Advertisement
E-Paper

৩ মাস পরে গ্রামে ‘ডাইন’

ডাইন অপবাদে গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল গ্রামেরই ‘মুখ্যা’ (মাতব্বর)-কে। তারপর তিন মাস সপরিবার শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাথরা অঞ্চলের খালডাঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা সাবে হাঁসদা।

সৌমেশ্বর মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১০

ডাইন অপবাদে গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল গ্রামেরই ‘মুখ্যা’ (মাতব্বর)-কে। তারপর তিন মাস সপরিবার শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাথরা অঞ্চলের খালডাঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা সাবে হাঁসদা। পৌষ সংক্রান্তিতে আদিবাসীদের শাঁকরাত পরব। তার আগে বাড়ি ফেরার জন্য বারবার পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। শেষমেশ মঙ্গলবার আদিবাসী সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহল’-এর উদ্যোগে দুই ছেলে ও বৌমাকে গ্রামে ফিরলেন সাবে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, গত বছর নানা কারণে খালডাঙ্গি গ্রামে পর পর কয়েকজনের মৃত্যু হয়। আদিবাসী এই গ্রামের বাসিন্দারা তখন গুণিনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। গুণিনই নিদান হেঁকেছিল, গ্রামের মুখ্যা সাবে হাঁসদাই ডাইন। তাঁর কু-প্রভাবেই পরপর লোকজন মরছে। অভিযোগ, গত ২১ শে সেপ্টেম্বর সালিশি সভা ডেকে সাবেকে নিগ্রহও করা হয়। সাবে বলছিলেন, ‘‘সালিশি সভায় আমাকে ডাইন ঠাওরে গ্রাম ছাড়তে বলা হয়েছিল। ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। জোটে মারধর।’’

ওই দিন খবর পেয়ে পুলিশ বাঁচিয়েছিল সাবেকে। কিন্তু ভয়ে আর গ্রামে থাকতে পারেননি তিনি। দুই ছেলে আর এক বৌমাকে নিয়ে উঠেছিলেন শিরোমণি এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে। সাবের ছোট ছেলে মঙ্গল এ দিন বলেন, ‘‘গত অক্টোবরে পুলিশি পাহারায় ধান কাটা হলেও ধান ঝাড়তে পারিনি। গ্রাম থেকে চলে আসতে হয়েছিল। বাড়িতে মা পুটকি হাঁসদা একা থাকতেন। তাঁর উপর নির্যাতন চলত।’’ বিডিও, মহকুমাশাসক, জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানিয়েও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ।

‘ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহল’-এর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নেতা রবিন টুডু মানছেন, ‘‘আমাদের সমাজের অনেকে এখনও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। পুলিশ এঁদের গ্রামে ফেরার ব্যবস্থা করেনি। তাই আমরাই ঝুঁকি নিয়ে এঁদের গ্রামে ফেরালাম।’’ তবে এরপর সাবে হাঁসদার পরিবার গ্রামে নির্বিঘ্নে থাকতে পারবে কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আদিবাসী এই গ্রামের মাহালদার ধীরেন হাঁসদা থেকে গ্রামের বাসিন্দা সদর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা সুন্দরী হাঁসদা, সকলেই বলছেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে এঁদের গ্রামে ফেরালেই ভাল হত।’’

সব শুনে মেদিনীপুর সদর ব্লকের বিডিও ঋত্বিক হাজরা বলেন, ‘‘ওই পরিবার গ্রামে ফিরছে বলে আমাদের কেউ জানায়নি। তবে দু’-তিন দিনের মধ্যেই গ্রামে গিয়ে সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসব। সচেতনতা শিবিরও করব।’’

Witch
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy