সেচ দফতরের বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মীরা কর্মস্থলে না গিয়ে কাজ করছেন বিডিও অফিসে বসে এমনই অভিযোগ তুলে বিধানসভায় সরব হয়েছিলেন বিধায়ক কে পি সিংহ দেও। সেই ঘটনার পর কৃষি-সেচ দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদে। সেখানেও দফতরের কর্মীদের নির্দিষ্ট স্থানে কাজে পাঠানোর জন্য বিডিওদের জানানো হয়। অথচ অভিযোগ উঠছে, সেই নির্দেশ মেনে বিডিওরা কোনও পদক্ষেপ করছে না। অবিলম্বে সমস্যা মেটানোর দাবি তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারশন। সংগঠনের পশ্চিম মেদিনীপুরের পুর জেলা সভাপতি অরুণ প্রতিহার বলেন, “কয়েকদিন দেখব। প্রশাসনিক কর্তাদের জানাব। তারপরেও কাজ না হলে আন্দোলনে নামতে হবে।” এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহের আশ্বাস, “বিষয়টি নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছিল। দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।”
সেচের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের পাশাপাশি রয়েছে রিভার লিফট ইরিগেশন (আরএলআই), মিনি ডিপ-টিউবওয়েল। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে এই দু’টি প্রকল্পের কর্মীদের ব্লক অফিসেই কাজ করানো হয় বলে অভিযোগ। ফলে নিয়ম মেনে পাম্প চালানো হয় না। ক্ষতিগ্রস্ত হয় এলাকার সেচ ব্যবস্থা। তবে এমন নিদর্শন শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরেই নয়। অভিযোগ, পুরুলিয়াতেও এমন ৯ জন কর্মীকে ব্লক অফিসে কাজ করানো হয়। প্রথম বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় প্রশ্ন তোলেন বিধায়ক কে পি সিংহ দেও। তিনি বলেছিলেন, “... যে উদ্দেশ্যে তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছিল যে, গ্রামের মানুষ, কৃষিজীবী মানুষ, ইরিগেশন পাবে, জল পাবে, সেটা সম্পূর্ণ ব্যহত হচ্ছে..।” তাঁর দাবি ছিল, শুধু নিজস্ব এলাকার নয়, সারা রাজ্যেই সেচ দফতরের এই ধরনের কর্মীদের ব্লক অফিসে বসিয়ে না রেখে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকায় যেন কাজ করানো হয়। সেই সময়ই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও সভাধিপতি, কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সেচ দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে ব্লক থেকে কর্মীদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তা কাযর্করী করা যায়নি।
কিন্তু কেন এই অবস্থা?
অভিযোগ, গ্রামীণ এলাকায় গিয়ে কাজ করতে চান না অনেকেই। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কয়েকজন সুবিধাভোগী কর্মী ব্লক অফিসে বসেই কাজ করতে শুরু করেছিলেন। তাহলে সেচ দফতরের ওই সমস্ত প্রকল্পগুলি চালাচ্ছিল কে? কীভাবেই বা জল পাচ্ছিলেন এলাকার কৃষকেরা?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় কাজ করার সূত্রে অনেক সময়ই কর্মীদের সঙ্গে সখ্য হত স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেই সূত্রে তাঁদের হাতেই চাবি রাখতেন কর্মীরা। ওই বাসিন্দারাই সুবিধামতো কাজ করতেন। অনেক ক্ষেত্রে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেচ দেওয়ার জন্য অনেক কর্মী, গ্রামের বাসিন্দাদের থেকে টাকা নিতেন বলেও অভিযোগ। মেদিনীপুর শহরের এক বাসিন্দা কাজ করেন মেদিনীপুর সদর ব্লকের জাগুল আরএলআই প্রকল্পে। কিন্তু তিনিও কাজ করেন বিডিও অফিসে বসেই। এর ফলে কেন সেচ থেকে বঞ্চিত হবেন গ্রামের মানুষ, তা কী করে হয়? ওই ব্যক্তির সাফাই, “আমার পায়ে চোট লাগায় এখন ছুটিতে রয়েছি। এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।”
এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ফেডারেশনও। ফেডারেশনের রাজ্য নেতা অনুপ মান্না বলেন, “বাইরের লোক হলে তিনি নিয়ম মেনে কাজ করবেন না, টাকা নেওয়ারও অভিযোগ উঠবেই। তাঁকে কিছু বলারও থাকবে না। কিন্তু সরকারি কর্মী হলে তাঁকে নিয়মে চলতে হবে। মানুষ সেচ থেকে বঞ্চিত হবেন না।” এ বার শাসক দলের কমর্চারী সংগঠনই এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে। অবিলম্বে সকলকে প্রকল্প এলাকায় না পাঠালে আন্দোলনে নামারও হুমকি দিয়েছে ফেডারেশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy