Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Sanitary Napkin

কাপড় নয়, স্যানিটারি ন্যাপকিনেই স্বচ্ছন্দ আনারপুর

স্থানীয় স্কুল ছাত্রী পারমিতা বেরা এ দিন বলেন, ‘‘ঋতুচক্রের সময় কাপড় ব্যবহার করা খুব সমস্যার। সাবান দিয়ে ধুয়ে শুকনো করা খুব ঝামেলার কাজ। সেটা স্বাস্থ্যসম্মতও নয়। তাই স্যানিটিরি ন্যাপকিনকে বেছে নিয়েছি।’’

গ্রামের মহিলাদের হাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন তুলে দিচ্ছেন জেলাশাসক রশ্মি কমল।

গ্রামের মহিলাদের হাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন তুলে দিচ্ছেন জেলাশাসক রশ্মি কমল।

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৮ ০২:২৬
Share: Save:

গ্রামে ঢোকার মুখেই পান-চায়ের দোকান। সেখানে সাইনবোর্ডে লেখা, ‘এখানে সুলভে স্যানিটারি ন্যাপকিন পাওয়া যায়’।

হলদিয়া শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে সুতাহাটা ব্লকের আনারপুর গ্রাম। ওই গ্রামে গেলে একাধিক পান-চায়ের দোকানেই পান-চা-বিস্কুট ছাড়াও দেখতে পাওয়া যাবে স্যানিটারি ন্যাপকিন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন। সোমবার আনারপুরেই পালিত হল বিশ্ব ঋতুকালীন সুরক্ষা দিবস। গত এক বছরে আনারপুর-সহ সুতাহাটা ব্লকের চারটি গ্রামের প্রায় ১০০ শতাংশ মহিলাই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার শুরু করেছেন বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রশাসনের। আর তাঁদের ওই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাতেই এ দিন প্রত্যন্ত গ্রামটিতে গিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল।

কাপড়ের বদলে মহিলারা যাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন, সে নিয়ে গ্রাম গ্রামে চলছে প্রশাসনিক স্তরে প্রচার। গত বছর আনারপুর গ্রামেই বিশ্ব টয়লেট দিবসে একটি আলোচনা সভা থেকে সূচনা হয়েছিল ওই প্রচারের। সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন লোক শিক্ষা পরিষদ এবং স্থানীয় কয়েকটি ক্লাব। আর এতেই মিলেছে সাফল্য। আনারপুর-সহ সাহাপুর, মথুরাপুর এবং হিয়াতপুর গ্রামের মহিলারা সকলেই ন্যাপকিন ব্যবহার করা শুরু করেছেন।

ওই গ্রামের মহিলারা বর্তমানে ঋতুস্রাব নিয়ে অকপটেই আলোচনা করতে পারেন। স্থানীয় স্কুল ছাত্রী পারমিতা বেরা এ দিন বলেন, ‘‘ঋতুচক্রের সময় কাপড় ব্যবহার করা খুব সমস্যার। সাবান দিয়ে ধুয়ে শুকনো করা খুব ঝামেলার কাজ। সেটা স্বাস্থ্যসম্মতও নয়। তাই স্যানিটিরি ন্যাপকিনকে বেছে নিয়েছি।’’ আর হাতের কাছে চায়ের দোকানেই সেই ন্যাপকিন মেলায় খুশি মহিলারা। জড়তা ছাড়াই তাঁরা দোকান থেকে ন্যাপকিন কিনেছেন।

এই বিষয়টিকেই ‘বিপ্লব’ বল মনে করছেন জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা। সেই কারণেই আনারপুরে পালিত হয়েছে বিশ্ব ঋতুকালীন সুরক্ষা দিবস। অন্য গ্রামের কাছে আনারপুরকেই মডেল করতে চান তাঁরা।

এ দিন জেলা শাসক ছাড়াও অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল, সিএমওএইচ নিতাই মণ্ডল এবং মিশন নির্মল বাংলার আধিকারিকরা। ব্যবহৃত ন্যাপকিন নষ্ট করার জন্য এ দিন জেলাশাসক গ্রামের মধ্যে একটি দাহন যন্ত্রের উদ্বোধন করেন। সেখানে ন্যাপকিন ফেললেই তা পুড়ে ছাই হবে।

এ দিন ‘মিশন নির্মল বাংলা’ বিভাগের উদ্যোগে ‘ঋতুকালীন বান্ধবী দোলনদি’ নামে একটি কমিকসের উদ্বোধন হয়। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিটি স্কুলের ‘কন্যাশ্রী’ ক্লাবের মাধ্যমেই ওই কমিকস দেওয়া হবে। তাতে থাকবে ঋতুচক্র সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর।

গ্রামের মহিলাদের উদ্দেশে জেলাশাসকের এ দিন মন্তব্য, ‘‘স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে আবেদন করুন, আমরা ন্যাপকিন তৈরির জন্য অর্থ, পরিকাঠামো ও প্রযুক্তি সবই দেব।’’ একাধিক গ্রামবাসীর হাতে জেলাশাসক এ দিন মহিলার হাতে স্যানিটারি ন্যাপকিনও তুলে দেন। আর কালো প্লাস্টিক বা কাগজে লুকোনোর বদলে তা হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন মহিলারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sanitary Napkin Revolution Haldia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE