Advertisement
E-Paper

এই গরমেও এত ভিড়! ঘাটাল ঘুরে অভিভূত দেব

ভরা চৈত্রেও ঘাটালের পথঘাট থইথই। তবে আকাশভাঙা বৃষ্টিতে নয়, বাঁধভাঙা ভিড়ে। ভোটপ্রার্থী দেবের রোড শো ঘিরে শনিবার বিকেলে অত্যুৎসাহীদের উন্মাদনা এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে, ভিড় ঠেলে ২ কিলোমিটার পথ যেতেই লেগে গেল ঝাড়া দু’ঘণ্টা। পূর্বনির্দিষ্ট রুট অনেকটাই কাটছাঁট করা হল। তবু সন্ধে ঘনানোর আগে এই স্পেশ্যাল শো ভাঙল না!

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৪ ০২:৪৩
একটু ছোঁয়ার আর্তি। ঘাটালে ভিড়ে ঠাসা রোড শোয়ে দেব। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

একটু ছোঁয়ার আর্তি। ঘাটালে ভিড়ে ঠাসা রোড শোয়ে দেব। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

ভরা চৈত্রেও ঘাটালের পথঘাট থইথই। তবে আকাশভাঙা বৃষ্টিতে নয়, বাঁধভাঙা ভিড়ে। ভোটপ্রার্থী দেবের রোড শো ঘিরে শনিবার বিকেলে অত্যুৎসাহীদের উন্মাদনা এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে, ভিড় ঠেলে ২ কিলোমিটার পথ যেতেই লেগে গেল ঝাড়া দু’ঘণ্টা। পূর্বনির্দিষ্ট রুট অনেকটাই কাটছাঁট করা হল। তবু সন্ধে ঘনানোর আগে এই স্পেশ্যাল শো ভাঙল না!

আগাগোড়া ভক্তদের আবদার মেটালেন নায়ক। হাঁসফাঁস গরমের মধ্যেও হুডখোলা গাড়ি থেকে ক্রমাগত হাত নাড়লেন, করজোড়ে নমস্কার করলেন, গাড়ি থামিয়ে কথা বললেন। রোদের পরোয়া না করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা চেহারাগুলোর বাড়ানো হাত বারবার মুঠোয় ভরে নিতেও দেখা গেল তাঁকে। পর্দার পাগলুকে চোখের সামনে পেয়ে ঘাটালবাসীও উদ্বেল হলেন বারবার। রাস্তার দু’পাশের বাড়ি থেকে উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনির রোল উঠল। পুষ্পবৃষ্টিতে ঢেকে গেল দেবের গাড়ি। এ সবের মধ্যেই তৃণমূল প্রার্থী তারকার হাতে কেউ এক জন ধরিয়ে দিয়ে গেলেন লাল গোলাপের তোড়া।

সেই অর্থে শনিবার থেকেই ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে প্রচার শুরু করলেন দীপক অধিকারী, ব্র্যাকেটে ‘দেব’। ঘটনাচক্রে এ দিনই তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী, কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া এবং সিপিআইয়ের সন্তোষ রাণা কর্মিসভা করেছেন যথাক্রমে ঘাটাল শহর ও ঘাটাল মহকুমার দাসপুরের নিমতলা এলাকায়। ‘একেবারে পাড়াগাঁয়ের ছেলে শঙ্কর’-এর অভিযানের প্রস্তুতি অবশ্য সারা হয়ে গিয়েছিল শুক্রবারেই। যে হুডখোলা গাড়িতে তিনি চড়লেন, সেটিকে সাজানো হয়েছিল গাঁদাফুলের মালা আর প্লাস্টিকের রঙিন ফুল দিয়ে। আর গাড়ির সামনে সবুজ কালিতে জ্বলজ্বলে লেখা ‘দেব’।

দেব-দর্শনে উদ্বেল জনতা। —নিজস্ব চিত্র।

শনিবার সকাল থেকে রোদ যত বাড়ছিল, ঘাটাল শহরের কুশপাতা এলাকায় ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে ভিড়ও বাড়ছিল পাল্লা দিয়ে। বলা বাহুল্য, সেই ভিড়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি দেবের আম-ভক্তকুলও ছিলেন। বিকেল ৩টে ৪০ নাগাদ পার্টি অফিস থেকে কিছুটা দূরে এসে থামে দুধসাদা গাড়িটা। কালো কলারের সাদা শার্ট আর কালো ট্রাউজার্সে নায়কের আবির্ভাব মাত্রই উল্লাসে ফেটে পড়ে চারপাশ।

এ বার হুডখোলা গাড়ি। কুশপাতা থেকেই শুরু হয় রোড শো। গাড়িতে দেবের সঙ্গী মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। আর ছিলেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়, ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলুই, জেলা নেতা নির্মল ঘোষ। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তৃণমূলের দলীয় বন্দোবস্তের পাশাপাশি অবশ্যম্ভাবী কড়া পুলিশি নিরাপত্তাও ছিল। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ, ১০ গাড়ির কনভয়েও পুলিশের গাড়ি। তবে রাস্তার দু’ধারে জমায়েতের মধ্যে পুলিশ সে ভাবে ছিল না। দেখতে গেলে, বুকে ব্যাজ আঁটা তৃণমূল কর্মীরাই গোটা পথে দায়িত্ব নিয়ে উৎসাহী জনতাকে সামলেছেন।

কুশপাতা থেকে পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ড, কোর্ট, কোন্নগর হয়ে গোটা ঘাটাল শহর। লক্ষ্য ছিল মোটামুটি ৩০ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়া। কিন্তু ভিড়ের চোটে গাড়ি নড়লে তো! রাস্তার দু’পাশে থিকথিকে ভিড়। কখনও সদ্যযুবতী একটি বার দেবের হাতখানি ধরতে চাইছেন, কখনও আবার বছর চল্লিশের আটপৌরে ঘরের বধূ তাঁকে দেখে হাত নাড়ছেন। অনেকে ট্রেকারের ছাদে চড়ে বসেছিলেন, বাসযাত্রীরাও জানলা থেকে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন হাত। হুড়োহুড়ির মধ্যে দেবের বেশি কাছে ঘেঁষতে গিয়ে কেউ গাড়ির চাকার নীচে পড়তে পড়তে বেঁচে গেলেন, কারও জুতোর ফিতে ছিঁড়ল। তবু দিনের শেষে অপ্রীতিকর একটি ঘটনাও ঘটেছে বলে খবর নেই। তৃণমূলের ঘোষক কর্মী মাইকে বলছিলেন, “এই ভিড়ই বলে দিচ্ছে, দেবের জেতা সময়ের অপেক্ষা। সার্টিফিকেটটা নেওয়াই শুধু বাকি।”

ভ্যাপসা গরমে দেবকে অবশ্য কিছুটা ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। ক্রমাগত হাত মেলাতে মেলাতে একটা সময়ে হাত ঝাড়তে দেখা যায় তাঁকে। মুখের কাছে হাত নিয়ে আঙুলে ফুঁ-ও দেন। ব্যথা পেলে লোকে যেমনটা করে আর কি! কিন্তু এই ‘অত্যাচার’ তো ভালবাসার। তাই নায়কের মুখে আগাগোড়া লেগে ছিল ঝকঝকে ‘ট্রেডমার্ক’ হাসি। রাতেও আনন্দবাজারকে তিনি বললেন, “এই গরমে মানুষ যে এত বিপুল সাড়া দেবে, ভাবতে পারিনি। যে ভাবে ভালবাসা পেয়েছি, আমি সত্যিই অভিভূত। আশা করি এই ভালবাসা ভবিষ্যতেও পাব।”

দেবকে কাছ থেকে দেখবে বলে ঘাটাল শহরের তিন ছাত্রী আবার সংবাদমাধ্যমের গাড়িতে চেপে বসেছিল। ‘রিপোর্টার কাকু’দের কাছে তাদের আর্জি ছিল, “একটি বার দেবের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিন না।” ভিড় ঠেলে কথা বলা অবশ্য হয়নি। তবে দেব এক বার তাকিয়েছিলেন। তিন কিশোরীর আশ মিটেছে তাতেই।

তবে আশ মেটেওনি অনেকের। খড়ার পুর, বীরসিংহ, রাধানগরের মতো আরও কিছু এলাকাও তাঁর পথ চেয়ে ছিল। কিন্তু মন্থর রোড শো সেখানে পৌঁছনোর বহু আগেই সন্ধে নেমে যায়। ঠিক হল, পরে ওই সব এলাকায় ঘুরে যাবেন দেব।

হুডখোলা গাড়ি যখন ৩ নম্বর চাতালের অদূরে, দেব নেমে পড়লেন। অন্য গাড়িটা অপেক্ষা করছিল সেখানেই। খোকাবাবু উঠে পড়লেন। ঘড়িতে তখন সন্ধে ৬টা ৪০। রাস্তার দু’ধারে তখনও উপচে পড়া ভিড়।

ghatal dev
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy