কেউ অনুমতি ছাড়াই মিছিল করছেন। আবার কেউ আইন অমান্য করে মাইক ব্যবহার করছেন। কোনও রাজনৈতিক দল সরকারি দেওয়াল বা সরকারি স্থানকে ব্যবহার করছেন প্রচারের জন্য। কেউ আবার প্রচারে উস্কানিমূলক কথা বলছেন।
প্রতিদিনই নানা রকমের নির্বাচনী বিধিভঙ্গের ঘটনা ঘটে। কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ হয়। আবার, কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ হয় না। কিন্তু, সরকারি কর্মীদের রেহাই নেই। কোথায় কী বিধিভঙ্গ হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে সব কিছুর রেকর্ড রাখা প্রয়োজন। আর সে জন্য চাই ক্যামেরা।
কিন্তু এত ক্যামেরা আসবে কোত্থেকে? এ বার থেকে তাই ক্যামেরা ভাড়া নেওয়ার সঙ্গে প্রয়োজনে নিজেদের মোবাইল ক্যামেরাতেও তা রেকর্ড করার কথা জানাল জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম দত্ত বলেন, “সব ব্লকেই কয়েক’টি করে ক্যামেরা রয়েছে। তার বাইরে প্রয়োজন হলে আরও ক্যামেরা ভাড়া করা হবে। কোথাও ভাড়া না পাওয়া গেলে মোবাইল ক্যামেরাতেও রেকর্ড করে নথি সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।”
সেই সঙ্গে নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত যাবতীয় নথি কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে তৎপর হয়েছে জেলা প্রশাসন। এ জন্য এক বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কথাও হয়ে গিয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, মনোনয়ন জমা নেওয়ার সময় থেকেই এই পদ্ধতি চালু হয়ে যাবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারির কথায়, “নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য মুহূর্তের মধ্যে সরাসরি পেতেই এই ব্যবস্থা হচ্ছে। আমরা চাইছি, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক।”
নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন ঘিরে রোজই রাজ্যে নানা ঘটনা ঘটেছে। এমসিসি (মডেল কোড অব কন্ডাক্ট) দলের সদস্যদের হেনস্থার ঘটনাও ঘটেছে। এই ধরনের অপ্রিয় ঘটনা এড়াতে ও গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে এমসিসি দলের সদস্যদের গাড়ির মাথার উপরেও ক্যামেরা লাগানোর পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন। এর ফলে, বিধি ভঙ্গ সংক্রান্ত যাবতীয় নথি সংগ্রহ সহজ হবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচ কমিশনও এই পদ্ধতি প্রয়োগের কথা জানিয়েছে। যাতে জেলার ২৯টি ব্লকেই এই ব্যবস্থা চালু করা যায়, সেই চেষ্টাই চালাচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বিধি ভঙ্গের ঘটনা ঘটেছে ১৫৬টি। তার মধ্যে অবশ্য ১০৩টি অভিযোগের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে ব্যবস্থাও গ্রহন করেছে প্রশাসন। বাকি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিডিওকে দিয়ে তদন্তও করানো হচ্ছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ছবি। অভিযোগ, দলীয় প্রচারের জন্যই ওই ছবি ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার তেমনি রয়েছে অনুমতি না নিয়ে মিছিল করা, অনুমতি না নিয়ে দেওয়ালের ব্যবহার ইত্যাদি। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সব ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁরা পদক্ষেপ না করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রচারে কে কী বলছেন, কী ভাবে প্রচার হচ্ছে, তার ভিডিও প্রয়োজন। কারণ, অনেক সময়ই বিরোধীরা নানা ধরনের অভিযোগ করে থাকে। ছবি না থাকলে সে অভিযোগের সত্যাসত্য বিচার করা কঠিন। সেক্ষেত্রে এমনও হতে পারে একই দিনে একই ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় ও বিভিন্ন সময়ে, কোনও ক্ষেত্রে আবার একই সময়ে একাধিক জায়গায় সভা হতে পারে। তাই ব্লক পিছু ন্যূনতম ১০-১২টি ক্যামেরা প্রয়োজন। কিন্তু সব ব্লকে প্রয়োজনীয় ক্যামেরা নেই। আবার প্রত্যন্ত এলাকার ব্লকগুলিতে বেশি পরিমাণে ক্যামেরা ভাড়া পাওয়াও বেশ কঠিন।
এই সুযোগে আবার কেউ কেউ দ্বিগুণ বা তিনগুণ ভাড়া চাইছেন। এই সমস্যা মেটাতে অবশ্য বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে প্রশাসনিক কর্তারা বৈঠক করেন। যে সব ব্লকে সরকারি ক্যামেরা নেই, তারা ভাড়া নিতে পারবে বলে জানানো হয়। কত টাকায় ভাড়া নিতে হবে তার ভাড়াও নির্দিষ্ট করা হয়। সেক্ষেত্রেও কোনও এলাকায় ভাড়া পেতে সমস্যা হলে আপাতত, মোবাইল ক্যামেরা দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে বলা হয়েছে। পরবর্তীকালে শহরাঞ্চল থেকে ক্যামেরা ভাড়া করে সেখানে পাঠানোর জন্যও পদক্ষেপ করা হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy