Advertisement
E-Paper

আন্তরিকতাই প্রাণ আবাসনের পুজোয়

সারাবছরের একঘেয়েমি কাটিয়ে কয়েকটা দিন একটু স্বস্তি। পরিবারের সকলের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা। আর প্রাণ ঢালা উচ্ছ্বাস। দুর্গাপুজোর স্মৃতি তাই বড়ই মধুর। সেই স্মৃতিকে উজ্জ্বল করে ধরে রাখা নয়, সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েই আবাসনেও দুর্গাপুজোর প্রচলন করলেন বাসিন্দারা। এই কারণেই মেদিনীপুর-খড়্গপুরের মতো মফস্সল শহরের আবাসনগুলিতেও দুর্গা পুজোর চল বাড়ছে।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২৭
মেদিনীপুরে কেরানিতলার একটি আবাসনের প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।

মেদিনীপুরে কেরানিতলার একটি আবাসনের প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।

সারাবছরের একঘেয়েমি কাটিয়ে কয়েকটা দিন একটু স্বস্তি। পরিবারের সকলের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা। আর প্রাণ ঢালা উচ্ছ্বাস। দুর্গাপুজোর স্মৃতি তাই বড়ই মধুর। সেই স্মৃতিকে উজ্জ্বল করে ধরে রাখা নয়, সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েই আবাসনেও দুর্গাপুজোর প্রচলন করলেন বাসিন্দারা। এই কারণেই মেদিনীপুর-খড়্গপুরের মতো মফস্সল শহরের আবাসনগুলিতেও দুর্গা পুজোর চল বাড়ছে।

গ্রাম থেকে শহরে এলে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই চাই। জমি কিনে বাড়ি করার ঝক্কি কেউ বড় একটা নিতে চান না। তাই বাড়ছে আবাসনের চাহিদা। চাহিদা মতো শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে আবাসনও। চারিদিকে যখন কাশ ফুলের দোল, আগমনীর সুর, সেখানে আবাসনই বা কেন বাদ যাবে। আবাসনেও অবাধে ঢুকে পড়ছে শরতের বাতাস। সেই আনন্দকে উপভোগ করতেই শুরু পুজোরও।

এক একটি আবাসনে ৪০-৫০ বা তারও বেশি পরিবার থাকেন। মেয়েরা অঞ্জলি দিতে যাবেন কোথায়, বাড়ির বাচ্চারাই বা কোথায় হইহুল্লোড় করবে। যে যার মতো আলাদা ভাবে বৌ-বাচ্চার হাতে ধরে প্যান্ডেলে ঘুরে কতটাই বা আনন্দ পাওয়া যাবে! আগে গ্রামে পুজো মানেই বাড়িতে মাসি, পিসি- কত আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশি সকলে মিলে একাকার হত। সে আনন্দে বাদ পড়ত না কেউ। আবাসনেও একই রকম আনন্দ করার চিন্তাভাবনা থেকেই পুজোর আয়োজন। এখানে পুজোয় জাঁকজমক কম। কিন্তু আনন্দ সীমাহীন।

পুজোর ক’দিন বাড়িতে রান্না বন্ধ। সকলে দল বেঁধে এক সঙ্গে খাওয়া। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কেউ গান, কেউ আবৃত্তি, আবার কেউ বা নাচ করছেন। যিনি যন্ত্রসঙ্গীতে দক্ষ তিনি তা নিয়ে বসে যাচ্ছেন। যিনি যন্ত্রসঙ্গীতে দক্ষ, তিনি তা নিয়ে বসে যাচ্ছেন। দল বেঁধে সকলেই শ্রোতা। মেয়েদের রান্নার ঝক্কি নেই, কর্তার বাজারে যাওয়ার তাড়া নেই, ছেলের স্কুল বা পড়া নেই। সারাদিন নিখাদ আড্ডা ও মজা। খড়্গপুরের সাউথ ইন্দার ডায়মন্ড ভিলা আবাসনে পুজোর ক’টা দিন তো বাড়ির মেয়েদের চা পর্যন্ত বানাতে হয় না। ঘুম থেকে উঠে চোখ রগড়াতে রগড়াতে প্যাণ্ডেলে গেলেই হল। সঙ্গে সঙ্গে চা হাজির। কিছুক্ষণ পরই টিফিন। সকালের চা থেকে রাতের খাবার- সবাই এক সঙ্গে খাওয়া। যেন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষজন এক পরিবারের। আবাসনটিকে আলো দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়েও তোলা হয় পুজোয়। আবাসনের বাসিন্দা অভিজিৎ ভুঁইয়ার কথায়, “কাজের চাপে সারা বছর কে কোথায় থাকি তার তো ঠিক নেই। বাড়িতেও যেমন হয়। পুজো মানেই বাইরে থাকা মেয়ে ছেলে হাজির হয়। তেমনি আমরাও পুজোর ক’দিন এক পরিবারের মতো কাটাতেই পুজো চালু করেছিলাম তিন বছর আগে।” মেদিনীপুর শহরের সুখবিলাস অ্যাপার্টমেন্টে অবশ্য শুধু দুপুরের খাবার এক সঙ্গে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। তারই সঙ্গে ষষ্ঠীতে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। আবাসনের বাসিন্দা ফাল্গুনি শতপথীর কথায়, “পাশাপাশি থেকেও ক’দিনই বা সকলের সঙ্গে দেখা হয়। ব্যস্ততার চাপে সকলে নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন সারা বছর। তাই পুজোর ক’টা দিন, সকলে এক সঙ্গে মিলেমিশে কাটাতেই পুজোর আয়োজন।”

এখনও যে সব আবাসনে পুজো চালু হয়েছে এমন নয়। নতুন গড়ে ওঠা আবাসনের সদস্যরা এখনও সকলের সঙ্গে পরিচিতই হয়ে উঠতে পারেননি। কিভাবে পুজো, খাওয়া-দাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মতো গুরুদায়িত্ব নেবেন। যেমন অলিগঞ্জের মহুল অ্যাপার্টমেন্টে কালীপুজো হয়। ওই সময় তিনদিন এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু এখনও দুর্গাপুজো শুরু হয়নি। আবাসনের বাসিন্দা শুধাংশু ঘোষের কথায়, “দুর্গাপুজো নিয়েও দু’একবার আলোচনা হয়েছিল। এখনও অবশ্য তাতে সফলতা মেলেনি। দেখা যাক, হয়তো কিছুদিনের মধ্যে সেটাও চালু হতে পারে। এত বড় পুজোয় সকলে এক পরিবার হয়ে কাটাতে কার না ভাল লাগে।”

suman ghosh mediipur pujo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy