Advertisement
E-Paper

কার্গো হাব নির্মাণে একাংশ জমিদাতার বাধা

আন্তর্জাতিক মানের কার্গো হাব তৈরির কাজে বাধা পড়ল হলদিয়ায়। হলদিয়া পুরসভার অধীন চকদ্বীপা মৌজার প্রকল্প এলাকায় সম্প্রতি পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু জমিদাতাদের একাংশ যথাযথ দর পাননি সরব হয়েছেন। মঙ্গলবার তাঁরাই প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ দেখান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০২:০৭
কার্গো হাবের পাঁচিল তৈরির সময়ে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

কার্গো হাবের পাঁচিল তৈরির সময়ে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

আন্তর্জাতিক মানের কার্গো হাব তৈরির কাজে বাধা পড়ল হলদিয়ায়। হলদিয়া পুরসভার অধীন চকদ্বীপা মৌজার প্রকল্প এলাকায় সম্প্রতি পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু জমিদাতাদের একাংশ যথাযথ দর পাননি সরব হয়েছেন। মঙ্গলবার তাঁরাই প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ দেখান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ এবং স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার শঙ্করপ্রসাদ নায়েক। পরে অবশ্য পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকার পর পাঁচিল দেওয়ার কাজও শুরু হয়।

বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, বাজারদর অনুযায়ী জমির দর দাবি করে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন তাঁরা। তার প্রেক্ষিতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ফলে, এখন কোনওরকম নির্মাণকাজ করা বেআইনি। তাই তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের তরফে স্থানীয় বাসিন্দা শক্তিপ্রসাদ হাজরা, অমল মাইতি, সঞ্জয় গুমট্যারা বলেন, “জমি হস্তান্তর, রূপান্তর, বা তাতে নির্মাণকাজ না করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তা কার্যকর করতে হবে।” চাষিকে চাষ করতে দেওয়া, এলাকার জল নিকাশির ব্যবস্থা করা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি এই কার্গো হাবের শিলান্যাস হয়। ১৯৭.৮৪ একর জমিতে প্রকল্পটি গড়ে ওঠার কথা। গত ১৯ মে থেকে প্রকল্প এলাকায় পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু। স্থানীয় সূত্রের খবর, গত শনিবার থেকেই জমিদাতাদের একাংশ কাজে বাধা দিচ্ছিলেন। এ দিন বিক্ষোভের মাত্রা বাড়ে। এই প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছে দু’টি সংস্থা এমএমটিসি এবং আইএল অ্যান্ড এফএস। তাদের তরফে প্রাথমিক নির্মাণকাজ দেখভাল করছে ‘হিডাল’ নামে আর একটি সংস্থা। এ দিন বিক্ষোভ ও কাজে বাধার পর হিডাল-এর সিইও জিতেন্দ্রনাথ পাণ্ডে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর বক্তব্য, “হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ আমাদের জমি দিয়েছে। তাই জমি নিয়ে কোনও সমস্যা থাকলে তারাই সমাধান করবে।” আইএল অ্যান্ড এফএস-এর কলকাতা আঞ্চলিক শাখার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুদীপ দত্তের বক্তব্য, “এত বড় প্রকল্পে ছোটখাটো সমস্যা হতেই পারে। তবে বিতর্কিত অংশের জমি বাদ দিয়েই আমরা লিজ নিয়েছি। তারপরেও কোনও সমস্যা হলে প্রশাসন দেখবে।”

এ প্রসঙ্গে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, “যখন কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তখন আদালতের স্থগিতাদেশ ছিল না। স্থগিতাদেশ পর্ষদে দিলে আইন মেনেই পদক্ষেপ করা হবে।” বিক্ষোভকারীরা অবশ্য জানিয়েছেন, গত ১৯ মে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের প্রতিলিপি তাঁরা পর্ষদে জমা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে পর্ষদের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক পূর্ণেন্দুশেখর নস্কর বলেন, “বিষয়টি তদন্ত করে চাষিদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করা হবে।”

পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে চকদ্বীপা মৌজায় ৩৩৮.৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করে এইচডিএ-র হাতে তুলে দেয় জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ১৯৭ একর জমি এমএমটিসি ও আইএল অ্যান্ড এফএস-কে কার্গো হাব গড়ার জন্য দেয় এইচডিএ। বাম আমলে অধিগৃহীত জমির ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে অধিগ্রহণ বাতিলের জন্য হাইকোর্টে জানান একাংশ গ্রামবাসী। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা করেন চাষিরা। গত ২১ এপ্রিল আদালত একটি রায়ে জানায়, মামলার প্রতিপক্ষরা জমি হস্তান্তর করতে পারবে না। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ একর জমির ক্ষেত্রে এই স্থগিতাদেশ প্রযোজ্য। অভিযোগ, সেই জমির একাংশেই পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে অধিগ্রহণের নোটিস জারির পর থেকেই ‘জমিহারা ও উদ্বাস্তু ক্ষতিগ্রস্ত কমিটি’র নাম নিয়ে ২০০৬ সাল থেকে আন্দোলনে নামেন তৃণমূল নেতৃত্ব। জমির দামের পুনর্মূল্যায়ন, পুনর্বাসনের প্যাকেজ ঘোষণা, পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত জমিতে পাঁচিল না দেওয়া, জমিহারাদের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করা-সহ নানা দাবি ওঠে সেই সময়। একসময়ে এই জমি-আন্দোলনের আহ্বায়ক স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার শঙ্করপ্রসাদবাবু এ দিন বলেন, “চাষিদের দাবি সব সময় থাকবে। কিন্তু উন্নয়নও করতে হবে। আসলে সিপিএমের মদতে এ সব হচ্ছে।” সিপিএম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

cargo hub haldia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy