপ অবস্থায় বিজেপি। বিজেপির পুরানো কর্মীদের দাবি, সিপিএম থেকে আসা নব্য বিজেপি আর তৃণমূলের 'দাদার অনুগামীরা'ই দল চালাচ্ছে। বিজেপির এক পুরানো নেতা বলেন, "কর্মীরা কাজে উৎসাহ পাচ্ছেন না। বিধায়ক হওয়ার পর সিপিএম থেকে আসা তাপসী মণ্ডল কিংবা শ্যামল মাইতিরা দলের নেতা। কিন্তু অভিযোগ, এলাকায় তাঁদের দেখা মেলে না। তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ 'দাদার অনুগামী' খ্যাত আনন্দময় অধিকারী এবার বিজেপি থেকে জেলা পরিষদের প্রার্থী। দলটা চালাচ্ছে এরাই, প্রার্থীও নির্বাচন করেছে এরাই। ফলে আমাদের কাজ করার আগ্রহ নেই।"

তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে সিপিএম। ১০০ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিয়ে লড়াই করছে তারা। তৃণমূল আর বিজেপিকে সমান ভাবে দুষে প্রচার চালাচ্ছেন কর্মীরা। ১০০দিনের কাজ নিয়ে যখন তৃনমূল বিজেপি পরস্পরকে আক্রমণ করছে তখন সিপিএমের প্রশ্ন, যে সমস্ত পঞ্চায়েত ১০০দিনের কাজে দুর্নীতি করেছে তাদের জেলে না ভরে সাধারণ মানুষের ভাত কাড়ছে কেন কেন্দ্র? সিপিএমের সুতাহাটা এরিয়া কমিটির সম্পাদক অশোক পাত্র বলেন, "যারা বলছিলেন রামের হাত ধরে তৃনমূলকে তাড়াবেন জোর ধাক্কা খেয়েছেন তারা। তারা দেখছেন হলদিয়ায় শিল্প ধ্বংসের তৃনমূল নায়ক এখন রামের ঘরেই বসে রয়েছেন। মোহ ভাঙছে মানুষের রাম ছেড়ে তাই বামে ফিরছেন মানুষ। ২০১৩ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটবে ২০২৩ সালে। "

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPM Sutahata

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy