Advertisement
E-Paper

আপন খেয়ালে জ্বলছে সিগন্যাল, বিভ্রান্তি

কখনও জ্বলছে লালবাতি, আবার কখনও সবুজ। সে সবের তোয়াক্কা না করেই ছুটে চলেছে শহরবাসী। বাঁশি হাতে নির্বাক দর্শকের মতোই এই দৃশ্য দেখছে ট্রাফিক পুলিশ। আর এ সবের মধ্যেই ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। রেলশহর খড়্গপুরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করেছিল পুরসভা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৭
ট্রাফিক সিগন্যাল না মেনেই চলছে যাতায়াত। ইন্দা মোড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

ট্রাফিক সিগন্যাল না মেনেই চলছে যাতায়াত। ইন্দা মোড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

কখনও জ্বলছে লালবাতি, আবার কখনও সবুজ। সে সবের তোয়াক্কা না করেই ছুটে চলেছে শহরবাসী। বাঁশি হাতে নির্বাক দর্শকের মতোই এই দৃশ্য দেখছে ট্রাফিক পুলিশ। আর এ সবের মধ্যেই ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা।

রেলশহর খড়্গপুরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করেছিল পুরসভা। কিন্তু তার হাল এখন এমনই। শহরের ইন্দা ও পুরাতনবাজার মোড়ে চালু হওয়া সিগন্যাল নিজের খেয়ালে জ্বলে-নেভে। তার কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। ফলে, পথ চলতে হামেশাই বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। শহরবাসী জানাচ্ছেন, কখনও সিগন্যালের লাল আলো দেখে অন্য শহর থেকে আসা গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়লেও পথচারীরা রাস্তা পারাপার করেন। অনেক সময় আবার ট্রাফিক সিগন্যালে সবুজ আলো জ্বললেও ট্রাফিক পুলিশ হাতের ইশারায় রাস্তা পার হতে বারণ করেন। এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে এক দিকে যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে শহরবাসীকে, দুর্ঘটনাও বাড়ছে।

কী বলছে পুলিশ? খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশকর্মীর অভাব রয়েছে। তবে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। কিন্তু এ জন্য প্রশিক্ষিত পুলিশকর্মী প্রয়োজন। তা পেলেই আমরা সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করব।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে তৃণমূল পুরসভার ক্ষমতায় আসার পরেই শহরের যান নিয়ন্ত্রণে সিগন্যাল ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়। পরে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবহণ দফতরের অর্থ বরাদ করলে পুরসভার সহযোগিতায় ১১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহরের ইন্দা মোড় ও পুরাতনবাজার মোড়ে চালু করা হয় স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল। সেটা ২০১১ সাল। তারপরে কেটে গিয়েছে প্রায় তিন বছর। চালু হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কার্যকর হয়নি এই ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে পুর-ক্ষমতার হাতবদল হয়। বোর্ড গড়ে কংগ্রেস। অভিযোগ, কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা ট্রাফিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু করেছিল। যদিও তদানীন্তন পুরপ্রধান তৃণমূলের জহরলাল পাল বলেন, “আমি পুরপ্রধান থাকাকালীন উদ্যোগী হয়ে কেন্দ্রীয় পরিবহণ দফতরে দরবার করে দু’টি সিগন্যাল গড়েছিলাম। তখন দু’টি সিগন্যাল জেলা পুলিশ সুপারকে হস্তান্তর করে দিয়েছিলাম। পুলিশের এগুলি কার্যকর করার বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া উচিত।”

জানা গিয়েছে, সেই সময় শহরের ঝাপেটাপুর, কৌশল্যা, বড়বাতি, অরোরা গেট, সাহাচক-সহ আরও ৯টি পয়েন্টে এই স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল চালু করার পরিকল্পনা ছিল। জহরবাবু বলেন, “প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই টাকা দিয়ে আমি শহরের মূল সড়কগুলিতে লোহার গার্ডওয়াল ও ওই ৯টি সিগন্যাল চালুর পরিকল্পনা করেছিলাম। তবে পরবর্তী পুরবোর্ড আর কিছু করেনি। পুলিশ-প্রশাসনেও দরবার করেনি।” যদিও বর্তমান পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডের দাবি, “এই ধরনের কোনও উদ্যোগ পুরসভা নিয়েছিল বলে আমরা বোর্ডে আসার পরে চোখে পড়েনি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে যদি আমাদের কাছে আরও সিগন্যাল প্রতিস্থাপনের জন্য বলে, আমরা রাজি আছি।”

বসতির বাড়ার রেলশহরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যান চলাচল। শহর ছাড়াও বাইরে থেকে আসা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকার দাবি উঠছে। এই অবস্থায় যে দু’টি সিগন্যাল রয়েছে, তা-ও যথাযথ ভাবে চালু না করায় ক্ষোভ বাড়ছে শহরবাসীর। অনেকেই বলছেন, সিগন্যাল পোস্ট থাকলেও তাতে পুলিশি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বিভ্রান্তি বাড়ছে। ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। দিন পনেরোর ব্যবধানে শুধু ইন্দা মোড়েই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। গত ২৩ নভেম্বর ট্রাফিকের এক যুবক মেদিনীপুর থেকে ফেরার পথে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান। ১০ নভেম্বর ডেবরার বাড়িতে ফেরার পথে ইন্দা মোড়ে ট্রাকের ধাক্কায় মারা যান এক ব্যক্তি। ইন্দার বাসিন্দা সুপ্রিয় ঘোষ বলেন, “কেন এই সিগন্যাল চালু হয়েছিল সেটাই আমাদের প্রশ্ন! কোনও দিনই পুলিশ এর নিয়ন্ত্রণ করেনি। ইন্দা মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশও সক্রিয় নয়।”

এই পরিস্থিতিতে একাংশ শহরবাসীর প্রস্তাব, সিগন্যাল ব্যবস্থা যথাযথ ভাবে চালু করে লেনের ডিভাইডার গড়ে তুললে দুর্ঘটনা অনেকটাই আটকানো যাবে। শহরের পুরাতনবাজারের বাসিন্দা রেলকর্মী কৃশানু আচার্য মনে করেন, এই সিগন্যাল কার্যকর না হওয়ায় সরকারি টাকার অপচয় হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের সক্রিয়তা দাবি করছেন সকলেই।

kharagpur traffic signal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy