Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কৃষকনেতা নিরঞ্জনেই ভরসা আলিমুদ্দিনের

শেষমেষ বাজি জিতলেন নিরঞ্জন সিহি। পূর্ব মেদিনীপুর গঠনের পর তৃতীয় জেলা সম্পাদক করা হল কৃষক সভার এই নেতাকে। সিপিএম সূত্রে খবর, সম্মেলনের শেষ দিন, মঙ্গলবার ভোটাভুটি ছাড়াই সর্বসম্মত ভাবে প্রাক্তন এই সভাধিপতি এ বার সম্পাদক মনোনীত হন।

নতুন জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি (বাঁ দিকে), মাঝে বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান। রয়েছেন তাপস সিংহও। —নিজস্ব চিত্র।

নতুন জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি (বাঁ দিকে), মাঝে বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান। রয়েছেন তাপস সিংহও। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:১২
Share: Save:

শেষমেষ বাজি জিতলেন নিরঞ্জন সিহি। পূর্ব মেদিনীপুর গঠনের পর তৃতীয় জেলা সম্পাদক করা হল কৃষক সভার এই নেতাকে। সিপিএম সূত্রে খবর, সম্মেলনের শেষ দিন, মঙ্গলবার ভোটাভুটি ছাড়াই সর্বসম্মত ভাবে প্রাক্তন এই সভাধিপতি এ বার সম্পাদক মনোনীত হন।

পূর্বের জেলা সম্পাদক নির্বাচনের পথটি সিপিএমের রাজ্যনেতাদের কাছে একেবারেই সহজ ছিল না। সম্মেলনের আগে জেলা সিপিএমের নানা শিবির সম্পাদক নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মত করে ঘুঁটি সাজানো শুরু হয়েছিল। সিপিএমের একটি সূত্রের দাবি, দলের বর্তমান অবস্থায় সেই কোন্দলের খবর জেনে অত্যন্ত বিরক্ত হন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এমনকী তিনি জেলা-সফর স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নেন।

সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের একটি প্রভাবশালী অংশের মত ছিল, লোকসভা ভোটে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র বিরুদ্ধে লড়াই করে পূর্ব মেদিনীপুর বিজেপি-র উত্থান ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছে। লোকসভার নিরিখে রাজ্যে যখন সিপিএমের গড় ভোট ছিল ২৯ শতাংশ, তখন পূর্বে বামেরা ৩৫ শতাংশ ভোট পায়। লক্ষ্মণ-বিদায়ের পরে যে পরিসংখ্যান উড়িয়ে দেওয়ার নয়! সেই ভিতের উপরে দাঁড়িয়েই নতুন করে দলকে গড়ে তোলার চেষ্টা হোক। সংগঠনকে চাঙ্গা করতে অন্য বেশ কিছু জেলার মতো পূর্ব মেদিনীপুরেও নেতৃত্ব বদল হোক, এই ছিল আলিমুদ্দিনের ইচ্ছা।

কিন্তু, জেলা সিপিএমের নানা সমীকরণ তাতে বাদ সাধে। কৃষক সভার নেতা নিরঞ্জনবাবুকে সম্পাদক করা হলে সিটু নেতা নির্মল জানা ও তাঁর অনুগামীদের বিদ্রোহের ইঙ্গিত এসে পৌঁছেছিল আলিমুদ্দিনে! তা ছাড়া দুর্দিনে দল সামলেছিলেন বর্ষীয়ান নেতা প্রশান্ত প্রধান। তিন বছরের নতুন নিয়মের গেরোতেও তিনি পড়ছিলেন না, কারণ বছর খানেক হল ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক হয়েছিলেন। পূর্ণ সময়ের সম্পাদকের দৌড়ে ছিলেন তিনিও।

এখন কী বলছেন তাঁরা?

নির্মলবাবু বলেন, “সিপিএম গণতান্ত্রিকতায় বিশ্বাস করে। গণতান্ত্রিক ভাবেই সর্ব সম্মতিক্রমে নিরঞ্জনবাবু সম্পাদক হয়েছেন। কোন্দলের প্রশ্নই নেই।” প্রশান্তবাবু বলেন, “এত দিন দায়িত্ব যথাযথ পালন করেছি। আগামী দিনেও পার্টি যাতে ঘুড়ে দাঁড়াতে পারে, ঐক্যবদ্ধ, সংগঠিত হয়ে কাজ করতে পারে, সে দিকে নজর রাখতে হবে।”

সম্ভাব্য সম্পাদক হিসাবে জেলায় ঘুরছিল তাপস সিংহের নামও। সে প্রসঙ্গে এ দিন সিপিএম যুব-র এই নেতার প্রতিক্রিয়া, “কিছু আবেগ ছিল। যুব সংগঠনের সর্বভারতীয় স্তরে দীর্ঘ দিন দায়িত্বে থাকায় যুবদের মধ্যে কিছুটা প্রত্যাশাও ছিল। কিন্তু দল যাকে যে দায়িত্ব দেবে, তা পালন

করতে হবে।”

কোন জাদুতে সব সমীকরণ এক স্রোতে বইল? সিপিএমের একটি অংশ বলছে, আলিমুদ্দিনের বিশেষ নজরেই তা সম্ভব হয়েছে। কেমন? সম্মেলনে উপস্থিত রাজ্য নেতারা সকলের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলে ভিন্ন মত অনেকটাই প্রশমিত করতে পেরেছিলেন বলে ওই সূত্রটির দাবি। যেমন এ দিন সকালে প্রশান্তবাবুর সঙ্গে কথা বলেছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু, রবীন দেবেরা।

১৯৫৭ সালের ৯ মে, ২৫ বৈশাখ পাঁশকুড়ার তিলাগেড়িয়া গ্রামের কৃষক পরিবারে নিরঞ্জনবাবুর জন্ম। পাঁশকুড়া কলেজে বিএ প্রথম বর্ষে পড়াকালীন আর্থিক অনটনের জেরে পড়াশোনায় ছেদ পড়ে। বর্তমানে পাঁশকুড়ার রাতুলিয়াতে বসবাস করেন। অকৃতদার নিরঞ্জনবাবুর গ্রামের বাড়িতে মা, একমাত্র দাদা ও পরিবারের অন্যেরা রয়েছেন। কৃষক আন্দোলনের সূত্রে তাঁর সিপিএমে আসা। ১৯৭৭ সালে পার্টি সদস্য হন। ১৯৮৮ সালে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্য হন। ১৯৯২ সালে পাঁশকুড়া উত্তর লোকাল কমিটির সম্পাদক হন। ১৯৯৩ সালে পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, ২০০২ সালে জেলা ভাগের পর থেকে ২০০৮ পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি ছিলেন। তারপর থেকে জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা। ২০০৩ সালে জেলা কমিটির সদস্য হন। পাঁচ বছর পরে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে জেলা সম্মেলনে তাঁকে কৃষক সভার জেলা সম্পাদক করা হয়। জেলা সম্পাদক মনোনীত হওয়ায় এ বার তাঁকে জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা ও কৃষক সভার সম্পাদকের পদ ছাড়তে হতে পারে বলে সিপিএম সূত্রে খবর।

কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার থাকবে? নতুন জেলা সম্পাদক বলছেন, “যৌথ কাজের ধারাকে আরও উন্নত করতে হবে। আন্দোলন সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিরোধীদের কাছ থেকে মানুষকে এগিয়ে আনাই মূল লক্ষ্য।”

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু জানান, তিন দিনের সম্মেলনে রিপোর্টের ভিত্তিতে ৫১ জন আলোচনা করেছেন। সামগ্রিক ভাবে বড় জেলার ক্ষেত্রে ৭০ জনের কমিটি করার কথা বলা হয়েছিল। পূর্ব মেদিনীপুরে ৭০ জনের কমিটি হয়েছে। তাতে ৪ জন মহিলা সদস্য, ৭ জন মুসলিম ব্যক্তি রয়েছেন। কানু সাহুকে বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে।

৭০ জনের জেলা কমিটিতে ৩৫টি নতুন মুখ এসেছে। ৪৬ জনের পুরানো কমিটি থেকে ১১ জন বাদ গিয়েছেন। বুধবার সকালে সুতাহাটা লোকাল কমিটির অফিসে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যেরা রাজ্য নেতাদের উপস্থিতিতে বৈঠকে বসেন। ছিলেন বিমান- সূর্যকান্ত-রবীন দেব প্রমুখ। প্রথমে জেলা কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেই ভাবী সম্পাদক হিসাবে নিরঞ্জনবাবুর নাম এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়।

পরে সম্মেলনের মঞ্চেই নতুন জেলা কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে প্রশান্ত প্রধান জেলা সম্পাদক হিসাবে নিরঞ্জন সিহির নাম প্রস্তাব করেন। নির্মল জানা তা সমর্থন করেন। জেলা কমিটির কাছে বিকল্প নাম চাইলেও অন্য কোনও নাম উঠে আসেনি বলে সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে। পরে দুপুরে সম্মেলন কক্ষে বিমান বসু আনুষ্ঠানিক ভাবে নিরঞ্জন সিহিকে সম্পাদক হিসাবে ঘোষণা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

haldia niranjan sihi cpm district secretary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE