জমি বিক্রির বকেয়া টাকা চাইতে যাওয়ায় মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণ-খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল মেদিনীপুর পুরসভার উপ-পুরপ্রধান তৃণমূলের জিতেন্দ্রনাথ দাসের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার তদন্ত ঢিমেতালে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল। পুলিশের তরফে তদন্ত বলতে এখনও পর্যন্ত মা ও মেয়ের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। আর তৃণমূলের পক্ষ থেকেও তদন্ত এগোয়নি। দলীয় তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিধায়ক মৃগেন মাইতি বাইরে থাকায় এ বিষয়ে আলোচনা করা যায়নি বলে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় জানিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে মা-মেয়ের। বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য এ বার আদালতে মামলা করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা। ওই মহিলা জানান, “কী ভাবে বকেয়া টাকা পেতে পারি ও হুমকির ঘটনায় অভিযুক্তের শাস্তি হয়, সে ব্যাপারে আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। কারণ, পুলিশ খুবই ঢিমেতালে তদন্ত করছে।” এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, “তদন্ত চলছে।”
মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লি এলাকায় তরুণীকে মেয়ে বসবাস করতেন। সেই বসতভিটে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হন তাঁরা। সলিল চৌধুরী নামে এক মধ্যস্থতাকারী বাড়ি বিক্রির ব্যবস্থা করে দেন। তাতে স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেদিনীপুর পুরসভার উপপুরপ্রধানও যুক্ত ছিলেন বলেন মহিলার দাবি। জমি রেজিস্ট্রিও হয়ে যায়। কিন্তু বকেয়া অর্ধেক টাকা দিতে চাননি মধ্যস্থতাকারী। উপ-পুরপ্রধানের কাছে বকেয়া টাকা চাইতে গেলে, সব টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে বলে তিনি জানিয়ে দেন। অভিযোগ, তখনই বিধবা মহিলার সামনেই তিনি হুমকি দেন, ফের টাকা চাইতে এলে মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করিয়ে দেবেন। প্রথমে কোতয়ালি থানা অভিযোগ নিতেও রাজি হয়নি। পরে বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে জানাজানি হয়ে যাওয়ায় পুলিশ ২৫ অগস্ট অভিযোগ নেয়। তারপর তদন্ত এগিয়েছে বলতে, ২৮ ও ২৯ অগস্ট- দু’দিনে মা ও মেয়ের বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দির ব্যবস্থা করেছে পুলিশ।
কোতয়ালি থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এর বেশি তদন্ত কিছুই এগোয়নি। অন্যদিকে এই ঘটনার পর সব বিরোধী দলই উপপুরপ্রধানের গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল। থানায় বিক্ষোভ থেকে উপপুরপ্রধানের কুশপুতুল পর্যন্ত পোড়ানো হয়। যদিও গ্রেফতার হওয়া দুরের কথা এখনও জিতেন্দ্রনাথবাবুকে পুলিশ একবারও জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করেনি বলে পুলিশ সূত্রেজানা গিয়েছে। অন্যদিকে দলের অন্দরেও উপপুরপ্রধান পদ থেকে অপসারনের দাবি উঠেছিল। বিভিন্ন কাউন্সিলর থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা দলের অন্দরে এ নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন। দলও বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিল। তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হলে ব্যবস্থা গ্রহনের কথাও জানিয়েছিল। তার জন্য দলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি সহ দলের জেলা নেতৃত্বকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একদিন তা নিয়ে বৈঠক হলেও তেমন কোনও আলোচনাই হয়নি। কারণ, সেদিন মৃগেনবাবু ছিলেন না। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “মৃগেনবাবু বাইরে থাকায় তদন্ত এগোয়নি। এবার তদন্ত শুরু হবে।”
দু’পক্ষের এই গা-ছাড়া ভাব থেকেই অবশ্য শরৎপল্লির ওই মা- মেয়ে থেকে শুরু করে বিরোধীরাও বুঝে গিয়েছেন, পুলিশের উপরতলার আধিকারিকদের সঙ্গে জিতেন্দ্রনাথবাবুর সুসম্পর্ক থাকায় পুলিশি তদন্ত যেমন এগোবে না, তেমনই দলীয় তদন্তেও কিছুই হবে না। সম্প্রতি তৃণমূলের মিছিলে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সঙ্গেও তাঁকে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল। এর পরই ওই মা-মেয়ের আশঙ্কা, সহজে তাঁরা বিচার পাবেন না। ফলে পুলিশের তদন্তের পাশাপাশি ওই মা-মেয়ে বাকি টাকা আদায়ের জন্য আরও একটি মামলা করার তোড়জোর শুরু করেছেন। শীঘ্রই মেদিনীপুর আদালতে মামলা করা হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
এ দিন বারবার চেষ্টা করেও অভিযুক্ত উপ-পুরপ্রধানের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। দিনভরই তাঁর মোবাইল ফোন বেজে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy