Advertisement
E-Paper

উন্নয়নের প্রশ্নেই তৃণমূলকে বিঁধছে কংগ্রেস

জঙ্গলমহলে শাসক দলকে অস্বস্তিতে ফেলতে উন্নয়ন সংক্রান্ত ‘হাতে গরম’ তথ্য নিয়ে প্রচার শুরু করেছে কংগ্রেস। আগামী সোমবার তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেনের সমর্থনে বেলপাহাড়িতে প্রচার সভা করতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের দেওয়া আগের প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন কংগ্রেস প্রার্থী অনিতা হাঁসদা। পাশাপাশি, উন্নয়নের হাল হকিকত নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে কংগ্রেস।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০১:৩৬

জঙ্গলমহলে শাসক দলকে অস্বস্তিতে ফেলতে উন্নয়ন সংক্রান্ত ‘হাতে গরম’ তথ্য নিয়ে প্রচার শুরু করেছে কংগ্রেস। আগামী সোমবার তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেনের সমর্থনে বেলপাহাড়িতে প্রচার সভা করতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের দেওয়া আগের প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন কংগ্রেস প্রার্থী অনিতা হাঁসদা। পাশাপাশি, উন্নয়নের হাল হকিকত নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে কংগ্রেস। শাসক দলের উপর চাপ বাড়াতে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের ক্ষমতাসীন পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলিতে উন্নয়ন সংক্রান্ত ডেপুটেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। বুধবার বেলপাহাড়িতে একটি ভিডিও হলে কর্মিসভা করেন তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেন। আর এদিনই তৃণমূলের ক্ষমতাসীন বেলপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে উন্নয়ন সংক্রান্ত ডেপুটেশন দেন কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

খোদ তৃণমূলের মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার বৌদি অনিতাদেবী এবার ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী। অনিতাদেবী দীর্ঘদিনের কংগ্রেস কর্মী। তৃণমূলের পক্ষে অস্বস্তিকর বিষয়গুলিকেই প্রচারে তুলে ধরছেন তিনি। জঙ্গলমহলে এখন কংগ্রেসের সংগঠন বেশ দুর্বল। তাই মন্ত্রী সুকমারবাবুর প্রয়াত জেঠতুতো দাদা মানব হাঁসদার স্ত্রী অনিতাদেবীকে প্রার্থী করে তৃণমূলকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলা গিয়েছে বলে ঘনিষ্ঠমহলে দাবি করছেন ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা।

ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নিখিল মাইতি বলেন, ‘‘বাম জমানায় জঙ্গলমহলে মাওবাদী-অশান্তি পর্বে ১১০ জন নিখোঁজ হয়েছিলেন। যাঁদের বেশির ভাগেরই এখনও কোনও খোঁজ মেলে নি। বিধানসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের নেতা-নেত্রীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাজ্যের ক্ষমতায় তৃণমূল এলে নিখোঁজদের সন্ধানে তৎপর হবেন তাঁরা। এ ছাড়া সিপিএমের চক্রান্তে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলাগুলি প্রত্যাহার করে নিরাপরাধ জেলবন্দিদের মুক্তি দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৃণমূল।

কিন্তু রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূল প্রতিশ্রুতি পালন করেনি।”

জঙ্গলমহলের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “বেলপাহাড়ি ব্লককে আমরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘মডেল’ হিসেবে প্রচারে আনছি। বিনপুর বিধানসভাটি সিপিএমের দখলে। রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। আগে বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতিটি সিপিএমের দখলে ছিল। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেলপাহাড়ি ব্লকের সব ক’টা গ্রাম পঞ্চায়েত এবং বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল করেছে তৃণমূল। কিন্তু উন্নয়নের প্রশ্নে সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে যে কোনও ফারাক নেই সেটাই আমাদের প্রার্থী প্রচারে তুলে ধরছেন।”

অনিতাদেবীর প্রশ্নও, “নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত করছে। তাহলে জঙ্গলমহলে যাঁরা নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁদের খুঁজতে রাজ্য সরকার কোনও তদন্ত করাচ্ছে না কেন? জঙ্গলমহলে বাম আমলে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলাগুলি প্রত্যাহার করে একজনকেও মুক্তি দেয় নি তৃণমূলের সরকার।” প্রচারে গিয়ে তথ্য উল্লেখ করে অনিতাদেবী জানাচ্ছেন, বেলপাহাড়ির ভেলাইডিহা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁশগড় গ্রামের একশোটি শবর পরিবার ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে কাজ পেয়েছিল ৬দিন। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছর এখন শেষের মুখে। চলতি আর্থিক বর্ষে বাঁশগড়ের উদয় শবর, তরুণ শবর, মহাদেব শবর, গোপাল শবর, জননী শবর, আদরমণি শবরেরা সেই ৬ দিনই কাজ পেয়েছেন। চলতি অর্থ বর্ষে বেলপাহাড়ি ব্লকে একশো দিনের প্রকল্পে ২৮ দিন কাজ পেয়েছেন বাসিন্দারা। অনিতাদেবীর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলে এসে বলে থাকেন, জঙ্গলমহলের মানুষ একশো দিন কাজ পেয়েছেন। কিন্তু গ্রাম ঘুরে তো অন্য ছবি দেখছি।”

অনিতাদেবীর প্রচার-ঝুলিতে আরও উদাহরণ রয়েছে। এখনও বেলপাহাড়ি-সহ জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে নি। অরণ্যের অধিকার আইনে বনভূমিতে বসবাসকারী অধিকাংশ পরিবারকে জমির পাট্টা দেওয়া হয় নি। বেলপাহাড়ি ব্লকে মোট আবেদনকারীর মধ্যে ৮৫শতাংশ আবেদনকারীকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা আদিবাসী নন বলে। প্রচারে গিয়ে অনিতাদেবী ওই আইনের ব্যাখ্যা করে পিড়রাগেড়ার বাসিন্দাদের জানাচ্ছেন আদিবাসীদের পাশাপাশি, বংশপরম্পরায় চিরাচরিত বনভূমিতে বসবাসকারীরাও পাট্টা পেতে পারেন।

বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি বংশীবদন মাহাতোর বক্তব্য, “আমরা উন্নয়ন করছি বলেই কংগ্রেস কুৎসা শুরু করেছে। এসব করেও ওরা সুবিধে করতে পারবে না।” তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “কংগ্রেসের কোনও সংগঠন নেই। এলাকায় বিরোধীদের কোনও জন সমর্থনও নেই। ওরা যাই বলুক, বিপুল ভোটে ‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রার্থী’ উমা সরেন জিতবেন।”

শেষ কথা অবশ্য বলবে ভোটের ফলই।

kingshuk gupta jangal mahal tmc congress loksabha election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy