বেহাল খাকুড়দা-মোহনপুর রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র।
নির্বাচনের গেরোয় থমকে রাস্তা সংস্কারের কাজ। লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ায় খড়্গপুর মহকুমার বিভিন্ন বেহাল রাস্তা সারাইয়ের কাজ আটকে রয়েছে। কোথাও রাস্তা সারাইয়ের টাকা অনুমোদন হয়নি, আবার কোথাও রাস্তার কাজের টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে টেন্ডার ডেকেও বিভিন্ন জটিলতায় কাজ শুরু করা যায়নি। ভোটপর্ব মিটতে মে মাস হয়ে যাবে। তার পরেই বর্ষা এসে যাবে। তখন রাস্তার কাজ করতে সমস্যা হবে। ফলে রাস্তাগুলি কবে সংস্কার হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে বোর্ড গঠনের পরই খড়্গপুর মহকুমার পিংলা, খড়্গপুর ২, দাঁতন ব্লকের বেশ কিছু বেহাল রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগী হয় জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের দাবি, লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদিত রাস্তা সংস্কারের কাজ আটকে রয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ঠিকাদার নিয়োগের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় কাজ এগোয়নি। নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় এখন নতুন করে কোনও প্রকল্পের কাজও শুরু করা যাচ্ছে না।
জেলা পরিষদের অর্থ ব্যয়ে তেরো বছর আগে খাকুড়দা থেকে মোহনপুর পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার সড়কটি তৈরি হয়। তারপর থেকে ওই সড়কটির কোনও সংস্কার হয়নি। ফলে খন্দপথে দিনে দিনে বাড়ছে দুর্ঘটনার পরিমাণও। গত অক্টোবর মাসে গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের (আরআইডিএফ) মাধ্যমে ওই সড়কটি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। টেন্ডারের জন্য জমা পড়া দরপত্র খোলার কথা ছিল ১১ মার্চ। নির্বাচনী গেরোয় দরপত্র খোলা যায়নি। থমকে রাস্তা সারাইয়ের কাজও।
বছর চারেক আগে খড়্গপুর ২ ব্লকের মাদপুর থেকে দক্ষিণগেরিয়া প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কের কাজের অনুমোদন হয়েছিল। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তার কিছু অংশে কাজ হয়। বর্তমানে বেহাল ওই রাস্তার বাকি অংশের জন্য বরাদ্দ অর্থে ফের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে রাস্তা সারাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরনো ঠিকাদার মারা যাওয়ায় ফের নতুন করে টেন্ডার ঢেকে ঠিকাদার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পরিষদ। সেই মতো গত সপ্তাহে রাজ্য সরকারের অনুমতিও পাওয়া যায়। তবে নির্বাচন ঘোষণা হওয়ায় আটকে গিয়েছে টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়াও। ফলে ওই সড়কের উপর নির্ভরশীল সাঁকুয়া, চাঙ্গুয়াল, পলশা, চকমকরামপুর এলাকার মানুষ সমস্যায় পড়েছেন।
এ ছাড়াও দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে জীর্ণদশা শ্যামচক-মাদপুর ভায়া বারবাসী ও মুকসুদপুর-বসন্তপুর রাস্তারও। থমকে রয়েছে দাঁতনের পহরাজপুর সেতু নির্মাণের কাজও। নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হতে মে মাস হয়ে যাবে। তারপরে জেলা পরিষদ রাস্তা সংস্কারের জন্য ফের উদ্যোগী হলেও গোটা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে জুলাই মাসের আগে কাজ শুরু করা মুশকিল। ততদিনে বর্ষাও চলে আসবে। ফলে বর্ষায় ওই রাস্তাগুলি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি বলেন, “নির্বাচনের কারণে রাস্তার কাজ এগোনো যাচ্ছে না। পিংলা, দাঁতন এলাকার বেশ কিছু রাস্তার অবস্থা সত্যিই খারাপ। জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে জরুরি ভিত্তিতে ওই রাস্তাগুলিতে আপাতত যাতে মোরাম দেওয়া যায়, সেই বিষয়ে চেষ্টা করছি।” জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের অন্তরা ভট্টাচার্যের দাবি, এই রাস্তাগুলির অধিকাংশই প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার অর্থে তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকারই রাস্তাগুলি দেখভাল করে। সে ক্ষেত্রে গত আড়াই বছরে তৃণমূল সরকারের আমলে রাস্তাগুলি সংস্কার করা যেত। ওঁরা বিগত জেলা পরিষদের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছে। তোলাবাজি ও চাঁদা আদায়ের ভয়ে কোনও ঠিকাদারই কাজ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy