ঝাড়গ্রাম প্রকৃতি পর্যটনকেন্দ্রের সামনে তৈরি হচ্ছে হাতির মডেল। বাঁদরভুলায় ছবি তুলেছেন দেবরাজ ঘোষ।
জঙ্গলের মাঝে রাত্রিযাপন, অথচ বন্যপ্রাণী দেখতে পাবেন না! দুধের স্বাদ ঘোলে মিটলে ক্ষতি কী! ঝাড়গ্রামের প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রে আসা পর্যটকদের সেই অভাব মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের বন উন্নয়ন নিগম। এই অরণ্য শহরের উপকন্ঠে বাঁদরভুলা জঙ্গলের মাঝে ওই কেন্দ্রে পর্যটকদের জন্য প্রতি দিন সন্ধেয় বন্যপ্রাণের উপর একটি ভিডিও শো দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম মহকুমা প্রশাসনের সহযোগিতায় কেন্দ্রটির আশেপাশের এলাকা সাজানোরও কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আর কিছু দিনের মধ্যেই পর্যটকদের অর্ভ্যথনা জানাবে দুই শাবক সমেত চারটি হাতি। থাকবে ছুটন্ত হরিণের পালও। তবে এগুলি জ্যান্ত নয়। ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট শিল্পী অলোক মিশ্র’র পরিকল্পনায় সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে হাতি-হরিণের মডেলগুলি। যা দেখলে নকল বোঝে কার সাধ্যি! এ সব দেখে শুনে ওই কেন্দ্রে আসা কলকাতার সুনন্দা বন্দ্যোপাধ্যায়, সলিল রায়, প্রিয়ম রাজের মতো পর্যটকও বেজায় খুশ্!
বন উন্নয়ন নিগম সূত্রের খবর, শীতের মরসুমে ঝাড়গ্রামে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। বাঁদরভুলার জঙ্গলের গভীরে বছরের বিভিন্ন সময়েই তিন চারটি স্থানীয় হাতি ঘুরে বেড়ায়। কখনও সখনও হাতিরা শহরের উপকন্ঠে লোকালয়েও ঢুকে পড়ে। সেই কারণে এই প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রের পিছনদিকে তারের বেড়া দেওয়া আছে। যাতে চট করে হাতিরা সেখানে ঢুকে পড়তে না পারে। রাতে জঙ্গলের দিকে মুখ করে জোরালো আলো জ্বেলে রাখা হয়। প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রের প্রতিটি ঘরের পিছনে লাগোয়া গ্রিল ঘেরা নিরাপদ-বারন্দাও রয়েছে জঙ্গল দেখার জন্য। কিন্তু সেখানে বসে বন্যপ্রাণী দেখার সৌভাগ্য কদাচিত্ হয়। বন উন্নয়ন নিগমের ডিভিশনাল ম্যানেজার (মেদিনীপুর) অংশুমান মুখোপাধ্যায় বলেন, “জঙ্গলে থাকার আমেজ যাতে পর্যটকেরা পুরোপুরি পেতে পারেন, তার জন্যই ভিডিও শো’য়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওখানে রিসেপশন লাগোয়া হল ঘরে বসে পর্যটকেরা রাজ্যের বিভিন্ন বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণীদের উপর তথ্যচিত্র দেখতে পারবেন। এছাড়া পর্যটকদের সুবিধার জন্য ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গাগুলি সম্পর্কে একটি মুদ্রিত তথ্য-তালিকাও প্রতিটি ঘরে রাখা হয়েছে। অতিথি নিবাসের সব ক’টি ঘরে ইন্টারকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জঙ্গলের আমেজ তৈরির জন্য মহকুমা প্রশাসনের সহযোগিতায় হাতি ও হরিণের মডেল তৈরির কাজ চলছে।”
প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রের ইনচার্জ সন্দীপ কুণ্ডু এই প্রসঙ্গে বলেন, “প্রতি দিনই পর্যটকেরা আসছেন। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের জন্য উল্লেখযোগ্য ভাবে অগ্রিম বুকিং হয়েছে।”
ঝাড়গ্রাম শহরের খুব কাছেই এই বাঁদরভুলা জঙ্গলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রটি গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জঙ্গলের মধ্যে তিনটি কটেজে রয়েছে। এ ছাড়া ৬টি বিলাসবহুল ঘর। প্রতি ঘরে দু’জন করে মোট ১২ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বুকিং হয় অন লাইনে। তবে সম্প্রতি স্পট বুকিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তবে ঘর ফাঁকা না থাকলে অবশ্য স্পট বুকিং পাওয়া যায় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy