ছোটরা আর বই পড়ে না। বড়দের ফুরসত কই? তাই একে একে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রন্থাগার। পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেও সেই ছবিট খুব একটা আলাদা নয়।
জেলা গ্রন্থাগার দফতর সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুরে ১টি জেলা গ্রন্থাগার, ১০টি শহর গ্রন্থাগার ও ১১০ টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার রয়েছে৷ কিন্তু কোথাও পর্যাপ্ত কর্মী নেই। স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাহত হচ্ছে গ্রন্থাগার পরিষেবা৷ কর্মীর অভাব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রতিদিন নিয়ম করে দরজাই খোলা যায় না বেশিরভাগ গ্রন্থাগারের। জেলা সদর তমলুকে রয়েছে জেলা গ্রন্থাগার। সেখানে ১০ জন গ্রন্থাগারিকের পদ অনুমোদিত। কিন্তু রয়েছেন ‘একা কুম্ভ’ গ্রন্থাগারিক বিদ্যাধর মুদলি, আর আছেন একজন লাইট গার্ড। বাকি সব পদই শূন্য৷ বহু গবেষক জেলার অনেক দুষ্প্রাপ্য বই ও পত্র-পত্রিকার সন্ধানে এখানে আসেন। কিন্তু পরিষেবা পান না বলে অভিযোগ।
শহর গ্রন্থাগারগুলির অবস্থা যে কোনও অংশেই ভাল নয়, তা বলাই যায়। জেলার ১০ টি শহর গ্রন্থাগারের জন্য ৪০ জন গ্রন্থাগারিকের পদ অনুমোদিত। সেখানে আছেন ১১জন। ২৯টি পদই শূন্য৷ ১১০টি গ্রামীণ গ্রন্থাগারের অনুমোদিত ২২০ পদের ১৪১টি পদ শূন্য৷ সব মিলিয়ে জেলার মোট ২৭০ টি অনুমোদিত পদের ১৭৪টি পদই শূন্য৷
সমস্যা হল প্রতি মাসেই এই শূন্য পদের সংখ্যা বাড়ছে৷ সেখানে আর নতুন নিয়োগ হচ্ছে না। স্বাভাবিক ভাবেই একে একে বন্ধ হচ্ছে গ্রন্থাগার। ২০১০ সালে বন্ধ হয়ে যায় কাঁথির যুগচেতনা গ্রন্থাগার৷ ২০১১ সাল থেকে বন্ধ নন্দীগ্রামের মনুচক মিলন সংসদ গ্রামীণ পাঠাগার৷ ২০১২ সাল থেকে তমলুকের ডালপাড়া গ্রন্থাগার বন্ধ৷ গোটা জেলায় মোট ১২ টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার একেবারেই বন্ধ৷ ২৫ টি গ্রন্থাগারের অবস্থা খুবই খারাপ৷ সেগুলি রোজ খোলাই হয় না। সপ্তাহে একদিন বা দু’দিন খোলা হয়। যেমন নন্দীগ্রামের বিধান স্মৃতি সঙ্ঘ সিদ্ধনাথ পাঠাগার খোলা হয় শুধু বৃহস্পতিবার।
গ্রন্থাগারিক নিয়োগের বিষয়ে জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক ইন্দ্রজিৎ পান বলেন, ‘‘গ্রন্থাগারে কর্মী নিয়োগ করা রাজ্য গ্রন্থাগার দফতরের কাজ৷ সে বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোও হয়েছে৷ এর বেশি কিছু বলতে পারব না৷’’ গ্রন্থাগারে কর্মী সঙ্কট অবশ্য নতুন কোনও বিষয় নয়। বাম আমল থেকেই রোগাক্রান্ত গ্রন্থাগারগুলি৷ শেষের দিকে বিদ্যালয়গুলিতে গ্রন্থাগারিক নেওয়া শুরু হয়েছিল এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে৷ ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের সমস্ত গ্রন্থাগার ঢেলে সাজা হবে। নতুন করে নিয়োগ করা হবে শূন্য গ্রন্থাগারিক পদগুলিতে।
গ্রন্থাগার দফতরের এক কর্মী বললেন, ‘‘কর্মী নিয়োগের বিপুল সম্ভাবনায় জেলার হাজার হাজার বেকার যুবক বিএলআইএসসি (ব্যাচেলর অফ লাইব্রেরি এ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স) পড়তে শুরু করেছিলেন। কিন্তু কিছুই লাভ হয়নি।’’ কলকাতা, যাদবপুর, বিদ্যাসাগর-সহ সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়েই গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের ডিগ্রি কোর্স করানো হয়। সকলে সেখানে পড়তে পারেন না। তাই মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজ্যের বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করে নিয়েছেন অনেকে। নন্দীগ্রামের অনিমেষ বেরাও তেমনই ভিন রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে ফেলেছিলেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজিতে স্নাতকোত্তর করার পরও চাকরি পাইনি। গ্রন্থাগারের সম্ভাবনার কথা শুনে বিএলআইএসসি ডিগ্রি করেছিলাম। পরে দেখলাম আমার বন্ধুরাও অনেকেই এই ডিগ্রি করে ফেলেছেন। কিন্তু লাভ হল না কিছুই। এর পর আর চাকরির পরীক্ষায় বসার বয়স থাকবে না।’’
এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে আগামী এক বছরের মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ‘ইনফো লাইব্রেরি’ চালু করবে রাজ্য সরকার। বিশেষত গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলিতে চালু হবে এই পদ্ধতি। যেখানে বইপত্র আর তেমন রাখা হবে না। থাকবে ব্রডব্যান্ড সার্ভিস। কম্পিউটারে বসেই পড়াশোনা চালাবেন ছাত্রছাত্রীরা। চাকরির বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া যাবে এর মাধ্যমে। শহরের পড়ুয়ারা বা়ড়িতেই ইন্টারনেট পরিষেবা নিতে পারেন। কিন্তু গ্রামের ছেলেমেয়েদের সে সুযোগ কম। সে জন্যই গ্রন্থাগারগুলিকে বেছে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এক আধিকারিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy