চলন্ত গাড়ির মধ্যে এক মহিলার গায়ে অ্যাসিড ঢেলে ও শ্বাসরোধ করে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল দুই ব্যক্তির। মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক কুমকুম সিংহ দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বাসিন্দা মনিরুল মোল্লা ও জিয়ারুল মোল্লাকে এই শাস্তির আদেশ দেন।
জেলা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়ার সাঁকরাইল থানার জঙ্গলপুরের বাসিন্দা গৃহবধূ বিজলি মালিক বছর তিনেক ধরে বাপের বাড়ি কলকাতার ধাপা এলাকার দুর্গাপুরে থাকতেন। কাঠের আসাবাবপত্রের ব্যবসার সূত্রে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কাশীপুর থানার কাঁঠালিয়া গ্রামের মনিরুল মোল্লা ওই এলাকায় যাতায়াত ছিল। অভিযোগ, সেই সূত্রে মনিরুলের সঙ্গে বিজলিদেবীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু বিজলিদেবীর সঙ্গে অন্য এক ব্যক্তির সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সন্দেহে মনিরুল তাঁকে খুনের ছক কষে। মনিরুল বিজলিদেবীকে দিঘায় বেড়াতে যাওয়ার লোভ দেখায়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১১ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধ্যা নাগাদ একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে মনিরুল ও তাঁর ব্যবসার কর্মী জিয়ারুলকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির কাছে গাড়িতে ওঠে। এরপর মনিরুল দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ঘাটপুকুরের কাছে অপেক্ষারত বিজলিদেবীকে নিজেদের গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়িতে মাঝের আসনে মনিরুলের পাশে বসেছিল বিজলিদেবী। আর চালক সঞ্জয় মণ্ডলের পাশের আসনে বসেছিল জিয়ারুল। দিঘার দিকে যাওয়ার জন্য ৪১ নম্বর জাতীয় ধরে যাওয়ার পথে চলন্ত গাড়ির মধ্যে মনিরুল বিজলির মাথায় অ্যাসিড ঢেলে দেয়। গাড়ির মধ্যে প্রচণ্ড ধোঁয়ার হলে গাড়ির চালক সঞ্জয় মণ্ডল পিছনে ফিরে দেখেন, বিজলিকে গলায় ফাঁস দিয়ে মারার চেষ্টা হচ্ছে। অভিযোগ, সেই সময় সঞ্জয় চিৎকারের চেষ্টা করলে তাঁর পাশে বসে থাকা জিয়ারুল একটি বন্দুক বের করে সঞ্জয়ের মাথায় ঠেকিয়ে জোরে গাড়ি চালাতে বলে। এরপরেই চালক ওই গাড়টি নিয়ে হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়কে নন্দকুমারের শ্রীধরপুর চৌরাস্তার কাছে গোলাকার আইল্যান্ড থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে ফের কোলাঘাটের দিকে চলে আসে। কিন্তু মনিরুল ও জিয়ারুল তা বুঝতে পারেনি।
একসময় সঞ্জয় কোলাঘাটের হলদিয়া মোড়ের কাছে এসে একটি হোটেলের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করে। চিৎকার শুনে হোটেলের লোকজন ছুটে আসে। কিন্তু ততক্ষণে মনিরুল ও জিয়ারুল গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায়। পুলিশ গিয়ে বিজলিদেবীর দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের পাঠায়। পুলিশ গাড়ির চালকের অভিযোগের ভিত্তিতে মনিরুল ও জিয়ারুলের বিরুদ্ধে খুন ও বেআইনিভাবে অস্ত্র রাখার অভিযোগে মামলা করে। বিচারক ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত জিয়ারুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এছাড়া বেআইনি অস্ত্র রাখার দায়ের ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।